শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সীমান্তে বেপরোয়া সোনা চোরাচালানকারীরা

Paris
Update : শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২২

দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলায় সোনা চোরাচালানকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অর্ধশতাধিক চোরাচালান রুট দিয়ে প্রতিদিনই সোনা পাচার হচ্ছে। আবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতেও ওসব সীমান্তপথের কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই সোনার চালান ধরা পড়ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গত দুই মাসে সোনা চোরাচালন রুটগুলো থেকে অর্ধশত কোটি টাকার স্বর্ণ উদ্ধার এবং বাহকদের গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের দাবি, স্বর্ণ বিভিন্ন বিমানবন্দর হয়ে দেশে আসে এবং তারপর প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাচারের উদ্দেশে নেয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বর্ণ পাচারে চুয়াডাঙ্গায় সীমান্তঘেঁষা ৩টি রয়েছে। সেগুলো হলো কার্পাসডাঙ্গা, দর্শনা ও জীবননগর। সাতক্ষীরা লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী ৬টি রুট হচ্ছে ভাদিয়ালী, কালীগঞ্জ, শেরপুর, ভোমরা, নোংলা ও কৈখালী। যশোরের ৫টি পয়েন্ট দিয়ে স্বর্ণ পাচার করা হয়। তাছাড়া রাজশাহীর সোনাইকান্দি, হরিপুর, কাশিডাঙ্গা, আলাইপুর, বাগা, মুক্তারপুর ও চড়ঘাট; চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ, ভোলাহাট ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, ফুলবাড়ী, হিলি, কামালপুর ও বিরল; কুড়িগ্রামের রৌমারী ও ফুলবাড়ী এবং লালমনিরহাটের বুড়িরহাট, শ্রীরামপুর ও দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে স্বর্ণ পাচার হয়। সীমান্ত এলাকা দিয়ে স্বর্ণ পাচারে কৃষক, দিনমজুর, ট্রাক-লরির চালক, খালাসি, রাখাল ও জেলেদের ব্যবহার করা হচ্ছে। টিফিন বক্স, মৌসুমি ফলের ঝুড়ি, সবজি ও শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে রেখে স্বর্ণ পাচার করা হচ্ছে। স্বর্ণ চোরাকারবারিরা পাচারের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মোবাইল সিম ব্যবহার করে। আকাশপথে স্বর্ণ আসার পর বাস ও ট্রেনে সীমান্তের জেলাগুলোতে পৌঁছে যায়।
সূত্র জানায়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এবং মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে স্বর্ণ এনে চোরাকারবারিরা বাংলাদেশ ও ভারতের বাজারে সরবরাহ করছে। এ কাজে চোরকারবারিরা অর্থের বিনিময়ে আকাশপথ সংশ্লিষ্টদের গাঁটছড়া বেঁধে কার্যক্রম চালাচ্ছে। নিত্যনতুন কৌশলে আকাশপথে দেশে ঢুকছে সোনা। কখনো যাত্রীবেশি বাহকের সঙ্গে থাকা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ইলেকট্রিক মোটর, দেহের বিভিন্ন অংশ, ট্রলির ওপরের হ্যান্ডেল ও মানিব্যাগে করে স্বর্ণ পাচারের ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া রোগী সেজে হুইল চেয়ারে, ঊরুতে অ্যাংকলেট বেঁধে, জুতার মধ্যে, বেল্ট দিয়ে কোমরবন্ধনীর ভেতরে, শার্টের কলারের ভেতরে, স্যান্ডেলের সঙ্গে, সাবান কেসে, সাউন্ড বক্সের অ্যাডাপটরে, বিভিন্ন ধরনের খাদ্য বা ওষুধের কৌটা, প্যান্টের নিচে শর্টসের ভেতর, ল্যাপটপের ব্যাটারির ভেতর, মানিব্যাগে ও গলায় চেইনের সঙ্গে ঝুলিয়ে লকেট হিসেবেও আনা হচ্ছে সোনার বার। তারপর নানা কৌশলে হাত বদল হয়।
সূত্র আরো জানায়, যশোরের পুটখালী সীমান্ত থেকে ৭ সেপ্টেম্বর ১ কেজি ১৬৬ গ্রাম ওজনের ১০টি স্বর্ণের বারসহ ২ জনকে আটক করে বিজিবি। তার ৩ দিন পর একই জেলার গোগা সীমান্ত থেকে ২ কোটি ৫৩ লাখ তিরাশি হাজার ৬শ একত্রিশ টাকা মূল্যের ৩ কেজি ৪৯৮ গ্রাম ওজনের ৩০টি স্বর্ণের বারসহ একজনকে আটক করা হয়। ওই ঘটনার ৫দিন পর বিজিবির চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়নের অভিযানে ৬ কোটি ৬০ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪০ টাকা মূল্যের ৯ কেজি ৮৬০ গ্রাম ওজনের ৫৮টি স্বর্ণের বারসহ এক পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি। তার দুদিন পর যশোরের পুটখালী সীমান্ত থেকে ২ কোটি টাকা মূল্যের ২০টি স্বর্ণের বারসহ একজনকে আটক করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর যশোরের শার্শা উপজেলার গোগা সীমান্ত থেকে এক কোটি ২৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা মূল্যের ১৫টি স্বর্ণের বারসহ এক পাচারকারীকে আটক করা হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর একই জেলার রুদ্রপুর সীমান্ত থেকে ৮৯ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫০ টাকা মূল্যের এক কেজি ২৩৩ গ্রাম ওজনের ১০টি স্বর্ণের বারসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে বিজিবি। ১৪ অক্টোবর শার্শা সীমান্ত থেকে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ৪৩টি স্বর্ণের বার উদ্ধার উদ্ধার করা হলেও পাচারকারীকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ১৬ অক্টোবর সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে ৫০৬ গ্রাম ওজনের ৪টি স্বর্ণের বারসহ এক পাচারকারী বিজিবির হাতে আটক হয়। ১৮ অক্টোবর ঝিকরগাছা সীমান্ত থেকে ১০ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ১২ কেজি ওজনের ১০৬টি স্বর্ণের বারসহ একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২২ অক্টোবর ঝিনাইদহের যাদবপুর সীমান্ত থেকে ৩ কেজি ৭২০ গ্রাম ওজনের ৩২টি স্বর্ণের বার এবং ২৭ অক্টোবর বেনাপোল পোর্ট থানার গাজীপুর গণকবর এলাকা থেকে ১ কেজি ২শ গ্রাম স্বর্ণ বার উদ্ধার করা হয়। গত দুই মাসে অন্য সীমান্ত স্পটগুলোতে আরো প্রায় ২০ কোটি টাকার স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, বিজিবি কেবল পাচারের সময় স্বর্ণ ও পাচারকারী আটক করে। কিন্তু মামলার তদন্ত করে না। দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা স্বর্ণ পাচারের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি করছে। যেসব পয়েন্ট দিয়ে স্বর্ণ পাচার হচ্ছে সেখানে নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মঞ্জুর রহমান জানান, বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো গাফিলতি নেই। ব্যাপক নিরাপত্তা বেস্টনী ভেদ করে কীভাবে স্বর্ণগুলো বিমানবন্দর থেকে বের হচ্ছে তা গভীরভাবে খতিয়ে না দেখে মন্তব্য করা যাবে না।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris