স্টাফ রিপোর্টার
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলাধীন বানেরশ্বর হাটের পাশে ময়লা-আবর্জনার বিশালাকার ভাগাড়টি নিয়ে ঐ হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা ও স্থানীয়রা পড়েছেন চরম বিপাকে। দুর্গন্ধ আর বায়ুদুষনে একাকার বানেশ্বর হাট এলাকার পরিবেশ বলে মন্তব্য স্থানীয়দের। বছরের পর বছর হাটের পাশে পড়ে থাকে ময়লা-আবর্জনা আর পলিথিনের বিশালকার স্তুপ। উক্ত হাট বাজারটি বিগত প্রায় দশ বছর ধরে কয়েক দফা ইজারার দায়িত্বে আছেন ওসমান নামের এক ব্যক্তি। ইজারাদার ওসমানের সাথে আছেন আরো বেশকয়েকজন অংশীদার বলে জানান স্থানীয়রা।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের (ইপিআইসি) গবেষকরা বলছেন, দূষণের কারণে গড়ে সাত বছর করে আয়ু হারাচ্ছে বাংলাদেশিরা। ইপিআইসি প্রবর্তিত এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স (একিউএলআই) নির্ণয়ে গবেষকেরা বাতাসে পিএম২.৫ (ক্ষতিকর ভাসমান কণা যা ফুসফুসের ক্ষতি করে) এর মাত্রা হিসাব করতে স্যাটেলাইট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন। বায়ু দূষণ বলতে বোঝাই, বায়ুমণ্ডলের মধ্যে যখন দূষিত ধোঁয়া, রাসায়নিক পদার্থ, ধূলিকণা গ্যাস, গন্ধ, বাষ্প প্রভৃতি অনিষ্টকর উপাদানের সমাবেশ ঘটে এবং যার ফলে মানুষ, জীবজন্তু ও উদ্ভিদ জগতের ক্ষতি সাধিত হয় , তখন তাকে বায়ু দূষণ বলে।
উক্ত হাট-বাজার সংলগ্ন ময়লা-আবর্জনাতে পরিপূর্ণ ভাগাড়টি থেকে নির্গত হওয়া অসহ্যনীয় দুর্গন্ধ থেকে পরিত্রাণ পাবার আশায় অসংখ্যবার ভুক্তভোগীরা ইজাদার ওসমানকে অনুরোধ করছেন বিগত কয়েক বছর থেকেই। কিন্তু আজ অবদি সেই ময়লা আবর্জনার স্তুপ সেখান থেকে অপসারণ করার কোন প্রকার উদ্যোগ নেয়নি ইজারাদার কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ইজারাদার ওসমান একাধিকবার কথা দিয়েও আজ অবদি কথা রাখেননি বলেও জানান হাটের ব্যবসায়িসহ স্থানীয়রা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে, হাটের অনেক ব্যবসায়ি জানান, কয়েক বছর আগে ভাগাড়ের স্থানটি ছিলো বিশাল আকৃতির একটি ডোবা। স্থানটিতে হাটের ব্যবসায়ি, দোকানদার, আশেপাশের মার্কেট ও বাসাবাড়ি থেকে ময়লা আবর্জনা ফেলা ছাড়াও মুরগি, গরু ও মাছের নারি ভুড়ি ফেলতে ফেলতে স্থানটি এখন জলাশয় থেকে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে তীব্র দুর্গন্ত নির্গত হলেও বর্ষা মৌসুমে স্থানটির আশেপাশ দিয়ে চলাই যেনো দায়।
হাটের পাশে বেশ কয়েকজন ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ি ও চা দোকানি জানান, স্থানটিতে ময়লা-আবর্জনা জমতে জমতে একসময় প্রায় সাত ফিট উচ্চতা হয়ে গিয়েছিল। আমরা কয়েকজন ব্যবসায়ি নিজেদের উদ্যোগে বিশালাকার ময়লা-আবর্জনা সেই স্থানটির একাংশের ময়লা আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছি। যদিওবা উক্ত স্থানটি ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করার দায়িত্ব হাট ইজারাদারের। উক্ত স্থানটিতে প্রতি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবারে হাট বসে। সবজি থেকে শুরু করে চাল, ডাল, মসলাসহ সকল ধরনের নিত্যপণ্য ছাড়াও বিক্রি হয় মাছ, মাংস ও মুরগি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাটে প্রবেশ করা মাত্রই নাকে জোড়েসোড়ে ধাক্কা লাগে অসহ্যনীয় দুর্গন্ধযুক্ত বাতাসের। আবার ঐ একই স্থানে হাটের ব্যবসায়ি থেকে শুরু করে আগত ক্রেতা ও পথচারিরা প্রাকৃতিক ডাকের সাড়া দেয় নিয়মিত ভাবেই। হাটে সবজি কিনতে আসা ক্রেতা আলিম, শহিদুল ও মালেক পত্রিকার প্রতিনিধিকে জানান, বাজার করার জন্য এই হাটে প্রবেশ করা মাত্রই নাগের ডগায় এসে দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস ধাক্কা দেয়। কোন উপায়ন্তর না থাকায় কোন রকম বাজার সদায় করে হাট থেকে বেরিয়ে পরি আমরা। দুর্গন্ধ এতোটাই প্রকোট যে, কেউ কেউ নাকে রুমাল দিয়েও প্রবেশ করেন হাটে।
স্থানটিজুড়ে ময়লা-আবর্জনা আর গরু মুরগির নাড়িভুড়ি ও উচ্ছৃষ্ট ছাড়াও সমস্ত ভাড়াও জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লাখ খানেক নষ্ট হওয়া পলিথিন ব্যাগ। পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু, তবুও দেশের প্রতিটি দোকানেই এর ব্যবহার পর্যাপ্ত পরিমানে লক্ষ্যনীয়। ইজারাদার ও রাজনৈতিক কারনে, বানেশ্বর হাট এলাকার কেউ নিজের নাম ব্যবহার না করার শর্তে বলেন, হাটের এই ভাড়ারটি এখন স্থানীয়দের গলারকাটা। তাই, বাতাস ও পরিবেশ দূষনের হাত থেকে পরিত্রাণ পাবার আশায় ইজারাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তাদের কাছে এই ময়লা-আবজনার স্তুুপটি অন্যত্র সরিয়ে নেবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কাম্য করেছেন।