শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
বাগমারায় এক স্কুলের সভাপতি ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এলাকাছাড়া! বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল জাতীয় চার নেতা কখনো মৃত্যু ভয় করেননি : লিটন প্রেমিককে কুপিয়ে জখম করল প্রেমিকা! গোদাগাড়ীতে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো ২ আসামি গ্রেপ্তার এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের সরে দাঁড়াতে নির্দেশ সেনাবাহিনীতে ভুয়া নিয়োগ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তিন প্রতারক রাজশাহীতে গ্রেফতার পুঠিয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করে লাশ গুম করেছিলেন পুত্রবধূ! রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আরডিএ’র জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ! সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে ‘হস্তক্ষেপ’ নিয়ে চিন্তিত প্রার্থীরা মুজিবনগর সরকার আমাদের প্রেরণা : আসাদ

আইন অমান্য করে সীমান্ত এলাকায় পেট্রোল পাম্প, তেল পাচারের আশঙ্কা

Paris
Update : শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২২

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে আইন অমান্য করে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষে একটি পেট্রোল পাম্প তৈরির কাজ চলছে। এতে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে তেল পাচারের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সচেতন মহল। আন্তর্জাতিক সীমান্ত নীতিমালা ভঙ্গ করে সীমান্তের শূন্য লাইনের খুব কাছাকাছি ফিলিং স্টেশন নির্মাণের প্রাথমিক কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২০১৪ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রস্তাবিত পেট্রোল পাম্প বা ফিলিং স্টেশনটি সীমান্তের শূন্য লাইন হতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপন করা যাবে না। অথচ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার মেডিকেল বাজার সংলগ্ন এলাকায় ভোলাহাট ফিলিং স্টেশন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। তথ্য রয়েছে, এই পেট্রোল পাম্প বা ফিলিং স্টেশনটি নির্মাণ করতে ইতোমধ্যে পুকুর ভরাট ও আম বাগান কেটে সীমানা প্রাচীর দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, মামলা চলমান থাকা অবস্থায় সেই জায়গায় রাষ্টের আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন ভঙ্গ করে ভোলাহাট ফিলিং স্টেশন নির্মাণ করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ। এছাড়াও পাশের একটি জমি দখল করে সীমানা প্রাচীর দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তাদের দাবি, ভোলাহাট উপজেলায় কোন পেট্রোল পাম্প বা ফিলিং স্টেশন নেই। তাই সঠিকভাবে বিরোধহীন ও আইন মেনে ভোলাহাট উপজেলায় একটি ফিলিং স্টেশন নির্মাণের অনুমতি দেয়া হোক।
খালেআলমপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মমিন বলেন, শুনেছি এখানে পেট্রোল পাম্প হবে। তাই গত প্রায় ২ বছর থেকে এখানে নানারকম কার্যক্রম চলছে। এখানে একটি পুকুর ছিল। তা ভরাট করা হয়েছে। এছাড়াও আমের বাগানে থাকা সকল আমগাছ কেটে সীমানা প্রাচীর দেয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ পেট্রোল পাম্প নির্মাণকাজ শেষ হবে তা আমাদের জানা নেই।
আইনাল হক জানান, যেখানে পেট্রোল পাম্প নির্মাণ হচ্ছে এখান থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তের শূন্য রেখা বা জিরো লাইনের দুরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার। দীর্ঘদিন ধরে এই পেট্রোল পাম্পটি নির্মাণ করতে কাজ চলছে। কিন্তু মাঝেমধ্যে শুনছি হবে, আবার শুনছি হবে না। ভোলহাট ফিলিং স্টেশনের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষা বাড়ি রোজা আলীর। তার স্ত্রী মানসুরা বেগম বলেন, আমাদের পৈতৃক ভিটায় দীর্ঘদিন ধরে আমরা বসবাস করছি। কিন্তু পেট্রোল পাম্প নির্মাণ করতে গিয়ে আমাদের বসতবাড়ির দখল করেছে এর মালিক আব্দুল লতিফ। এমনকি মাস্তান-গুন্ডা বাহিনী এনে জোরপূর্বক দখল করে সীমানা প্রাচীর দিয়েছি তারা। পুলিশের কাছে আইনী সহযোগিতা চাইলেও আমরা তা পায়নি। কারন তাদের অনেক টাকা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, বাংলাদেশ সরকার সবসময়ই জ্বালানি তেলে বিপুল পরিমাণ ভুর্তকি দেয়। ফলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের চাইতে আমাদের দেশে তেলের দাম কম থাকে। তাই সীমান্ত দিয়ে যাতে তেল পাচার না হয়, সেলক্ষ্যে ২০১৪ সালে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের শূন্য রেখার ৮ কিলোমিটারের মধ্যে ফিলিং স্টেশন নির্মাণ করা যাবে না উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন দেয়। অথচ কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ভোলাহাটে শূন্য রেখার ২ কিলোমিটারের মধ্যে একটি ফিলিং স্টেশন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। দুই দেশের শূন্য রেখাঘেঁষা এলাকা ভোলাহাটের বজরাটেক গ্রামের মশিউর রহমান টনি শূন্য রেখায় দাঁড়িয়ে বলেন, নির্মাণাধীন পেট্রোল পাম্পের উত্তর-পূর্ব দিকে বজরাটেক সীমান্তের শূন্য রেখার দুরত্ব ২ কিলোমিটার এবং উত্তর-পশ্চিম দিকের গীলাবাড়ি সীনান্তের শূন্য রেখার দুরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার।
ভোলাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আফরাজুল হক বাবু জানান, আমাদের উপজেলায় কোন পেট্রোল পাম্প না থাকায় অনেক দূরে যেতে হয়। তাই আমাদের প্রাণের দাবি, ভোলাহাটে একটি পেট্রোল পাম্প স্থাপন করা হোক। তবে তা অবশ্যই কোন মামলা চলমান থাকা, জোরপূর্বক দখল করা জমিতে ও আইন অমান্য করে সীমান্তবর্তী এলাকায় নয়। আমরা চাই, একটি সঠিক ও বিরোধহীন জায়গায় ও সকল নিয়ম মেনে একটি পেট্রোল পাম্প স্থাপন করা হোক।
নির্মাণাধীন ভোলাহাট ফিলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী আব্দুল লতিফ বলেন, সকল নিয়ম মেনেই পেট্রোল পাম্প নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। যেহেতু জনগণের চাহিদা রয়েছে, সেহেতু সীমান্তের বিষয়টি ছাড় দেয়া যেতে পারে। এমন সীমান্তঘেঁষা অনেক পেট্রোল পাম্প রয়েছে। এ বিষয়ে কথা পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেডের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বললেও তারা কোন তথ্য দিতে পারেননি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) এটিএম সেলিমের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন মুঠোফোনে বলেন, ফিলিং স্টেশন বা পেট্রোল পাম্প নির্মান করতে জেলা প্রশাসনের সুপারিশ বাধ্যতামূলক। তবে সীমান্তবর্তী কোন এলাকায় এমন পেট্রোল পাম্প নির্মাণ হলে তার পক্ষে কোন অনাপত্তিপত্র বা সুপারিশ করবে না জেলা প্রশাসন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris