বৃহস্পতিবার

২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে আনতে কমিটি গঠন

Paris
Update : সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রোহিঙ্গারা যেন মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন এবং আমাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন, সেই ব্যবস্থা করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত ‘বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা’ সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির ষষ্ঠ সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা অনেক আগে থেকেই তা লক্ষ্য করে আসছি। সেটাকে নিরুৎসাহিত করতে আমরা একটা কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা শিগগির একটা সমাধান বের করবেন। রোহিঙ্গারা যেন মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন এবং আমাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন, সেই ব্যবস্থা করবেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যেন আমাদের নেটওয়ার্কে ঢুকতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা নিয়েও বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও টহল রাস্তা নির্মাণ প্রায় শেষ হয়েছে। ‘আপনারা জানেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চতুর্দিকে আমরা কাঁটাতারের বেষ্টনী, টহল রাস্তা ও ওয়াচটাওয়ার নির্মাণে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা এরইমধ্যে প্রকল্পের কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ করে দিয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় ৯৯ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে। তারা আমাদের এপিবিএনের কাছে পর্যায়ক্রমে তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। শুধু নিয়ন্ত্রণ কক্ষগুলো তৈরি বাকি রয়েছে। বাকি সব কাজ শেষ হয়েছে’
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও বিকাশ নিয়ে আমরা কাজ করছি। তাদের দক্ষতা বাড়ানো, বিশেষ করে তারা নিজ দেশে ফিরে গিয়ে কিংবা তাদের জীবিকা অর্জনে যা যা করা দরকার, তা নিয়েও বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্মনিয়ন্ত্রণ, পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন এনজিও, সরকার, মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সবাই কাজ করেছে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, আজ আমরা যে রিপোর্ট দেখতে পেলাম, সে অনুসারে আমরা ৬৫ শতাংশ রোহিঙ্গাকে জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আনতে পেরেছি। এটা আরও ভালো জায়গায় অর্থাৎ আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। এ সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বাহিরে মাদকবিরোধী অভিযানের কথাও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বাইরে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে। সেখানে কিছুকিছু অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তা নজরদারিতে আনা হচ্ছে। আমাদের এপিবিএনও কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে একটা দীর্ঘ দাবি ছিল যে সেখানে স্বাস্থ্যসেবা বাড়াতে হবে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমাদের ভাসানচরে ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা কমিউনিটি গেছে। এনজিও, পুলিশও সেখানে গেছে। সেখানে একটি ভালো হাসপাতাল হওয়া দরকার। আজ বৈঠক তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। হাসপাতালটি যেন আরও সমৃদ্ধ করা হয় ও শিগগির তা কার্যকারিতায় নিয়ে আসতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাবো। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যেন কাজ করে খেতে পারে, সে জন্য সেখানে বিভিন্ন এনজিও সক্রিয় রয়েছে। তাদের আমরা আরও সহযোগিতা করবো। তারা (রোহিঙ্গারা) যেন সেখানে কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে পারে, সে জন্য ছোটো ছোটো লেক করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক কাজ করছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ব্যবহারিকভাবে মৎস্য ও কৃষি উৎপাদনে দক্ষ করে তুলতে ব্র্যাক কাজ করছে। মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতা) কয়েকজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সামনে যেন আরও এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সেনাবাহিনী থেকে প্রশাসন সবাইকে আরও বেশি সতর্ক হতে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসনে আমরা কাজ করছি। ক্যাম্পের পাশে থাকা বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দাসংস্থাকে ভালোভাবে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হবে। যেন অপরাধ হ্রাসের পাশাপাশি মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আলোচনা করেছি। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বন্ধু দেশগুলোও কাজ করছে। আমাদের আশা, শিগগির এর সমাধান হবে। যুক্তরাষ্ট্র কী পরিমাণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে নিতে চায় জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিজেদের ভিসা দিয়েই বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের নিচ্ছে। বছর তিনেক আগে আমার সঙ্গে জাতিসংঘে নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়েছিল। তিনি তখন রোহিঙ্গা নেওয়ার জন্য উৎসাহ প্রকাশ করেছিলেন। আজ জানতে পারলাম তিনি মাত্র সাতজন নিয়েছেন। আর অস্ট্রেলিয়া নিয়েছে ২৪ জন। এটা সংখ্যায় খুবই কম। এ নিয়ে কথা বলে সবার মনোযোগ টানতে চাই না। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা কিন্তু সবসময় বলে আসছি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী কিংবা আমি যেখানেই যাই সেখানেই বলছি- এই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা, যারা এখানে জোরপূর্বক স্থানান্তরিত হয়েছেন, এদের কিন্তু কিছুই আর বাকি নেই। তারা যে কোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারে। যে কোনো অফার গ্রহণ করতে পারে। তারা ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিস্টদের খপ্পরেও পড়তে পারে। এ কথা আমরা বহু আগে থেকেই বলছি। তবে আমাদের কাছে এখনো কোনো উদাহরণ নেই। তিনি বলেন, এখনো তারা আমাদের নজরদারির বাইরে যায়নি। আমরা মনে করছি এই ক্ষেত্রে যদি এটা কন্টিনিউ করে জনগোষ্ঠীকে যদি মিয়ানমার ফেরত না নেয় তাহলে এটা হতে পারে। এটা আমরাই বলে আসছি। এখানে আমাদের নজরদারি আছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজতের বৈঠক এবং তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দাবি-দাওয়াম তো আপনাদের (সাংবাদিকদের) জানার কথা নয়। প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তাদের সন্তুষ্ট করেছেন। তাদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জানিয়েছেন, তাদের দাবি-দাওয়া যেগুলো যৌক্তিক সেগুলো তিনি অবশ্যই দেখবেন, সেগুলো করে দেবেন আর যেগুলো একটু সময় লাগবে, সেগুলো তিনি নজরে আনবেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris