বৃহস্পতিবার

২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাগমারার সেই আ.লীগ নেতাকে দাঁড় করিয়ে রাখলেন হাইকোর্ট

Paris
Update : সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

এফএনএস
রাজশাহীর বাগমারার বাইগাছা এলাকায় বিষ প্রয়োগ করে ৫০টি তালগাছ মেরে ফেলার দায়ে আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলমকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আদালতে দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সত্যতার বিষয়ে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তলবে উপস্থিত হওয়ার পর গতকাল রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অভিযুক্ত শাহরিয়ার আলম রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি। এরে আগে গত ৩১ জানুয়ারি এ বিষয়ে বাংলা ভাষায় আদেশ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। যা চলতি বছর ভাষার মাসের প্রথম দিনে প্রথম বাংলায় দেওয়া আদেশ। ওইদিন শাহরিয়ার আলমকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। উপজেলার বাইগাছা এলাকায় ৫০টি তালগাছে কীটনাশক প্রয়োগের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে তাকে তলব করা হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হয়। ভাষার মাসের প্রথম দিনে বাংলায় দেওয়া আদেশে আদালত বলেন, খবরে উল্লিখিত ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সবুজ বনায়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর বৃক্ষরোপণের অঙ্গীকারকে বিবেচনায় নিয়ে স্বপ্রণোদিত রুল দিচ্ছি। আদেশে আদালত আরও বলেন, বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তা যৌথভাবে সরেজমিন তদন্ত করবেন। তারা উল্লিখিত তাল গাছের ছবিসহ প্রতিবেদন আগামী সাতদিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করবেন। প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে। এই আদেশের কপি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবর পাঠাতে বলেছেন আদালত। আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে টেলিফোন ও ফ্যাক্সের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৫০টি তালগাছ মেরে ফেলতে কীটনাশক প্রয়োগের জন্য কেন শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে এ বিষয়ে বিবাদীদের কারণ দর্শানোর জন্য বলেছেন আদালত। ‘৫০ তালগাছে কীটনাশক’ শিরোনামে গত ৩১ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে সম্পাদকীয় ছাপা হয়। বিষয়টি নজরে আনার পর আমলে নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন। বাংলা ভাষায় আদেশটি দেন বেঞ্চের নেতৃত্বদানকারী বিচারপতি, যা চলতি বছর ভাষার মাসের প্রথম দিনে প্রথম বাংলায় দেওয়া আদেশ। গত ৩১ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৫০ তালগাছে কীটনাশক: দোষীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ কেন নয়’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়। এতে বলা হয়, ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়মিত মৃত্যুর ঘটনা সত্যিই আমাদের মনোযোগের বাইরে থাকে। যেমন পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু, বজ্রপাতে মৃত্যু। প্রতি বছর এসব কারণে এত বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। এ নিয়ে সরকার বা নীতিনির্ধারকদেরও বলিষ্ঠ কিছু করতে দেখা যায় না। নানা সময় প্রকল্প নেওয়া হলেও সেগুলোর কোনো সুফল মেলেনি, পুরোপুরি ব্যর্থই বলা যায়। বজ্রপাত নিরোধে সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করেছেন, কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনাকাটা ও বসানোও হয়েছে। লাখ লাখ তালবীজ সংগ্রহ ও রোপণের কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু দিন শেষে জনগণের অর্থ অপচয় কিছুই হয়নি। সেখানে সাধারণ মানুষেরাই স্বেচ্ছায় বছরের পর বছর ধরে তালবীজ রোপণ করে বরং বড় ভূমিকা রাখছেন। এখন সেসব তালগাছের ওপরও আসছে আঘাত। সম্প্রতি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাইগাছা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।’ এক প্রতিবেদনে জাতীয় দৈনিকটি জানায়, প্রায় এক দশক আগে স্থানীয় এক বৃদ্ধসহ কয়েকজন ব্যক্তি সড়কের উভয় পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তালবীজ রোপণ করেন। সেসব তালগাছ বড় হয়ে এখন ছায়া দিচ্ছে। একটি তালবীজ গাছ হয়ে উঠতেই সময় লাগে এক দশক বা যুগের বেশি। ফলে বোঝা যায়, কী নিষ্ঠা ও ধৈর্য নিয়ে পরিচর্যা করে তালগাছগুলো বড় করে তুলেছেন বাইগাছার সেসব উদ্যোগী মানুষ। আর আমরা অবাক হলাম, সেই গাছগুলো মারতে বাকল তুলে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন শাহরিয়ার আলম নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। প্রকৃতি ও গাছের প্রতি কী রকম নির্দয় হলে এমন কাজ করা যায়, সেটিই প্রকাশ পায় এ ঘটনায়। এতে আরও বলা হয়, শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শাহরিয়ার আলম তালগাছ মেরে ফেলার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য প্রতিবেদককে অনুরোধও করেন। তালগাছের ছায়ার কারণে শাহরিয়ারের লাগানো আমগাছ ঠিকমতো বেড়ে উঠছিল না। ফলে এমন কাণ্ড করেছেন তিনি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris