মঙ্গলবার

২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে এভারগ্রীণ’র দখল করে নির্মাণাধীণ কাউন্টার উচ্ছেদ করলো আরডিএ যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার করা হলে বিশ্ব রক্ষা পেতো : প্রধানমন্ত্রী শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানির তীব্র সংকট, ভোগান্তিতে রোগী-স্বজনরা নিয়ামতপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড রাজশাহীতে নারীর মোবাইল ফোন-ব্যাগ ছিনতাই, তিন ছিনতাইকারী গ্রেফতার রাসিককে সুদৃঢ় আর্থিক ভিত্তির উপর দাঁড় করতে চাই : মেয়র কাতারের আমির আসছেন আজ, সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার দখলের সুযোগ বালিশকাণ্ডের সেই প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছে রাবির হল, অনিয়মের অভিযোগে দুদকের হানা/৩

তুমি মরেও বেঁচে আছো রাজশাহীর মাটিও মানুষের হৃদয় স্পন্দনে

Paris
Update : মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

মোবারক হোসেন শিশির
রাজশাহীর পুঠিয়া দুর্গাপুর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক ছিলেন একজন জন কর্মীবান্ধব জননেতা। আজ ৩১ জানুয়ারী প্রয়াত বর্ষীয়ান জননেতা অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক এর চতুর্থ প্রয়ান দিবস। শ্রদ্ধেয় প্রিয়নেতার নির্বাচনী এলাকা পুঠিয়া-দুর্গাপুর উপজেলায় নয় পুরো রাজশাহী জেলা তথা উত্তরাঞ্চল জুড়ে ছিলো কর্মী বান্ধব এই জননেতার পদচারনা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের দিকনির্দেশক হিসেবে সর্বদা সাহসিকতার সাথে কাজ করেছেন তিনি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের একান্ত বিশ্বস্ত সহচর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিল এর ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন নেতা ছিলেন কর্মীবান্ধব জননেতা তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। ছাত্র রাজনীতি শুরুর মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে সংসদ সদস্য হয়ে গড়ে ওঠা অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক নেতাকর্মীদের দুর্বিষহ দিনে সুখ-দুখে পাশে থেকে সার্বিক সহযোগীতা করতেন এই জননেতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক হাল ধরেছিলেন কর্মী বান্ধব এই নেতা।
তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক রাজশাহী জেলার তৎকালীন পুঠিয়া থানার (বর্তমান দুর্গাপুর) ঝালুকা ইউনিয়নের আমগাছী গ্রামের মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৫২ সালের ২০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা কছির উদ্দিন ছিলেন ঝালকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও মাতা শাহারবানু ছিলেন একজন গৃহিনী। পিতা মাতার ৫ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বড় সন্তান। তিনি তৎকালীন রাজশাহী মাদ্রাসা স্কুল বর্তমানে (হাজী মুহাম্মদ মহসিন মাদ্রাসা স্কুল) থেকে ৫ম শ্রেনী পাশ করে পাবনা জেলার ইশ্বরদী মারোয়ারী স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবনে পদার্পন করেন। তিনি স্কুলে অধ্যানরত অবস্থায় ১৯৬৬ সালে ঈশ্বরদী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ১৯৬৭ সালে রাজশাহী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন এবং রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কাছে বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের ভর্তি হন। এরপর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজ এলাকার নেতৃবৃন্দের ডাকে ঝালুকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের হাল ধরেন।
১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা আইয়ুব বিরুদ্ধে আন্দোলনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হলে ছাত্রনেতা হিসেবে রাজশাহী শহরে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা নিহতের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং এ সময় সামরিক বাহিনীর গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে অল্প জন্য প্রাণে রক্ষা পান তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। সেসময় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর রোষানলে পড়ে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে আসলে সেখানেও পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী হামলা চালিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এলাকার বহু তরুণকে সংঘটিত করে তিনি ভারতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে এলাকায় ফিরে এসে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের সাংগঠনিক দায়িত্ব নিয়োজিত ছিলেন তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আদালতে হয়রানির স্বীকার হতে হয় দেখে পিতামাতার নির্দেশে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আইনী সহযোগিতা করার জন্য রাজশাহী ল’কলেজে এল, এল, বি ভর্তি শেষে পাশ করে রাজশাহী অ্যাডভেকেট বার কাউন্সিলের সদস্য পদ লাভ করে রাজনীতির পাশাপাশি ওকালতি পেশায় জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৪ সালে তিনি রাজশাহী জেলার তৎকালীন পুঠিয়া উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং পর পর দুই দফা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৭৪ দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৯ সালে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৮০ সালে সামরিক বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে দেড় বছর বিনা দোষে কারা বরণ করেন। কারাবরণ শেষে ফিরে এসে তিনি ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক কারণে স্বৈরশাসন আমলে তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুককে ফেরারি জীবন-যাপন করতে হয়। পুলিশি নিপীড়নের কারণে ১৯৮৭ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৮৮ সালের জুন পর্যন্ত আত্মগোপনে থাকেন তিনি। আত্মগোপনে থেকেই দলীয় নেতৃত্ব দিয়ে যান কর্মীবান্ধব এই নেতা। ১৯৯০ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থনের দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে তৎকালীন মুসলিম লীগ সভাপতি আয়েন উদ্দীন কে পরাজিত করে রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সরকার গঠন করে। বিএনপি’র শাসনামলে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত একমাত্র সংসদ সদস্য হওয়ায় তাকে সহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতারা বিভিন্নভাবে নির্যাতন নিপীড়ন শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে বিভিন্ন মামলার জড়িয়ে আসামী করা হয়। তবুও রাজনৈতিক হাল না ছেড়ে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়েই সাংগঠনিক রাজনীতি ত্বরান্বিত করতে রাজনীতির মাঠেই অবস্থান নিয়ে থাকেন কর্মীবান্ধব এই জননেতা। ১৯৯২ সালে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ফের দ্বিতীয়বারের মতো ১৯৯৭ সালে তিনি আবারো জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী ও সমর্থকদের ওপর জুলুম নির্যাতন মামলা হামলা শুরু করলে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সাংগঠনিক রাজনীতির পাশাপাশি আইনি সহায়তা দিয়ে নেতাকর্মীদের আগলিয়ে রাখেন কর্মী বান্ধব জননেতা তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। এরপর ২০০৪ সালে বাংলা ভাইয়ের অত্যাচারে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী যখন এলাকা ছাড়া সে সময়েও ভিন্নভাবে নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করেন তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। এরপর তিনি আছে কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৫ সালে তিনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। সেসময় থেকে তিনি পুঠিয়া দুর্গাপুর তথা রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নির্যাতন নিপীড়িত নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। শত অত্যাচার অনাচার নিপীড়ন নির্যাতনের পরেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির হাল ছাড়েননি কর্মীবান্ধব জননেতা তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক।তিনি সর্বদা নেতা কর্মী ও সমর্থকদের দুর্দিনের পাশে থেকে রাজনৈতিক হাল ধরে রেখেছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদরা বলছেন ফারুক তুমি মরলেও বেঁচে আছো পুঠিয়া দুর্গাপুর তথা রাজশাহীর মাটি ও মানুষের হৃদয়ে। বর্ষিয়ান এই জননেতা গত ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে সন্ধ্যায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর রাজশাহী উপ-শহরের বাড়ি থেকে তাকে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ ৩১ শে জানুয়ারি প্রয়াত বর্ষীয়ান এই জননেতার তৃতীয় প্রয়াণ দিবস। মৃত্যুর পর থেকে প্রতিবছরই বর্ষিয়ান এই জননেতার মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়ে আসছে। বশিয়ানী জননেতার জন্য দোয়া কামনা করেছেন তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ। লেখক ঃ সংবাদকর্মী ও সভাপতি, দুর্গাপুর সাংবাদিক সমাজ, রাজশাহী।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris