বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

হেডমাস্টার ছাড়াই চলছে নওগাঁর ৩০০ প্রাইমারি স্কুল

Paris
Update : রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২২

সুমন আলী, নওগাঁ
নওগাঁয় ১১টি উপজেলায় ১৩৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (প্রাইমারি স্কুল) মধ্যে ৩০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। প্রধান শিক্ষকের (হেডমাস্টার) শূন্যতার কারণে বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পাঠদান কার্যক্রম ও দাপ্তরিক কাজ একসাথে পরিচালনা করতে গিয়ে বিদ্যালয়গুলোর কোমলমতি শিক্ষার্থীর পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে বর্তমান সরকারের শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ কার্যক্রম। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, জেলায় মোট ১ হাজার ৩৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ৩০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। নওগাঁ সদর উপজেলায় ২১জন, আত্রাই উপজেলায় ৩৮জন, ধামইরহাট উপজেলার ২৫জন, নিয়ামতপুর উপজেলায় ১৭জন, পত্নীতলা উপজেলায় ২৬জন, পোরশা উপজেলায় ১৩জন, বদলগাছী উপজেলায় ৩০জন, মহাদেবপুর উপজেলায় ৪৬জন, মান্দা উপজেলায় ৪২জন, রাণীনগর উপজেলায় ৩৫জন এবং সাপাহার উপজেলায় ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এ জেলায় ছাড়াও ৫শ’ ২০জন সহকারি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক শূন্যতার কারনে বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত সহকারি শিক্ষকদের উপর বাড়তি চাপ পড়ছে। তাদেরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। বেশি সংখ্যক ক্লাস নেয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের সঠিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।অতিরিক্ত পাঠদানের পাশাপাশিদাপ্তরিক কাজও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পালন করতে হচ্ছে। এতে করে প্রধান শিক্ষক শূন্যতার কারনে প্রশাসনিক কাজকর্মও ব্যাহত হচ্ছে।

অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের শূন্যতায় অনেকটা দায়সারাভাবে সহকারী শিক্ষকরা পাঠদানের নামে সময় পার করছেন। শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাচ্ছে না। পাঠ্যসূচি অনুযায়ী পড়ালেখা নিয়েও হতাশায় রয়েছেন তারা। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত ফলাফল অর্জনেও পিছিয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা। তাই মানসম্মত ও গুনগত শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দ্রুত এসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদগুলো পূরনের দাবি তাদের।

রানীনগর উপজেলার কনৌজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক কাইছার ইসলাম বলেন, আমার ছেলে বাড়িতে এসে প্রায় বলে কেউ স্কুলে হৈ-হুল্লোড় করলে পাশের কক্ষ থেকে শিক্ষক এসে তাদেরকে পড়া মুখস্ত করতে দিয়ে আবার সেই কক্ষে চলে যান। শিক্ষক সংকটের কারণে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার ফলে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো পাঠদানে মনোনিবেশ করতে পারছেন না। এমন পরিবেশে আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি।
সদর উপজেলা চকএনায়েত মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ইসমাইল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা আশা করি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এর দ্রুত সমাধান করবে কর্তৃপক্ষ।

নওগাঁ সদর উপজেলার চকএনায়েত মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শামীমা নাছরিন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে মোট ৩৭৭জন শিক্ষার্থী আছে। শিক্ষক রয়েছে ৯জন। প্রধান শিক্ষকসহ আরো ২জন শিক্ষক প্রয়োজন। তাই একসাথে এত ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদাস করাতে কিছু সমস্যাই পড়তে হয়।
এ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবু মো.বখতিয়ার ইনাম ববিন জানান, প্রধান শিক্ষকসহ আরো দুই শিক্ষক খুবই প্রয়োজন। এতগুলো শিক্ষার্থী পাঠদান মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষক সংকটের কারনে। অভিভাবক হিসেবে দাবি করছি যেন দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।
মান্দা উপজেলার চক শ্রীকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোজাহারুল ইসলাম বাদশা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ১৮৫জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক মোট ৫জন। দাপ্তরিক কাজে বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। প্রধান শিক্ষকের খুবই প্রয়োজন।

মহাদেবপুর উপজেলার শালগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাহিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রধান শিক্ষক না থাকার কারনে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে, মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে সমস্যা দেখা দিয়েছি। আমাকে দাপ্তরিক কাজ, শিক্ষা অফিসে বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের কাজে যেত হয়। আবার পাঠদানও করাতে হয়। আমাদের বিদ্যালয়ে মোট ১৩০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আমিসহ শিক্ষক ৫জন। প্রধান শিক্ষক একজন প্রয়োজন। চাহিদাপত্র উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে দেওয়া হয়েছে। প্রায় দুই বছরের মত হলো প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। এখন কবে নাগাত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হবে জানা নেই।

আত্রাই উপজেলার নবাবের তাম্বু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাফিউল ইসলাম জানান, প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে যতদ্রুত সম্ভব প্রধান শিক্ষক যেন নিয়োগ দেওয়া হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।

নওগাঁ জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, জেলায় মোট ১৩৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সেখানে ৩০০টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এ ছাড়া ৫২০জন সহকারি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকের পদগুলো শূন্য থাকার বিষয়টি আমরা শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছি। চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris