শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোমস্তাপুরে আইপিএম পদ্ধতিতে সবজি চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা

Paris
Update : মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০২২

গোমস্তাপুর সংবাদদাতা
মূলত চীন ও জাপানের বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির নাম হচ্ছে মালচিং। বিভিন্ন ধরনের বস্তু দিয়ে যখন গাছপালার গোড়া, সবজি ক্ষেত ও বাগানের বেডের জমি বিশেষ পদ্ধতিতে ঢেকে দেওয়া হয় তখন তাকে মালচিং পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। আর এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে উপকারী পোকা-মাকড়, মাছ, ব্যাঙ, পাখি ও গুই সাপ প্রভৃতি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। এ পদ্ধতিটি লাভবান হওয়ায় সবজি চাষী কৃষকরা এ চাষের দিকে ঝুকছে। বাংলাদেশের ৪৯২ টি উপজেলার মধ্যে ২০টি উপজেলাতে এ মালচিং পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিকভাবে সবজি চাষ হচ্ছে। এ পদ্ধতিটিও চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমাস্তপুর উপজেলায় চলমান রয়েছে। এ উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের আলমপুর, সাহাপুর কালন ও বিলগুলদাহা মৌজা সহ বেশ কয়েকটি মৌজায় এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছে, তেমনি ভোক্তারাও কীটনাশক মুক্ত সবজি পাচ্ছে। এ পদ্ধতিতে জৈব সার প্রয়োগ করে সবজি চাষ করা হয়ে থাকে।
আলমপুর মৌজায় মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা এক চাষী সুমন মিয়া জানান, মালচিং পদ্ধতিতে এবার আমি সাত কাঠা জমিতে ২০ হাজার টাকা খরচ করে শসা চাষ করছি। আমার গাছ লাগা প্রায় একমাস হয়ে যাচ্ছে। এ পদ্ধতিতে চাষ করলে গাছের পাশে ঘাস জন্মায় না, তাছাড়া এ সবজিতে পোকামাকড়েরও তেমন আক্রমণ হয় না। এ পদ্ধতিতে ইতিপূর্বেও আমি সবজি চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছি। এবার কৃষি অফিস থেকে মালচিং সিট ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেয়ে আবার সবজি চাষ শুরু করেছি। আশা করছি এবার ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় করব। অল্প সময়ে অল্প জমিতে চাষ করে ভালো লাভবান হব এমনটাই আশা করছি। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে শ্রমিক খরচও কম লাগে। আলমপুর মৌজার আরও একজন চাষী তোজাম্মেল হক জানান, এবার আমি মালচিং পদ্ধতিতে শসা প্রথম চাষ করেছি। বৃহস্পতিবার থেকে আমি শসা তুলছি । ইতিপূর্বেও আমি শসা চাষ করেছি, কিন্তু তেমন লাভবান হতে পারেনি। নতুন মালচিং পদ্ধতির মাধ্যমে ১৫ কাঠা জমিতে প্রায় ২৮ হাজার টাকা খরচ করেছি। আশা করছি এবার প্রায় এক লাখ টাকা আয় করতে পারব। তিনি আরও বলেন, আগে যেগুলো ফসল করেছি কিংবা করতাম ওগুলো ফসল করে তেমন লাভ হতে পারতাম না। কারণ ফসলের খরচ বেশী হতো আর বিক্রি কম থাকায় দাম ভালো পেতাম না। কিন্তু এবার ১৫ কাঠা জমিতে একদিন পরপর প্রায় ৫ মণ করে শসা পাব। আর এটা ১৫ থেকে ২০ দিন মতো পাব। এবার আল্লাহর রহমতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ করে গাছ ও ফল খুব সুন্দর হয়ে আছে। মালচিং পদ্ধতিতে করোলা চাষকারী মতিউর রহমান জানান, আমি এবার মালচিং পদ্ধতিতে ৬ কাঠা জমিতে করলা চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে বীজ, মালচিং শীট ও পোকামাকড় দমনের জন্য শীট পেয়েছি। তাই এ পদ্ধতিতে চাষ করে কৃষক যেমন লাভবান হবে, তেমনি ভোক্তারাও কীটনাশক মুক্ত সবজি খেয়ে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, সারা দেশে ২০টি উপজেলায় আইপিএম বা সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বলতে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রেখে প্রয়োজনে এক বা একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ফসলের ক্ষতিকারক পোকা রোগ বালাইকে অর্থনৈতিক ক্ষতির সীমার নিচে রাখাকে বুঝায় যাতে করে পরিবেশ দূষিত না হয়। এ পদ্ধতিতে বাংলাদেশের ২০ টি উপজেলার ২০ টি মডেল ইউনিয়নে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সবজি চাষ করা হচ্ছে। আমাদের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজাই প্রায় ৩’শ বিঘা জমিতে ৫০০ জন কৃষককে ২০ টি গ্রুপে ভাগ করে প্রতি গ্রুপে ২৫ জন কৃষকের মাধ্যমে সবজি চাষ করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে চাষ করতে আমরা কৃষকদের বিভিন্ন প্রণোদনার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। যাতে করে কৃষকরা মালচিং পদ্ধতির উপকারিতা বোঝে চাষ করতে উদ্বুদ্ধ হয়। তিনি আরও বলেন, এ পদ্ধতিতে সবজি চাষের জন্য কৃষকদের মালচিং শীট, বীজ, জৈব সার, ফেরোমন ফাঁদ, বায়োপেসটি সাইড, আন্তপর্যায়ের কিছু খরচ ও ৭ দিন করে ট্রেনিং দিচ্ছি। তাছাড়া গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের দৌড়গোড়ায় কৃষি সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি সম্পর্কিত যেকোনো পরামর্শ নিতে কৃষি অফিসের পরামর্শ নেওয়ার জন্য উপজেলা কৃষি অফিস সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris