বৃহস্পতিবার

১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের কোনো নীতিমালা নেই

Paris
Update : মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০২২

দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের কোনো নীতিমালা নেই। তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের আইন থাকলেও তার মধ্যে কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই ওই আইনের আলোকে ভিসি নিয়োগ করা হয়। আর নিয়োগে নীতিমালা না থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সঠিক ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসে। বর্তমানে দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৩টি। তার মধ্যে ৪৯টিতেই উপাচার্য নিয়োগের কোনো নীতিমালা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।-এফএনএস

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কর্মকাণ্ড বিশেষ করে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনায় বিদ্যমান আইন ও বিধির কারণে ইউজিসি উত্থাপিত অভিযোগের যথাসময়ে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। মূলত বাংলাদেশে গবেষণা কার্যক্রমকে সেভাবে মূল্য দেয়া হয় না। আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের গবেষণা কার্যক্রম সঠিকভাবে মূল্যায়ন হয় না বলে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়োগে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রাধান্য পাচ্ছে। ফলে উপাচার্য নিয়োগের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। যার প্রভাব একাডেমিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমে পড়ছে।
সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপাচার্যসহ ওপরের দিকের দুই বা তিনটি পদে নিয়োগ ছাড়া অন্য কার্যক্রমগুলো সাধারণত কর্তৃপক্ষই করে থাকে।

আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম তদারকির জন্য ইউজিসি রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্যের কর্মকাণ্ডে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে। মূলত ৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সঠিক ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয় না।

যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আসছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান আইন ও বিধির কারণে উত্থাপিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ইউজিসির বিদ্যমান আইনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম সম্পর্কে সরাসরি কোনো তদন্ত কমিটি গঠনের ক্ষমতা নেই।

সূত্র আরো জানায়, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগের জন্য রিজেন্ট বোর্ড আছে। কিন্তু ওই বোর্ডের সদস্য হচ্ছেন রাজনৈতিক নেতা এবং স্থানীয় সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের আমলা। ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের ইচ্ছে প্রাধান্য পায়। অভিযোগ রয়েছে, তাদের কথামতো না চললে ওই জায়গায় কেউ দায়িত্ব পালন করতে পারে না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত রিজেন্ট বোর্ডে দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদদের নিয়োগ দিলে তাদের মেধাভিত্তিক পরামর্শে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উপকৃত হতে পারতো।

যদিও বঙ্গবন্ধুর করা অধ্যাদেশগুলোতে উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের জন্য একটি স্বচ্ছ ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা আর অনুসৃত হয়নি। অথচ একটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে একজন যোগ্য উপাচার্য নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা করার সুযোগ রয়েছে। আর তা করা গেলে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওই পদটিতে যোগ্য ব্যক্তিই দায়িত্ব পাবেন।

এ বিষয়ে উপাচার্য পরিষদের সাবেক সভাপতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. জসিমউদ্দিন আহমেদ জানান, দেশের কেবল ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে আইন রয়েছে। তবে অনেক সময় তাও সঠিকভাবে পরিপালন করা হয় না। উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোতে বিশেষভাবে জোর দেয়া দরকার তা অনেক ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে করা হয় না। নিয়োগের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষকের গবেষণা কার্যক্রম মূল্যায়ন করার দরকার থাকলেও তা সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। সেজন্য উপাচার্যদের ওপর যে অ্যাকাডেমিক দায়িত্ব থাকে অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয় না।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris