শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিশ্বে মিথেন গ্যাসের সর্বোচ্চ নির্গমন অঞ্চল দেখালো নাসা

Paris
Update : শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২

এফএনএস : ইএমআইটি যত জায়গায় জমাট বাঁধা মিথেন গ্যাস চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে কয়েকটি এযাবৎকালের মধ্যে সর্ববৃহৎ – মহাকাশ থেকে আগে এমন কিছু ধরা পড়েনি। মধ্য-এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৫০টির বেশি মিথেন গ্যাসের ‘সুপার-এমিটার’ এলাকা চিহ্নিত করেছে নাসার স্পেকট্রোমিটার। নাসা গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) ‘ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার’ বসিয়েছে। এর মূল লক্ষ্যই ছিল বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকা ধুলা আর বিশ্বের যে অঞ্চলগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ হয় সেগুলো খুঁজে বের করা।

রয়টার্স বলছে, নাসার স্পেকট্রোমিটার যে এলাকাগুলোকে মিথেন গ্যাসের ‘সুপার-এমিটার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তার কয়েকটি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আগে থেকে জানা থাকলেও বাকিগুলো নতুন আবিষ্কার; বেশ কয়েকটি তেল ও গ্যাসক্ষেত্র আছে এর মধ্যে। স্পেকট্রোমিটার নির্মাণের পেছনে নাসার মূল লক্ষ্য ছিল, পৃথিবীর মরুভূমি আর শুষ্ক অঞ্চলগুলো থেকে আসা যে ধুলোবালি বায়ুমণ্ডলে ভাসতে থাকে তার খনিজ কাঠামো চিহ্নিত করা। ‘আর্থ সারফেস মিনারেল ডাস্ট ইনভেস্টিগেশন (ইএমআইটি)’ প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাযূমণ্ডলে ভেসে ওঠা ধুলাবালি ভূপৃষ্ঠের তাপ বায়ুমণ্ডলের মধ্যে আটকে রাখতে ভূমিকা রাখে নাকি প্রতিফলিত করে- সেটি বোঝার চেষ্টা করছেন গবেষকরা।

এর মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধুলার ভূমিকা পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করছে নাসা। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা মিথেন গ্যাসের ‘সুপার-এমিটার’ আবিষ্কার প্রসঙ্গে নাসার ‘জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরি (জেপিএল)’-এর গবেষকদের ভাষ্য, মিথেন গ্যাস এমন একটি অভিনব কাঠামোয় ইনফ্রারেড আলো শোষণ করে, যা ইএমআইটি স্পেকট্রোমিটারের জন্য চিহ্নিত করা খুবই সহজ। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪২০ কিলোমিটার উচ্চতায় ভাসমান আইএসএসে চড়ে প্রতি ৯০ মিনিটে একবার করে পৃথিবীকে ঘিরে চক্কর দিচ্ছে স্পেকট্রোমিটার। ফুটবল মাঠের সমান তুলনামূলক ছোট স্থান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি একই সময়ে বেশ কয়েক মাইল এলাকা জুড়ে নজর রাখার সক্ষমতাও আছে এর। “ইএমআইটি যত জায়গায় জমাট বাঁধা মিথেন গ্যাস চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে কয়েকটি এযাবৎকালের মধ্যে সর্ববৃহৎ – মহাকাশ থেকে পর্যবেক্ষণে আগে এমন কিছু ধরা পরেনি,” বলেছেন জেপিএলের গবেষক দলের সদস্য অ্যান্ড্রু থর্প।পঁচে যাওয়া জৈবিক বর্জ্য আর পাওয়ার প্ল্যান্ট মিথেন গ্যাসের সবচেয়ে বড় উৎস বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে নাসা। মানব সভ্যতার কারণে বায়ুমণ্ডলে যে গ্রিনহাউজ গ্যাস ছড়িয়ে পরছে তার মধ্যে সামান্যই মিথেন গ্যাস। কিন্তু সমান ওজনের কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের তুলনায় মিথেনের তাপ ধরে রাখার সক্ষমতা কয়েক গুণ বেশি।

তবে, ইতিবাচক দিক হচ্ছে কার্বন ডাইঅক্সাইড টানা কয়েক শতক বায়ুমণ্ডলে টিকে থাকলেও মিথেন বায়ুমণ্ডলে টিকে থাকে কম-বেশি এক দশক। অর্থাৎ, মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এর ফলাফলও পাওয়া যাবে তুলনামূলক দ্রুত। মঙ্গলবারেই ‘সুুপার-এমিটার’ অঞ্চলগুলোর ছবি প্রকাশ করেছে নাসার জেপিএল। এর একটি ছবিতে তুর্কমেনিস্তানের তেল ও গ্যাসক্ষেত্র থেকে নিঃসরণ হওয়া মিথেন গ্যাস উঠে এসেছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, এর মধ্যে এক জায়গায় জমাট বাাঁধা মিথেন গ্যাসের দৈর্ঘ্য ছিল ৩২ কিলোমিটারের বেশি। নাসার গবেষকদের অনুমান, তুর্কমেনিস্তানের উৎসগুলো থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৫০ হাজার ৪০০ কিলোগ্রাম মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে। মিথেন গ্যাসের বড় দুটি উৎসের সন্ধান মিলেছে নিউ মেক্সিকো এবং ইরানে। এ দুটি উৎস থেকে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২৯ হাজার কেজি মিথেন গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে নাসা। মজেপিএলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিথেন গ্যাসের উৎস হিসেবে এই দুটি অঞ্চলের ব্যাপারে আগে থেকে জানা ছিল না বিজ্ঞানীদের। টানা এক বছরের মিশন শেষে ইএমআইটি ভূপৃষ্ঠে মিথেন গ্যাসের কয়েকশ বড় বড় উৎস আবিষ্কার করবে বলে আশা করছেন নাসা।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris