পুঠিয়া প্রতিনিধি
রাজশাহী পুঠিয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে অনিয়ম ও অবহেলার কারণে, যেখানে-সেখানে অর্ধশতাধিক রং ফর্সা হওয়ার ক্রীমসহ বিভিন্ন রকম ভেজাল প্রসাধনীর কারখানা গড়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ভেজাল পন্যগুলো পাঠাচ্ছেন কারখানার মালিকরা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে উপজেলা প্রশাসনকে ১২টি ক্রিম কারখানায় অভিযান ও বন্ধ করার নিদের্শ দিয়েছেন। আর ভেজাল প্রসাধনীর কারখানার মালিকরা বলছে,বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে। মাঝেমধ্যে লোক দেখানো জন্য, যাদের সঙ্গে চুক্তি নেই,তাদের ভেজাল প্রসাধনী কারখানায় অভিযান করা হচ্ছে। দেখা গেছে,ভেজাল প্রসাধনী কারখানাগুলেতে কোনো প্রকার কেমিস্ট কিংবা পরীক্ষকা-নীরিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। তারপর,ভেজাল প্রসাধনীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে উপজেলা প্রশাসনকে ১২টি ক্রিম কারখানায় অভিযান ও বন্ধ করার নিদের্শ দিয়েছেন। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো ভেজাল প্রসাধনীর কারখানা বন্ধ করার হয়নি। উপজেলার কয়েকটি স্থানে অসাধু ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে রং ফর্সকারী নকল ভেজাল প্রসাধনী উৎপাদন করে আসছে। তাদের উৎপাদিত প্রায় দু’ডজন ভেজাল প্রাসাধনীগুলো সারা দেশে বাজারজাত হয়ে থাকে। যা মানব দেহের মারাক্তক ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। এ কারণে ১৬ মে ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের যুগ্ম সচিব ফরিদ আহম্মদ স্বাক্ষরিত একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করার নিদের্শনা পত্র রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও একই নিদের্শনা পত্র পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পাঠিয়েছে। নির্দেশনা পত্রের স্বারক নং-০৩.০৭৯.০১৬.০৪.০০.২৬.২০১৬-৫৩৪ (৪)। ওই পত্রে ১২টি ভেজাল ও অবৈধ ক্রিম কারখানার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, মর্ডাণ হারবাল, রুপসী গোল্ড, মেডনা স্পট ক্রিম ও হারবাল, চ্যালেঞ্জার হারবাল ও প্রসাধনী, ডিজিটাল হারবাল, সীনা স্পট ক্রীম, রোমাঞ্চ হারবাল ও স্পটক্রীম, ডায়মন্ড স্পট ক্রীম, ঝিলিক সলিসন, লাউস ষ্টার গোল্ড ও আইকন হারবাল, লাকি সেভেনস্পট ক্রিম এবং জ্যোতি বিউটি হারবাল। পত্রে আরো উল্লেখ করা হয় ওই ক্রিম কারখানার মালিকরা বিএসটিআই কর্তৃক মাত্র দু’একটি পণ্যের অনুমোদন নিয়েছে। পরে কারখানার মালিকরা নামিদামী বিভিন্ন কোম্পানীর মোড়ক ব্যবহার করে ভেজাল মিশ্রিত একাধিক পণ্যে উৎপাদন করছে। তাদের ওই পণ্যগুলো মানবদেহে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। তারা স্টিলম্যান, টিয়ারিক এসিড, আইসোপ্রোপাইল, মাইরিস্টড, সাধারন পানির মিশ্রণে রং ফর্সাকারী ক্রিম ও বিভিন্ন প্রসাধনী তৈরি করছে। কারখানার মালিকদের বাহারি বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে এ সকল পণ্য ক্রয় করে জনসাধারণ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি ক্রেতারা ওই ভেজাল পণ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নিদের্শনা রহস্যজনক কারণে ভেজাল প্রসাধনী কারখানা গুলোতে প্রাশাসন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। নাম প্রকাশে অচ্ছিুক ভেজাল প্রসাধনীর কারখানার মালিকরা বলছে, মাঝেমধ্যে লোক দেখানো জন্য,যাদের সঙ্গে চুক্তি নেই,তাদের ভেজাল প্রসাধনী কারখানায় অভিযান করা হচ্ছে। তারা বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লোকদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে। চুক্তি না করলে, এই ব্যবসা এক দিনও করা সম্ভব না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কর্মকর্তা এই এলাকায় নতুন আসলে,দুই/একদিন কারখানায় অভিযান চালানো হয়ে থাকে। কাররণ,তার সঙ্গে নতুন করে চুক্তি বা সমঝোতা করার জন্য। তারপর তার সঙ্গে চুক্তি হলে সবকিছু ঢিলেঢালা হয়ে যায়। পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে সর্বপ্রথম মর্ডাণ হারবাল রং ফর্সাকারী ক্রিম উৎপাদন শুরু করে। মর্ডাণ হারবাল কিছুদিনের মধ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া দেখে, তার ভাইবোন,আত্মীয়স্বজন,কর্মচারীরা অবৈধ ক্রিম ব্যবসা শুরু করে। অবশ্য বছরে এক/দ্ইুবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকরা কারখানাগুলোতে অভিযান করতে দেখা যায়। এতে রং ফর্সকারী নকল ভেজাল প্রসাধনী উৎপাদনকারী কারকানাগুলির তেমন একটা ক্ষতি হয় না। মাসে কারখানাগুলো হতে লাখ লাখ টাকা আয় হওয়ার জন্য,তাদের বিরুদ্ধে মামলা জরিমানা হলে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তারপর. কারখানার মালিকরা চুক্তি করে নেয়। রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় উপজেলার বানেশ্বর বালিয়াঘাটি এলাকায় একটি ভেজাল প্রসাধনী কারখানায় অভিযান চালিয়েছে জেলা ডিবি পুলিশ। অভিযানে কারখানা থেকে নকল প্রসাধনী তৈরি করার বিভিন্ন রকম উপাদান জব্দ করা হয়েছে। এ সময় কারখানার মালিক মোমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটককৃত মোমিনুল ইসলাম দূর্গাপুর উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের নহির উদ্দিনের ছেলে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা শাখার ইন্সপেক্টর আতিকুর রহমান বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা শাখা পুঠিয়ার বালিয়াঘাটি গ্রামের এক বাসায় নকল প্রসাধনী তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। আমরা মাঝেমধ্যে ভেজাল প্রসাধনীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। এ সময় ভেজাল প্রসাধনী সামগ্রী তৈরির মেশিন,কেমিক্যাল,বিপুল পরিমাণ ক্রীম, লতা হারবালসহ বিভিন্ন কোম্পানির নকল খালি মোড়ক ও ক্রিম তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ক্ষতিকারক উপাদানসহ একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় পুঠিয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভেজাল প্রসাধনীর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।