শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জয় দিয়ে বিশ্বকাপ বাংলাদেশের

Paris
Update : সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২২

সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশের বিপক্ষে সম্ভাবনায় নিজেদের এগিয়ে রেখেছিল নেদারল্যান্ড। এমনও বলেছে এই ম্যাচ জিতলে অঘটন হবে না! কিন্তু ২২ গজের লড়াই তো আর কথা দিয়ে জেতা যায় না। বরং প্রতিপক্ষকে শুরুতেই চেপে ধরে প্রথম ম্যাচ ৯ রানে জিতেছে সাকিব আল হাসানের দল। এই নৈপুণ্যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১৫ বছরের জয় খরাও কাটলো বাংলাদেশের। ১৪৫ রানের লক্ষ্য দেওয়া বাংলাদেশের জয়ের মূল কারিগরই ছিলেন পেসার তাসকিন আহমেদ। প্রথম দুই বলে দুই উইকেট তুলে চাপে ফেলে দেন ডাচদের। সেই চাপের কাছে মাথা নত করে রান আউটে পড়েছে আরও দুই উইকেট। তাতে ১৫ রানের মাঝে ৪ উইকেট পড়েছে। অধিনায়ক স্কট অ্যাডওয়ার্ডস ও কলিন অ্যাকারম্যান ৪৪ রানের জুটিতে ইনিংস মেরামত করলেও লাভ হয়নি তাতে। পরে অ্যাকারম্যান তো লড়াকু এক ফিফটিতে চেষ্টা করে গেছেন। ৪৮ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬২ রান করা এই ব্যাটারকে দলীয় ১০১ রানে থামিয়েছেন তাসকিন। এর পরেও লড়াই চালিয়ে গেছে ডাচ দল। যেখানে শুরুর ধাক্কায় আরও আগেই বাংলাদেশের জয়ের কথা। সেখানে শেষটায় দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ব্যবধান কমাতে অবদান রাখেন পল ফন মিকারেন। তার ১৪ বলে ২৪ রানের ক্যামিও ইনিংস নেদারল্যান্ডকে ১৩৫ রান পর্যন্ত নিয়ে গেছে! শেষ বলে তার উইকেট নিয়ে নেদারল্যান্ডকে অলআউট করেছেন সৌম্য সরকার। জয়ের পথে অবদান রাখা তাসকিন ২৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন। যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ১৫ রানে দুটি নেন হাসান মাহমুদ। ৩২ রানে একটি উইকেট নেন সাকিব আল হাসান, ২৯ রানে সমসংখ্যক উইকেট সৌম্য সরকারেরও। সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৪৪/৮ (আফিফ ৩৮, শান্ত ২৫, মোসাদ্দেক ২০*; ফন মিকারেন ২/২০, ডি লিড ২/২৯)নেদারল্যান্ড ২০ ওভারে ১৩৫/১০ (অ্যাকারম্যান ৬২, অ্যাডওয়ার্ডস ১৬; তাসকিন ৪/২৫, হাসান ২/১৫)
ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়া ডাচদের অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে শারিজ আহমেদের বিদায়ে। এরপর লড়াই করতে থাকা কলিন অ্যাকারম্যানও ফিরেছেন ৪৮ বলে ৬২ রান করে। দুটি উইকটেই নিয়েছেন তাসকিন।
বৃষ্টি বিরতির পর অ্যাকারম্যানের সঙ্গে কিছুক্ষণ ধরে খেলার চেষ্টায় ছিলেন লগান ফন বিক। অ্যাকারম্যান প্রান্ত আগলে ফিফটি তুলে নিলেও যোগ্য সঙ্গী কাউকে পেলেন না। তার একার লড়াইয়ের সময় বিককে (২) সাজঘরে পাঠিয়েছেন হাসান মাহমুদ। ১৫ রানে ডাচদের ৪ উইকেট পতনের পর ইনিংস মেরাতে অবদান রাখছিলেন কলিন অ্যাকারম্যান ও স্কট অ্যাওয়ার্ডস। মাথা ব্যথার কারণও হয়ে দাঁড়ান তারা। ৪৪ রানের এই জুটি ভেঙে স্বস্তি এনে দিয়েছেন সাকিব। ১১.৩ ওভারে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়েছিলেন এডওয়ার্ডস। আগেই দাঁড়ানো হাসান মাহমুদের হাতে জমা পড়ে তা। ফেরার আগে ডাচ অধিনায়ক ২৪ বলে ১৬ রান করেছেন।পরের ওভারে নতুন নামা টিম প্রিঙ্গলকে তো বোল্ডই করে দেন হাসান মাহমুদ। ডাচ ব্যাটার ১ রানে ফিরেছেন। এক বল পর বৃষ্টি নামলে বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে খেলা। তার পর খেলা শুরু হতে সময়ও লাগেনি।
১৪৫ রানের লক্ষ্যে ১৫ রানে পড়েছে নেদারল্যান্ডের ৪ উইকেট। শুরুতেই খেই হারানোয় পাওয়ার প্লেতেও সেভাবে রান উঠেনি। ৬ ওভারে ৪ উইকেটে জমা পড়ে ৩২।
১৪৫ রানের লক্ষ্যে তাসকিন আহমেদের জোড়া আঘাতের পর খেই হারায় নেদারল্যান্ডের ইনিংস। সাকিবের ওভারে হারিয়েছে আরও দুই উইকেট। দুটিই রানআউটে। প্রথম বলে সাকিবকে ছক্কা হাঁকান ম্যাক্স ও’ডাউড। পরের বলে বাড়তি রান নেওয়ার তাড়া দেখাতে গিয়ে রান আউট ডাচদের বিপজ্জনক এই ব্যাটার। তিনি ৮ রানে ফিরেছেন। এক বল বিরতি দিয়ে টম কুপারও করেন একই ভুল। অসাধারণভাবে নুরুল হাসান স্টাম্প ভেঙে দেওয়ায় রান আউট হন এই ব্যাটারও। তাতে ১৫ রানের মধ্যে পড়েছে চতুর্থ উইকেট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডকে ১৪৫ রানের লক্ষ্য দিয়ে শুরুর ওভারেই তাদের কাঁপিয়ে দেয় বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ প্রথম দুই বলে সাজঘরে পাঠিয়েছেন বিক্রমজিৎ সিং ও বাস ডি লিডকে। প্রথম ডেলিভারিতে বিক্রমকে ইয়াসিরের তালুবন্দি করার তাসকিন। পরের বলে বাস ডি লিডকে সোহানের গ্লাভসবন্দি করিয়েছেন
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে ১৫ বছর ধরে জয়হীন বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে সুপার টুয়েলভে জয় পেতে তাদের ১৪৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছে টাইগাররা। হোবার্টে টস হেরে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ১৪৪ রান সংগ্রহ করেছে।
বরাবরের মতো এই ম্যাচেও লিটন দাসকে ওপেনিংয়ে দেখা যায়নি। তার জায়গায় সৌম্য সরকার ও নাজমুল শান্ত খারাপও করেননি। ৪৩ রান যোগ করেন তারা। সৌম্যর বিদায়ে এই জুটি ভাঙতেই দ্রুত বিপদেও পড়ে বাংলাদেশ। ৬৩ রানে ফেরেন শান্ত, লিটন ও সাকিব। ৭৬ রানে ইয়াসির আলী ফিরলে চাপটা বেড়ে যায় ভীষণ। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলতে বড় অবদান আফিফ হোসেনের। তার সর্বোচ্চ ৩৮ রানে শেষ পর্যন্ত স্কোরটা ভালো পর্যায়ে গেছে। সোহানের সঙ্গে মিলে ৪৪ রান যোগ করেছেন। তার পর অবশ্য শেষ দিকে ১২ বলে মোসাদ্দেক হোসেনের অপরাজিত ২০ রানের কার্যকরী ইনিংস স্কোরটাকে সমৃদ্ধ করেছে। ডাচদের হয়ে ২১ রানে দুটি উইকেট নেন ফর মিকারেন। ২৯ রানে দুটি নেন বাস ডি লিডও। একটি করে উইকেট নেন ফ্রেড ক্লাসেন, টিম প্রিঙ্গল, লগান ফন বিক ও শারিজ আহমেদ।
দারুণ ব্যাটিংয়ে রান তুলছিলেন আফিফ হোসেন। বিপদে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশকে উদ্ধার করছিলেন তিনিই। চাহিদা মিটিয়ে রানও তুলছিলেন।একবার জীবন পাওয়া আফিফের ১৮তম ওভারে আর শেষ রক্ষা হয়নি। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। ফেরার আগে ২৭ বলে করেছেন ৩৮ রান। তার ইনিংসে ছিল দুটি চার ও দুটি ছয়। তার পরেও রান বাড়িয়ে নেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মোসাদ্দেক। একপ্রান্তে রান তুলতে থাকলেও সঙ্গী তাসকিনের ইনিংস স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। দ্রুত সময়ে তিনিও ক্যাচ তুলে ফিরেছেন।
৭৬ রানে ৫ উইকেট পতনের পর দারুণ জুটিতে পরিস্থিতি সামাল দেন আফিফ। তাকে সঙ্গ দেন সোহান। ৪৪ রান যোগ করেন তারা। রানের গতি আরও বাড়াতে গিয়ে ১৭.১ ওভারে তালুবন্দি হন সোহান। ফেরার আগে ১৮ বলে মাত্র ১৩ রান করেছেন।
এর আগে ১৬তম ওভারে আবার ডিপ মিড উইকেটে আফিফ জীবনও পেয়েছেন। তার ক্যাচ ছেড়েছেন প্রিঙ্গল। প্রতিষ্ঠিত ব্যাটারদের বিদায়ে চাপ যখন চরমে, তখন ইনিংস গড়তে পারার মানসিকতা দেখতে পাওয়ার কথা। কিন্তু লিটন-সাকিবের বিদায়ের পর ইয়াসির তেমন কিছু দেখাতে পারলেন না। ফন মিকারেনের ইয়র্কারে বোল্ড হয়েছেন মাত্র ৩ রানে। তার বিদায়ে চাপটা আরও বাড়ে ইনিংসে। সৌম্য সরকার-নাজমুল হোসেন শান্তর বিদায়ের পর ছন্দপতন ঘটে ইনিংসে। রানের গতিও কমে যেতে থাকে তখন। ৮.৪ ওভারে ফন বিকের বলে লিটন (৯) বাজে শটে ফিরতেই বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের। পরের ওভারে সাকিবের ক্যাচ আউট বিপদ বাড়িয়ে দেয় আরও। লেগ স্পিনার শারিজের বল বাংলাদেশ অধিনায়ক উঠিয়ে মেরেছিলেন। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ফেরার আগে ৭ রান করেন সাকিব। তার পরে বৃষ্টি নামলে কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ থাকে খেলা। পরে খেলা শুরু হতে বেশি সময় লাগেনি। ওপেনার সৌম্য সরকারের বিদায়ে কমে আসে রানের গতি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মাত্র ৪ রান এসেছে। ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৪৭ রান নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। তবে পাওয়ার প্লে শেষ হতেই নাজমুল হোসেন শান্তর বিদায়ে আরও ছন্দপতন ঘটে ইনিংসে। টিম প্রিঙ্গলের স্পিনে শান্ত সুইপ করতে গিয়েছিলেন। বল উঠিয়ে দেওয়ায় তালুবন্দি হয়েছেন ২৫ রানে। তার ২০ বলের ইনিংসে ছিল ৪টি চার।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টস হেরে ব্যাট করতে নামলেও শুরুটা ছিল না বাংলাদেশের। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে নামেন দুই বাঁহাতি সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত। আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে সূচনা করেছিলেন। ৫ ওভারে ৪৩ রানও যোগ করে এই জুটি। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে সৌম্যকে বিদায় দিয়ে জুটি ভাঙেন বাস ডি লিড। তার শর্টার ডেলিভারিতে সৌম্য পুল করতে গিয়েছিলেন। ঠিকমতো সংযোগ না ঘটায় ১৪ বলে ১৪ রানে তালুবন্দি হয়েছেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল দুটি চার।
অস্ট্রেলিয়ার হোবার্টে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন। সুপার টুয়েলভে টস জিতে টাইগারদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে নেদারল্যান্ড। টস রিপোর্টে ধারাভাষ্যকারদের বলতে শোনা গেছে, পিচ ব্যাটারদের জন্য সহায়ক। স্পিনে সেভাবে সহায়তা হয়তো মিলবে না। তবে কিছু সুইং মিলতে পারে। টস জয়ের পর নেদারল্যান্ড অধিনায়ক স্কট অ্যাডওয়ার্ডস বলেছেন, ‘প্রথম পর্বে দেখেছি রান তাড়ায় দলগুলো যথেষ্ট ভালো করেছে।’
সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে মূল পর্ব বরাবরই ব্যর্থতার অপর নাম বাংলাদেশের। ২০০৭ সালের প্রথম আসরে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে মাটিতে নামিয়ে এনেছিল। এর পরের ছয়টি বিশ্বকাপ যেন বাংলাদেশের জন্য হাহাকারের নাম। আগের ব্যর্থতা ভুলিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সাকিবের দল সোমবার সকালে মাঠে নামছে। ম্যাচটি জয়ে শেষ করতে পারলে ১৫ বছর ধরে সুপার টুয়েলভে জয়হীন বাংলাদেশ পাবে ‘দ্বিতীয়’ জয়ের দেখা। নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে শুধু প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন মোস্তাফিজ। তিনি বিশ্বকাপ দিয়ে একাদশে ফিরেছেন। পেসার এবাদত হোসেন ও শরিফুল ইসলামের অবশ্য জায়গা হয়নি। তার পরেও বাংলাদেশ দলে তিন পেসার। মোস্তাফিজসহ বাকি দুইজন তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ।
বাংলাদেশ একাদশ : সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলী, নুরুল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন, তাসকিন, মোস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদ।
নেদারল্যান্ড একাদশ : ম্যাক্স ও’ডাউড, বিক্রমজিৎ সিং, বাস ডি লিড, টম কুপার, কলিন অ্যাকারম্যান, স্কট অ্যাডওয়ার্ডস (অধিনায়ক), টিম প্রিঙ্গল, লগান ফন বিক, শারিজ আহমেদ, ফ্রেড ক্লাসেন ও পল ফন মিকারেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris