শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বোচ্চ ৭৫ কি.মি বেগে হানা দেয়া সিত্রাং-এ ২০ জনের মৃত্যু

Paris
Update : মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২২

বাংলাদেশের উপকূলে তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার বেগে এটি আঘাত হেনেছিল। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে গাছ পড়ে ও নৌকাডুবিতে বিভিন্ন জেলায় অন্তত ২০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরগুনা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, শরীয়তপুর ও নড়াইলে একজন করে, সিরাজগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও গোপালগঞ্জে দুইজন করে কুমিল্লায় তিনজন এবং ভোলায় চারজরনের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
ঢাকা : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে রাজধানীর হাজারীবাগে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। একটি বহুতল ভবনের ছাদের রেলিং ধসে পাশের সড়কে পড়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক রিকশাচালক (৫০) নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় রিকশাযাত্রী সিমা বেগম(৪৫) আহত হয়েছে। গত সোমবার রাত পৌনে ৮টার দিকে হাজারীবাগ মনেশ্বর রোড খলিল কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ঘটনাটি ঘটে। আহত অবস্থায় পথচারীরা তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক রাত পৌনে ৯টার দিকে মৃত রিকশাচালককে মৃত ঘোষণা করেন। আহত সিমা বেগম জানান, তাদের বাসা হাজারীবাগ বোরহানপুর এলাকায়। বিজিবির পাঁচ নম্বর গেটের পাশে চায়ের দোকান করেন। রাতে দোকান বন্ধ করে রিকশাযোগে বাসায় ফিরছিলেন। মনেশ্বর রোড খলিল কমিউনিটি সেন্টারের পাশে আসলে দেয়ালের কিছু অংশ ভেঙে রিকশার উপর পড়ে। এতে তিনি আহত হন। কিন্তু রিকশাচালক মারা যান। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, ওই অজ্ঞাত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার মাথায় আঘাত ছিল। তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। আহত সিমার মাথায় ও হাতে আঘাত রয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদিকে পথচারী মো. কনক জানান, ঘটনার সময় ওই এলাকা বিদ্যুৎ ছিল না। অন্ধকারে এক ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তবে ঘটনাস্থলে কিছু ইটের স্তুপ পড়ে থাকতে দেখি। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালেদ জানান, হাজারীবাগ এলাকায় একটি ভবনের উপর থেকে একটা অংশ ভেঙে পড়ে। ভবনটির উপরে একটি টিনশেড ঘর ছিল। সেখান থেকে দেওয়ালের কিছু অংশ ভেঙে রাস্তার উপরে পড়ে।
মুন্সিগঞ্জ: লৌহজংয়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গাছ ভেঙে বসতঘরে পড়ে আসমা বেগম আশু (২৮) নামে এক গৃহবধূ ও তার মেয়ে সুরাইয়ার (৩) মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ওই নারীর ছেলে আরাফাত (১০) ও স্বামী আবদুর রাজ্জাক (৩৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। গত সোমবার রাতে উপজেলার কনকসার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে। পরে রাজ্জাককে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর আরাফাতকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, সিত্রাংয়ের প্রভাবে লৌহজংয়ে গত সোমবার দিনভর বৃষ্টি ও প্রবল বেগে ঝড় হয়। সন্ধ্যার পর বাতাসের গতি বাড়তে থাকে। রাতে উপজেলার কনকসার গ্রামে ঝড়ে টিনের তৈরি ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে। এতে বসতঘর বিধ্বস্ত হয়ে নিচে আবদুর রাজ্জাক ও তার স্ত্রী-সন্তানরা চাপা পড়েন। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে স্থানীয় মুসল্লিরা ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার পথে চাপা পড়া অবস্থায় তাদের দেখতে পান। পরে সেখান থেকে রাজ্জাকের স্ত্রী আসমা ও মেয়ে সুরাইয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় জীবিত অবস্থায় আবদুর রাজ্জাক ও তার ছেলে আরাফাতকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। লৌহজং থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়েবীর ঝড়ে গাছ পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত সোমবার রাতে বসতঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে। এতে ঘর বিধ্বস্ত হয়ে নিচে চাপা পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার একটি শিপইয়ার্ড এলাকা থেকে তিন মাস বয়সী শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে তার লাশ ভেসে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় গাউসিয়া কমিটির মানবিক টিমের সহায়তায় উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের কদমরসুল আছোয়া শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। সীতাকুণ্ড কুমিরা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. মাহবুবজানান, সকাল সাড়ে ১০টায় শিপইয়ার্ড এলাকা থেকে গাউসিয়া কমিটির সহায়তায় শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে লাশ ভেসে এসেছে। উদ্ধারের পর লাশটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখন পরিচয় পাওয়া যায়নি। গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার বলেন, সীতাকুণ্ডের একটি শিপইয়ার্ড এলাকায় স্থানীয় লোকজন শিশুর লাশ দেখতে পেয়ে গাউসিয়া কমিটির মানবিক টিমের সদস্যদের খবর দেন। এরপর তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
ভোলা: ভোলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সদর, দৌলতখান, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত পাঁচজন। এর মধ্যে গত সোমবার রাতে তিনজন ও গতকাল মঙ্গলবার ভোরের দিকে একজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চেওয়াখালী গ্রামের মো. মফিজুল ইসলাম (৬০), দৌলতখান পৌর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের খাতিজা বেগম (৬০), চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের মো. মনির হোসেন (৩০) ও লালমোহন উপজেলার লর্ডহাডিঞ্জ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রাবেয়া বেগম (২৫)। এর মধ্যে সদরের মফিজুল ইসলাম একটি গাছ ভেঙে বসতঘরের ওপরে পড়লে চাপা পড়ে নিহত হন। দৌলতখানের খাতিদা বেগমও ঘরের ওপর গাছ পড়ে চাপায় নিহত হন। এ ছাড়া চরফ্যাশনের হাজারীগঞ্জে মনির মোটরসাইকেল করে যাওয়ার সময় গাছের ডাল ভেঙে শরীরে পড়ে নিহত হন এবং লালমোহনের রাবেয়া বেগম জোয়ারের পানিতে ডুবে নিহত হন। ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম ভোলা সদর ও দৌলতখানের হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল নোমান তার উপজেলায় নিহতের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক ঘর পুরো বিধ্বস্ত ও এক হাজারের অধিক ঘর আংশিক বিধস্ত হয়েছে। অন্যদিকে, লালমোহন থানার ওসি মো. মাহাবুবুর রহমান তার থানায় একজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কুমিল্লা: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে গাছ উপড়ে পড়ে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের এক সন্তান মারা গেছেন। গত সোমবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার হেশাখাল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- ওই এলাকার মো. নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী সাথি আক্তার ও মেয়ে লিজা আক্তার। গতকাল মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় হেশাখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার মজুমদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান মেহবুব বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে খবর পেয়েছি গাছ পড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ গিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালায়। হেসাখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার বলেন, রাতে ঝোড়ো বাতাসে তাদের ঘরে গাছ পড়ে।
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ঝড়ে নৌকাডুবিতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার সয়দা ইউনিয়নের পূর্ব মোহনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- পূর্ব মোহনপুর গ্রামের খোকন সেখের স্ত্রী আয়েশা খাতুন (২৮) ও তার ছেলে আরাফাত হোসেন (২)। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে দুই ছেলেসহ এক গৃহবধূ মোহনপুর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নৌকাযোগে পূর্ব মোহনপুর গ্রামে ফিরছিলেন। পথে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাডুবিতে ঘটনাস্থলে এক ছেলের মৃত্যু হয়। এ সময় অপর ছেলে ও তার মাকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মাকেও মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সয়দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলাম বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নৌকা ডুবে মা ও শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এতে ওই পরিবারে শোকের মাতম চলছে।
গোপালগঞ্জ: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গাছচাপায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাতে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচকাহনিয়া ও বাঁশবাড়িয়ার চরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচকাহনিয়া গ্রামের রেজাউল খার স্ত্রী সারমিন বেগম (২৫) ও বাঁশবাড়িয়ার চরপাড়া গ্রামের হান্নান তালুকদারের স্ত্রী রোমেছা বেগম (৫৮)। গতকাল মঙ্গলবার সকালে টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি মুহাম্মদ আবুল মনসুর ওই দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওসি বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে রাত সোয়া ৮টার দিকে উপজেলার বাঁশবাড়িয়ার চরপাড়া গ্রামের হান্নান তালুকদারের ঘরের ওপর চম্বল গাছ উপড়ে পড়ে। এতে ঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে গাছচাপায় তার স্ত্রী রোমেছা বেগম (৫৮) মারা যান। ওসি আবুল মনসুর বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে টুঙ্গিপাড়ার পাঁচকাহনিয়া গ্রামে রেজাউল খার বাড়ির পাশে থাকা খেজুর গাছ তার বসতঘরের ওপড়ে পড়ে। এতে ঘরের মধ্যে থাকা তার স্ত্রী সারমিন বেগম গাছচাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যান।
বরগুনা: বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট ঝোড়ো বাতাসে বসতঘরে গাছ উপড়ে পড়ে আমেনা খাতুন নামে ১১৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাত ৮টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার সোনাখালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই বৃদ্ধার স্বজনরা জানান, গত সোমবার রাত ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া ঝড়ো বাতাসে তাদের বাড়ির পাশে থাকা চাম্বল গাছ উপড়ে বসতঘরের ওপর পড়ে। এ সময় ঘর ও গাছের নিচে চাপা পড়ে আমেনা খাতুন ঘটনাস্থলেই মারা যান। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় মৃতের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে জেলা প্রশাসন। মৃতের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হবে।
নড়াইল: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝড়ে নড়াইলে গাছের ডাল পড়ে মর্জিনা বেগম (৩২) নামে এক গৃহপরিচারিকার মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার সকালে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, মর্জিনা বেগম বাগেরহাটের স্থায়ী বাসিন্দা। স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ছেলে জিহাদকে (১১) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লোহাগড়া পৌর এলাকার রাজুপুর গ্রামের আবদুল গফ্ফারের বাড়িতে ভাড়া থেকে বিভিন্ন বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন তিনি। অন্যান্য দিনের মতো গত সোমবার সকালে বাসা থেকে কাজের উদ্দেশে বের হন তিনি। পথে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকায় পৌঁছালে মেহগনি গাছের ডাল ভেঙে মাথায় পড়ে গুরুতর আহত হয় মর্জিনা। স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। লোহাগড়া থানার ওসি মো. নাসিরউদ্দিন বিষয়টির নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মৃতের স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। স্বজনরা এলে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
পটুয়াখালী: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গত সোমবার ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সারাদেশের মতো পটুয়াখালীর ওপর দিয়েও ঝড়-বৃষ্টি বয়ে গেছে। ঝড়ের কবলে পড়ে রাতে পটুয়াখালী সদর উপজেলায় লোহালিয়া নদীতে একটি নৌকা ডুবে যায়। এতে নিখোঁজ হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় আরও দুইজন আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে পটুয়াখালী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরিরা নদীতে অভিযান চালিয়ে নিখোঁজ নুরুলকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। নুরুল ইসলাম সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়নের প্রত্যাপপুর এলাকার বাসিন্দা। এদিকে কলাপাড়া ডালবুগঞ্জ এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ে রাশেদা বেগম (৫০) নামে এক নারী আহত হয়েছেন। তিনি একই এলাকার মেনাজ ব্যাপারির স্ত্রী। তাকে উদ্ধার করে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে মহিপুর থানা পুলিশ। এছাড়া জেলার গলাচিপা উপজেলার বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন চরবিশ্বাসের বটতলা বাজার হাজি মেহের আলী মসজিদের ইমাম মো. ইসমাইল গাছের নিচে চাপা পড়ে আহত হয়েছেন। পরে খবর পেয়ে গলাচিপা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
শরীয়তপুর: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গত সোমবার সারাদেশের মতো শরীয়তপুরের ওপর দিয়েও বৃষ্টিসহ ঝড় বয়ে গেছে। ঝড়ের রাতে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মার মধ্যে অবস্থিত দুর্গম কুন্ডেরচর ইউনিয়নের চিটারচরের সোহরাব মল্লিকের কান্দি গ্রামের হালান মুসল্লির টিনের ঘরের ওপর একটি মোটা গাছ ভেঙে পড়ে। এসময় গাছ ও টিনের চালার নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই তার স্ত্রী শাফিয়া বেগম (৬০) মারা যান। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কুন্ডেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন বেপারী বলেন, আমরা গত সোমবার থেকে প্রতিনিয়ত মাইকিং করে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বলেছি। কিন্তু শাফিয়া রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে না গিয়ে নিজেদের ঘরেই ছিলেন। রাতে গাছচাপায় তিনি মারা গেলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এদিকে রাস্তার মধ্যে অসংখ্য বাঁশঝাঁড় আর বড় বড় গাছপালা ভেঙে পড়ে থাকায় জাজিরার বিভিন্ন জায়গায় যানবাহন আটকা পড়েছে। বিশেষ করে জাজিরা থেকে নড়িয়া যাতায়াতের আঞ্চলিক সড়কটির বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় বড় গাছ পড়ে থাকায় সকাল থেকে আটকে আছে এ রুটে চলাচলকারী বাসগুলো। গাছগুলো দ্রুত সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে প্রবল বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শীতকালীন বিভিন্ন শাক-সবজির ক্ষেতের। পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। গত সোমবার দিনে বিদ্যুৎ সংযোগ থেমে থেমে বিচ্ছিন্ন থাকলেও রাত থেকে পুরোই বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা। বহু যায়গায় ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎতের তার ছিঁড়ে পড়ে রয়েছে যত্রতত্র। যা দ্রুত ঠিক করার জন্য সকাল থেকেই কাজ করে যাচ্ছে ইন্টারনেট ক্যাবল অপারেটররা ও বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জামাল হোসাইন বলেন, আমরা আগেই কৃষকদের ২৮ তারিখের আগে ফসল বুনতে নিষেধ করে দিয়েছিলাম, তবুও যারা বুনেছেন, তারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের জাজিরা জোনাল অফিসের ডিভিশনাল জেনারেল ম্যানেজার আশরাফুল আলম খান বলেন, আমরা এরই মধ্যেই ৩৩ কেভি চালু করতে পেরেছি। আশা করছি, সন্ধ্যার মধ্যেই জাজিরার সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে সক্ষম হবো। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান সোহেল বলেন, আমরা রোববার থেকেই বারবার সবাইকে সতর্ক করেছি এবং আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় যেতে মাইকিং করেছি। আমরা পর্যাপ্ত খাবারের পাশাপাশি প্রায় ৩৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছিলাম। অনেককে একপ্রকার জোর করেই আশ্রয় কেন্দ্রে এনেছি। আমাদের প্রায় ১১০০ লোক আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবুও অনেকেই থেকে গেছেন নিজ বাড়িতে, ফলে এ অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নোয়াখালী: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে রান্নাঘরের ওপরে গাছ উপড়ে পড়ে সানজিদ আফ্রিদি (১) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিশুর বাবা অ্যাডভোকেট মো. আবদুল্লাহ বলেন, রাত ৮টার দিকে প্রচণ্ড ঝড়ে গাছ উপড়ে রান্নাঘরে থাকা মা-ছেলেকে চাপা দেয়। আহত অবস্থায় দুজনকে ঢাকার নিউরো সায়েন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে শিশু সানজিদকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। তার মা এখনো চিকিৎসাধীন। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া, উপকূলীয় সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও সদর এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও মাছের ঘের ভেসে গেছে। ঝোড়ো বাতাসে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির আমন ফসল ও ২৫০ হেক্টর জমির উঠতি শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। সোমবার রাতে সুবর্ণচর উপজেলার পূর্বচবাটা গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শিশুটির মা সানজিদা খানম (২৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে সুবর্ণচরে বসতঘরের ওপর গাছ পড়ে একটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ভেতরে থাকা এক বছরের শিশু মারা গেছে। এ ছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে কিছু ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ হাসান খান জানান, জেলার প্রায় চার লাখ অধিবাসী দুর্যোগের কবলে পড়েছে। এতে এক হাজার ৩০৩ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ৩৩টি আংশিক ও ২৭০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের উপকূলে তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার বেগে এটি আঘাত হেনেছিল। এর প্রভাবে সারাদেশেই বৃষ্টি হয়েছে। তবে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে বরিশাল ও মাদারীপুরে। ঘূর্ণিঝড়টির ব্যাপ্তি ছিল ৪০০ কিলোমিটার।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris