শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৭ দিন বন্ধ তীব্র তাপদাহে রাজশাহীতে হাসপাতালে বাড়ছে রোগী তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রাইমারি স্কুলে অ্যাসেম্বলি না করানোর নির্দেশ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্ত মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে : জাতিসংঘ রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত রাজশাহীতে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ধামুইরহাটে ভূয়া সিআইডি গ্রেফতার রাজশাহীতে বিভাগীয় পেনশন মেলা অনুষ্ঠিত স্ত্রীকে কারাদণ্ড দেওয়া নিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে ইমরান খানের হুমকি

নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে একজন নিহত, রিজভী-আমানসহ ৩৫ জন আটক

Paris
Update : বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২২

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মকবুল হোসেন (৪০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ হয়। এসময় আহত হন মকবুল। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার পর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও বিএনপি নেতা আবদুস সালামসহ প্রায় ৩৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতর থেকে তাদের আটক করা হয়। এর আগে সংঘর্ষের পর বিকেল ৪টায় দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সদস্য আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ এদিকে, নয়াপল্টনে সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২০ জনকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতরা হলেন- বোরহান উদ্দিন কলেজ ছাত্রদলের কর্মী আনোয়ার ইকবাল, পল্টন থানা যুবদলের কর্মী মো. খোকন, মো. মনির হোসেন, মো. রাশেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হলের ছাত্রদল নেতা মো. ইয়াসির আরাফাত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের নেতা মো. সুমন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা মো. জহির হাসান, রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. শামীম, কদমতলী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. হানিফ, মো. হৃদয়, মো. মকবুল হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. ফারহান আরিফ, শাহবাগ থানা যুবদল নেতা মো. নূরনবী, মনির, শাহ আলী থানা যুবদলের নেতা মো. সুলতান আহমেদ, শেরেবাংলা নগর যুবদলের নেতা মো. আমিনুল ইসলাম, গুলশান থানা ছাত্রদলের নেতা আশরাফুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের বিপ্লব হাওলাদার, মো. আসাদুজ্জামান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের নেতা মো. মেহেদী হাসান নয়ন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা গতকাল বুধবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। দুপুরে নেতাকর্মীদের বেশ ভিড় দেখা যায়। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। বিএনপির নেতাকর্মীরাও লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশকে ধাওয়া করে। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে নয়াপল্টন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিএনপির নেতাকর্মীরা দফায় দফায় মিছিল করেন। সড়কে টায়ার জ¦ালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেন। এদিকে, বিকেল ৪টার কিছু সময় পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সামনের সড়কে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সদস্য আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। এসময় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্যরা এ্যানী ও জুয়েলকে তুলে নিয়ে যায়। তবে সাংবাদিকরা ডিবির কর্মকর্তাদের কাছে তাদের আটক করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে রাজধানীর নাইটিঙ্গেল মোড়ে ব্যারিকেড দেছ পুলিশ। ফলে রাস্তার দুপাশেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নয়াপল্টনসহ নাইটিঙ্গেল মোড় ও কাকরাইলে অবস্থান নেয় পুলিশ। এদিকে সংঘর্ষে নিহত যুবকের মকবুলের শরীরে ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান রুমি ও তার পরিচিত আবদুল জলিল জানান, নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে সংঘর্ষের সময় হঠাৎ দেখি ওই ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তিনি গুলিতে আহত হয়েছেন। পরে আমরা তাকে রিকশায় করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও জানান, নিহতের কাছে একটি মোবাইলফোন পাওয়া গেছে। সেই ফোনের মাধ্যমে জানা গেছে তার নাম মকবুল। হাসপাতালে জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত লোকজন নিহতের শরীরে বিভিন্ন স্থানে দেখে জানান তার পিঠে ও নাকে-মুখে ছররা গুলির চিহ্ন আছে। এদিকে নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীরাই চড়াও হয়েছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, বিএনপি কর্মীরাই সংঘর্ষের শুরু করেছে। বিকাল ৪টার দিকে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিলে তাদের সরে যেতে বলা হয়। এজন্য তাদের সময় দেওয়া হলেও তারা সরে যায়নি। এ সময় পুলিশ তাদের উঠিয়ে দিতে গেলে তারা অতর্কিতে পুলিশের ওপরে হামলা করে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত পুলিশের কতজন সদস্য আহত হয়েছে এ বিষয়ে তথ্য নাই। এ ছাড়া কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, তাদের রাস্তা থেকে উঠিয়ে দিতে গেলে শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। তখন তো এখানে সংঘর্ষ হবেই। এদিকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব সরকার বলেন, জনগণের নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের প্রথম দায়িত্ব। যত ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার তা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গ্রহণ করবে। কতজনকে আটক করেছে পুলিশ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা এখন অ্যাকশন মুডে আছি। তাই এর উত্তর দিতে পারছি না। যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মেহেদি হাসান বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এমতাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি না ঘটতে পারে তার জন্য ডিএমপি কর্তৃপক্ষের যা যা করণীয় তাই তাই করছে। এখন পর্যন্ত সব কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে নয়াপল্টন থেকে অসংখ্য বোমা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানান তিনি। বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, সেফটি ও সিকিউরিটিকে যারা নষ্ট করতে চায়, তাদের কোনোভাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ ছাড় দেবে না। এরই অংশ হিসেবে আমরা যখন দেখলাম, জনগণের জানমালের জন্য হুমকিস্বরূপ কার্যক্রম হচ্ছে নয়াপল্টন এলাকায় এবং পুলিশের ওপর হামলা ও বোমা নিক্ষেপ হয়েছে, তখন আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। তিনি বলেন, অভিযানে নয়াপল্টন থেকে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেছি। অসংখ্য সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়া অসংখ্য বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে গ্রেপ্তারের সংখ্যা বলা যাবে না, আমরা এখন অ্যাকশনে আছি। তবে গ্রেপ্তার অনেক। বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছেন কি না- জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বলেন, তারা এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris