শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুঠিয়া-দুর্গাপুরবাসী হতাশ

Paris
Update : মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

মোবারক হোসেন শিশির, দুর্গাপুর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে এক হাজার ৩১৭ কোটি টাকার ২৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। একইসঙ্গে তিনি ৩৭৬ কোটি টাকার আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিম্তু এই উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকায় রাজশাহী-৫ আসনের পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলার কোন উন্নয়নমূলক তালিকা স্থান না পাওয়ায় হতাশ পুঠিয়া-দুর্গাপুরবাসী। এ বিষয়ে নেতাকর্মী ও বিভিন্ন পেশাজিবী সাধারণ জনসাধারণের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের ৩২ প্রকল্পের তালিকায় পুঠিয়া বাগমারা মহাসড়ক উন্নয়ন কাজের তালিকা থাকলেও সড়কটি প্রধানত বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর ভবানীগঞ্জ পৌরসভা সহ বাগমারা উপজেলার জনসাধারণের রাজশাহী শহরে যাতায়াতের প্রধান সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পুঠিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে রাস্তাটি নির্মিত হওয়ার কারণে পুঠিয়ার নামটি ব্যবহৃত করা হয়েছে বলে মনে করছেন নানান পেশাজীবী জনসাধারণ।
প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন তালিকা থেকে বঞ্চিত রাজশাহী-৫ পুঠিয়া -দুর্গাপুর আসনটি নিয়ে কি ভাবছেন দলীয় নেতারা, এটা কিসের ইঙ্গিত এ নিয়ে চলছে নেতা কর্মী বিভিন্ন পেশাজীবি জনসাধারণের মধ্যে নানান আলোচনা সমালোচনা।
গত ২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে এক হাজার ৩১৭ কোটি টাকার ২৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। একইসঙ্গে তিনি ৩৭৬ কোটি টাকার আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৩২টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- রাজশাহী তথ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজ, রাজশাহী আঞ্চলিক পিএসসি ভবন নির্মাণ কাজ, শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ তলাবিশিষ্ট অ্যাকাডেমি ভবন নির্মাণ, রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ষষ্ঠ থেকে দশম তলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত নির্মাণ কাজ, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের হেড কোয়ার্টার নির্মাণ, রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ভবন উদ্বোধন, মোহনপুর উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন, রাজশাহী সরকারি শিশু হাসপাতালের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি উদ্বোধন, শেখ রাসেল শিশুপার্ক, মোহনপুর রেলক্রসিং ফ্লাইওভার, নগরীর বন্ধগেট-সিটি বাইপাস পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ চার লেন সড়ক নির্মাণ কাজ, নগরীর কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী সড়ক প্রশস্তকরণ ও সম্প্রসারণ কাজ, ভদ্রা রেলক্রসিং থেকে পারিজাত লেক হয়ে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চার লেন সড়ক উদ্বোধন, হাইটেক পার্ক থেকে ঢালুর মোড় পর্যন্ত কার্পেটিং রাস্তা নির্মাণ, পুঠিয়া-বাগমারা মহাসড়ক উন্নয়ন কাজ, রাজশাহী সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ, চারঘাট টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাল্টিপারপাস ভবন, রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিস, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের ছয় তলাবিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস, রাজশাহী সদর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স উদ্বোধন, বাগমারার ভবানীগঞ্জ-কেশরহাট সড়ক, পদ্মা নদীর ড্রেজিং প্রকল্প, রাজশাহী পিটিআইয়ের বহুমুখী অডিটোরিয়াম নির্মাণ, চারঘাট ও বাঘায় পদ্মা নদীর বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্প।
তালিকার নাম না থাকাই অসন্তোষ বিরাজ করা পুঠিয়া উপজেলার ঝলমলিয়া কানাইপাড়া গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী আক্তার হোসেন বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর পর প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের বার্তা নিয়ে রাজশাহীতে বিভাগীয় সমাবেশে আসছেন এমন সংবাদে আনন্দ উৎসাহ উদ্দীপনায় মেতে ছিলাম আমি সহ পুঠিয়া দুর্গাপুর উপজেলার জনসাধারণ।
প্রধানমন্ত্রী জনসভায় স্বশরীরে উপস্থিত হওয়ার জন্য সংসারের সকল কাজকর্ম আগে থেকেই শেষ করে প্রস্তুতি নিয়ে জনসভায় উপস্থিত হয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাস্তবায়নকৃত ও ভিত্তি প্রস্তরকৃত ৩২ টি প্রকল্পের মধ্যে উন্নয়ন কাজের তালিকায় নাম না থাকায় পুঠিয়া দুর্গাপুর উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সমর্থক সহ সাধারণ জনসাধারণের মধ্যে হতাশা ও চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। উন্নয়ন তালিকায় নাম না থাকা এটা কিসের ইঙ্গিত নিয়েও পুঠিয়া দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন চা স্টল, মোড় ও জনসমাবেশ স্থলে চলছে নানান জল্পনা কল্পনা।
বাস্তবায়নকৃত ও ভিত্তি প্রস্তরকৃত ৩২ টি প্রকল্পের মধ্যে উন্নয়ন কাজের তালিকায় নাম না থাকায় পুঠিয়া দুর্গাপুর উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সমর্থক সহ সাধারণ জনসাধারণের মধ্যে হতাশা ও চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
এবিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের উন্নয়নের তালিকায় পুঠিয়া দুর্গাপুর এর নাম না থাকাই হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। রাজশাহীর সকল উপজেলায় অতীতে অনুমোদন হওয়া উন্নয়ন প্রকল্পের যেসকল কাজ ৭৫শতাংশের ওপরে হয়েগেছে প্রধানমন্ত্রী সেই কাজগুলোরই উদ্বোধন করেছেন। আমাদের উপজেলায় মডেল মসজিদসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে সেই কাজগুলি ধীরগতিতে চলার কারনে বাস্তবায়নের ৭৫ শতাংশের নীচে থাকায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের তালিকায় নাম যায় নাই। হতাশ হওয়ার কিছুই নেই চলমান কাজগুলো শেষ হলে উদ্বোধন হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম হিরা বাচ্চু বলেন, রাজশাহীতে উন্নয়নের বার্তা নিয়ে আসা প্রধানমন্ত্রী তালিকায় দুর্গাপুর পুঠিয়ার উন্নয়নমূখী কোন প্রকল্পের নাম ঘোষণা না করায় আমি নিজেই হতাশ হয়েছি। দুর্গাপুর পুঠিয়া উপজেলার সিনিয়র জুনিয়র নেতৃবৃন্দ সহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীর সমর্থক ও সাধারন জনগণের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। রাজশাহী সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া- দুর্গাপুর) আসনটি উন্নয়নের দিক থেকে সবচেয়ে অবহেলিত তারপরেও প্রধানমন্ত্রী মুখ থেকে কোন উন্নয়ন প্রকল্পের নাম ঘোষণা করা হলো না। এটা কিসের ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন নেত্রী এনিয়ে জেলা উপজেলা সহ তৃনমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে নানান কথাবার্তার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমরা উন্নয়নের উপকার জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা বা বিশ্বাস রাখতেই পারি। উন্নয়নে অবহেলিত আমাদের এই আসনের তৃণমূল থেকে উপজেলা শহর পর্যন্ত সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে সাথে উন্নয়নের তালিকা তৈরি করে সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুপারিশে নিকট তুলে ধরলে তিনি অবশ্যই আমাদের এই আসনেও সারা দেশের ন্যায় উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিবেন। এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ফিরোজ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, উন্নয়নের বার্তা নিয়ে রাজশাহীতে আসছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে আশায় বুক বেঁধে আনন্দ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যোদিয়ে জনসভায় দুর্গাপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ১টি পৌরসভা থেকে নারী পুরুষ মিলে প্রায় ১৩ থেকে ১৫ হাজার নেতাকর্মী সমর্থকবৃন্দ রাজশাহীর ঐতিহাসিক প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে প্রবেশের মূহুর্ত পর্যন্ত আনন্দে উৎফুল্ল ছিলেন দুর্গাপুরের আপামর জনসাধারন। প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী জেলা ও মহানগরে বাস্তবায়নকৃত ও ভিত্তি প্রস্তরকৃত ৩২টি প্রকল্পের উদ্বোধনের পর তালিকা প্রকাশের সময় দুর্গাপুর উপজেলার নেতাকর্মী সমর্থকরা কানপেতে ছিলেন নেত্রী কখন তার মূখে আমাদের উপজেলায় উন্নয়ন কাজের ঘোষনা দিবেন সেই দিকে। নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন তালিকা ঘোষনার দিকে কানপেতে শুধু তালিকায় হলো, দুর্গাপুর উপজেলায় উন্নয়নের তালিকায় না থাকায় জনসমাবেশে আশা নেতৃবৃন্দ কর্মী সমর্থক সহ সকল পেশাজীবি জনসাধারন অসন্তোষের সাথে হতাশা প্রকাশ করে বাকরুদ্ধ হয়ে বাড়ী ফিরেছেন। দুর্গাপুর পুঠিয়ার উন্নয়নের রুপকার সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর নিকট কি উন্নয়নের তালিকা দিয়েছিলেন তিনিই ভালো জানেন। তবে এনিয়ে পুরো উপজেলা সহ সংসদীয় আসনের সর্বত্র নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা ও চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান বলেন, ২৯ জানুয়ারীর রাজশাহীর বিভাগীয় সমাবেশে এসে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনকৃত উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকায় আমার আসনটি না থাকাই হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। রাজশাহীর যে আসনগুলোতে যেধরনের উন্নয়ন দরকার। সেই আসনগুলোতে সেই ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমার নির্বাচনী এলাকা উন্নয়নে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। আমি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সহযোগিতায় রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, শিশু পার্ক, মিনি স্টেডিয়াম, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একতলা থেকে চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণ, আধুনিক ল্যাব স্থাপন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি সরঞ্জামাদির ব্যবহার নিশ্চিত করেছি। এই আসনের পুঠিয়া দুর্গাপুর উপজেলায় শতশত কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে সেই সাথে নতুন অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে এবং কিছু উন্নয়নের তালিকা অনুমোদনের অপেক্ষায় মন্ত্রণালয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্প গুলো শতভাগ বাস্তবায়ন হলে এবং অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা উন্নয়ন প্রকল্প গুলো অনুমোদন হলে পাল্টে যাবে রাজশাহী পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের সকল দৃশ্যপট।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris