বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে রেলের শূন্যপদে লোক নিয়োগের উদ্যোগ

Paris
Update : শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২

এফএনএস : বাংলাদেশ রেলওয়ের বিপুলসংখ্যক অস্থায়ী কর্মীকে বাদ দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অথচ অস্থায়ী কর্মীরা ৫ থেকে ১৫ বছর ধরে রেলের বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তারা চাকরি হারানোর শঙ্কায় দিনাতিপাত করছে। ইতোমধ্যে তারা চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না। রেলওয়েও নিজস্ব তহবিল থেকে তাদের বেতন দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। আর আগামী ডিসেম্বরের পর থেকে তাদের চাকরি থাকছে না। অথচ রেলে প্রায় ৫ হাজার অস্থায়ী কর্মী নো ওয়ার্ক, নো পে ভিত্তিতে কাজ করে থাকে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত শ্রমিকরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। তারা রেলওয়ের গেটকিপার, পয়েন্টসম্যান, পোর্টার, ওয়েম্যান, টিএক্সআর খালাসি, ওয়ার্কশপ খালাসি, লোকো খালাসি, অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন অপারেশনাল কাজের দায়িত্ব পালন করে। এমনিতেই লোকবল সঙ্কটে রয়েছে রেলওয়ে। তার মধ্যে হঠাৎ করে বিপুলসংখ্যক শ্রমিককে বাদ দেয়া হলে রেলে অভিজ্ঞ লোকবলের সঙ্কট আরো প্রকট হবে।

সূত্র জানায়, রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকদের জন্য গত জুলাই থেকে কোনো বাজেট বরাদ্দ কিংবা চাকরির মঞ্জুরি হয়নি। ওই কারণে শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছে না। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে তারা কাজ করে যাচ্ছে। অস্থায়ী শ্রমিকরা ক্যাটাগরি-ভেদে ১৫ হাজার টাকা, ১৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১৭ হাজার ২৫০ টাকা করে বেতন পেয়ে থাকে। ওই হিসাবে দিনপ্রতি তারা ৫০০ টাকা, ৫৫০ টাকা এবং ৫৭৫ টাকা করে বেতন পেয়ে থাকে। কিন্তু সরকার আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করে। তাতে সেবাগ্রহণকারী ও সেবা ক্রয়কারীর বিষয়ে বিস্তারিত রূপরেখা দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেবা আদান-প্রদানে অর্থমূল্য নির্ধারণ করে দেয়। তারপর থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। রেলেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, রেলের ১০০ জন অস্থায়ী শ্রমিকের চাকরি গত জুলাইয়ে চলে গেলে শ্রমিকদের টনক নড়ে। চাকরি বাঁচাতে তারা মাঠে নামে। তার আগে রেল কর্তৃপক্ষ গত জুনে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি চিঠি দেয়। তাতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক নিয়োগের বিষয়টি পুনর্বিচেনার দাবি করা হয়। বলা হয়, রেলওয়েতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ হলে সেবা বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু তাতে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ রেলে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ হাজার ৮৯৬ জন অস্থায়ী শ্রমিক কাজ করে। তার মধ্যে ১০০ জনের চাকরি ইতোমধ্যে চলে গেছে। অবশিষ্ট লোক এখনো কাজ করছে। এ খাতে রেলকে ৬০ কোটি টাকা খরচ করতে হয়। তবে রেলে শ্রমিকের চাহিদা আরো বেশি। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে আরো অন্তত ১ হাজার শ্রমিক বেশি প্রয়োজন হবে।

এদিকে এ অবস্থা প্রসঙ্গে রেলওয়ে অস্থায়ী (টিএলআর) শ্রমিকরা বলছেন, রেল শ্রমিকরা রাজপথে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে। রেলের দক্ষ শ্রমিকদের ছাঁটাই করার অপচেষ্টা হচ্ছে। তা হলে স্টেশন এবং বিভিন্ন লেভেল ক্রসিং লোকবল সংকটে বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি ট্রেন অপারেশনাল কাজেও ব্যাঘাত ঘটবে। বাড়বে ট্রেন দুর্ঘটনাও। একসময় অস্থায়ী শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করা হতো। এখন উল্টো রুটি-রুজি কেড়ে নেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জিএম অসীস কুমার তালুকদার জানান, হঠাৎ করে ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গেলে লোকবলের সংকট তৈরি হতে পারে। অস্থায়ী শ্রমিকরা ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরিতে থাকছেন।

সার্বিক বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী জানান, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শূন্যপদে লোক নিয়োগের বিষয়টি রেলওয়ের নয়, সরকারের। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়ে পরিপত্রও জারি করা হয়েছে। রেলওয়ে কেবল সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris