বৃহস্পতিবার

২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নতুন জঙ্গি সংগঠনে জড়িত ৫ জন গ্রেপ্তার

Paris
Update : সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২

‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও রাজধানীর গুলিস্তান থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তাররা হলেন শামিন মাহফুজের ভাতিজা সাকিব মাহমুদ (২৭)। অন্যরা হলেন মো. গোলাম সারোয়ার (২৫), মো. ফরহাদ হোসেন (২২), মো. মুরাদ হোসেন (২১) ও মো. ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈম (২৮)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন উগ্রবাদী বই ও লিফলেট, একটি রেজিস্টার এবং ব্যাগ।  সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, শামিন মাহফুজ ওরফে শামিন স্যার ওরফে মেন্ডিং মুরং নামে একজন ছাত্রজীবনে ছিলেন মেধাবী। এসএসসি ও এইচএসসিতে বোর্ড স্ট্যান্ড করেছিলেন, এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। উত্তীর্ণ হন প্রথম শ্রেণি পেয়ে। ২০০৩ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন। শিক্ষকতা করেন ২০১১ সাল পর্যন্ত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী খুমি সম্প্রদায় নিয়ে পিএইচডি গবেষণায়ও নিযুক্ত হন। থাকা শুরু করেন পাহাড়ে। এ সময় জড়িয়ে পড়েন জঙ্গি কার্যক্রমে। সংগ্রহ করতে থাকেন সদস্য। একপর্যায়ে নিজেই গড়ে তোলেন নতুন এই জঙ্গি সংগঠন। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানান, তারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার দাওয়াতি কার্যক্রম, হিজরত করা সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধান, পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম করে আসছিলেন। তারা ২-৪ বছর আগে নিকটাত্মীয়, বন্ধু ও স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হন। যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানায় র‌্যাব। এর মধ্যে গোলাম সারোয়ার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল শেষ করেন। এরপর তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে একটি মিষ্টির দোকানে করতেন চাকরি। এর আগে জঙ্গিবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তার শ্বশুর নেয়ামত উল্লাহ। এই স্বশুরের মাধ্যমেই দুই বছর আগে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন গোলাম সারোয়ার। র‌্যাব জানায়, গোলাম সারোয়ার তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া তরুণদের কুমিল্লার বিভিন্ন সেফ হাউজে রাখা ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে পাঠানোর কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অন্যদিকে গ্রেপ্তার আরেক যুবক সাকিব মাহমুদ গাইবান্ধা থেকে মাধ্যমিক শেষ করেন। তিনি একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিংয়ের কাজ করতেন। সাকিব জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার শুরা সদস্য, উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের তত্বাবধায়ক শামিন মাহফুজের আপন ভাতিজা। তিন বছর আগে এই সংগঠনে যোগ দেন সাকিব। গাইবান্ধা অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। সাকিব সংগঠনের একজন সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য। তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালে গাইবান্ধা সদর থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। এদিকে গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে ফরহাদ হোসেন ও মুরাদ হোসেন তারা দুই ভাই। এর মধ্যে ফরহাদ স্থানীয় কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকশেষ করেন। আর মুরাদ পড়াশোনা করেন মাধ্যমিক পর্যন্ত। এই দুই ভাই জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্য এবং অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিবের শ্যালক। তিন বছর আগে মোশারফ হোসেনের মাধ্যমে তারা এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হন। এই দুই ভাই রাজধানীর গুলিস্তানে সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ট্রাস্ট টেলিকম’ নামে একটি মোবাইল এক্সেসরিজের দোকান পরিচালনা করতেন। দোকানের লভ্যাংশ ব্যয় করতেন সংগঠনের কাজে। এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জে তাদের একটি গরু-ছাগলের খামার রয়েছে। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে তাদের খামারে গিয়ে মিটিং করতেন। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য খাবার, বস্ত্র, নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য এবং বোমা তৈরির সামগ্রী সংগ্রহ করতেন ফরহাদ ও মুরাদ। এরপর এগুলো মগবাজারে ওয়াসিকুর রহমান নাঈমের কাছে পৌঁছে দিতেন। এই ওয়াসিকুরকেও গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। র‌্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ওয়াসিকুর রাজধানীর একটি মাদ্রাসা থেকে হিফজ শেষ করেন। দুই বছর আগে তিনিও জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তিনি রাজধানীর মগবাজারে ‘ষোল আনা’ নামে একটি আতরের দোকান পরিচালনা করতেন। ব্যবসার লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রমে ব্যয় করতেন। আর গ্রেপ্তার নাঈম সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ফরহাদ ও মুরাদের থেকে বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে নাঈমের আতরের দোকানে পৌঁছে দিতেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ (২৪) হত্যার ঘটনার তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এ ঘটনায় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো ছায়া তদন্ত করছে র‌্যাব। আমরা খুনের মোটিভ ও প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত এবং আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি। খন্দকার আল মঈন বলেন, ফারদিন হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত ডিজিটাল ফুটেজ পেয়েছি তথ্যপ্রযুক্তিগত সহায়তায়। হত্যাকাণ্ডের পূর্বে তার (ফারদিনের) যেসব জায়গায় বিচরণ ছিল সেসব স্থানে যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি। আমরাসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একই উদ্দেশে কাজ করছে, সেটা হচ্ছে ফারদিন হত্যার মোটিভ কি তা উদঘাটনের চেষ্টা করছি। আমরা এই হত্যায় প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে কাজ করছি। ফারদিন হত্যার তদন্তে আমাদের অগ্রগতি আছে। আমরা প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।

আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করবে বিএনপি। এই সমাবেশ ঘিরে উদ্ভূত যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাবের সঙ্গে প্রস্তুত বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্স, স্পেশাল ডগ স্কোয়াড ও হেলিকপ্টার ইউনিট। নাশকতার পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সেজন্য সাদা পোশাকে থাকবে র‌্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা। ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ ঘিরে র‌্যাবের নিরাপত্তা প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে সুষ্ঠু-স্বাভাবিক রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে। সরকারি ও বিরোধীদল পালন করছে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি। র‌্যাব সাধারণত জঙ্গি দমন, মাদক কারবারি, অস্ত্রধারী ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে আস্থা অর্জন করেছে। তিনি আরও বলেন, রাজধানী ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, বিদেশি স্থাপনা ও অ্যাম্বাসি রয়েছে। ঢাকা শহরের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা সবসময় সচেষ্ট রয়েছি। শুধু এই জনসমাবেশ ঘিরে নয় আমরা সবসময় জননিরাপত্তা, দেশীয় ভাবমূর্তি রক্ষা, বিদেশিদের কাছে যেন দেশীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয় সচেষ্ট রয়েছি সেদিকে। যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত র‌্যাব। আমাদের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্স, স্পেশাল ডগ স্কোয়াড, হেলিকপ্টার ইউনিট প্রস্তুত। বিএনপির জনসমাবেশ ঘিরে র‌্যাবের পক্ষ থেকে রুটিন পেট্রল থাকবে, চেকপোস্ট থাকবে, সাইবার ওয়ার্ল্ডে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। যাতে কোনো ধরনের উসকানিমূলক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে নাশকতার চেষ্টা না হয়, সেজন্য র‌্যাবের সদস্যরা সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris