বুধবার

২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে এভারগ্রীণ’র দখল করে নির্মাণাধীণ কাউন্টার উচ্ছেদ করলো আরডিএ যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার করা হলে বিশ্ব রক্ষা পেতো : প্রধানমন্ত্রী শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানির তীব্র সংকট, ভোগান্তিতে রোগী-স্বজনরা নিয়ামতপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড রাজশাহীতে নারীর মোবাইল ফোন-ব্যাগ ছিনতাই, তিন ছিনতাইকারী গ্রেফতার

শিশুদের মানবিক গুণাবলী বিকাশে কাব স্কাউটিং জোরদার করা সময়ের দাবী

Paris
Update : সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২

মো. সোহেল রানা
স্কাউটিং এমন একটি আন্তর্জাতিক, শিক্ষামূলক ও অরাজনৈতিক আন্দোলন-যার মাধ্যমে শিশু, কিশোর ও যুবকদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, বুদ্ধিভিত্তিক ও আধ্যাত্মিক বিষয়ে জ্ঞান দান করে সুনাগরিক হওয়ার যোগ্য করে গড়ে তোলে। কাব স্কাউট আইনঃ ১। বড়দের কথা মেনে চলা ২। নিজেদের খেয়ালে কিছু না করার শিক্ষা দেয়।
স্কাউটিং হলো একটি জীবন পদ্ধতি। যেহেতু স্কাউটিং জীবন পদ্ধতি সেহেতু জীবন গঠনে এর ভ’মিকা অনস্বীকার্য। স্কাউট প্রতিজ্ঞা এবং স্কাউট আইন বিশ্লেষণ করলে এ বিষয়টি একেবারেই পরিস্কার হয়ে যায়। স্কাউট বা রোভার স্কাউট কথাটি বললেই একজন আর্দশ সুনাগরিককে বোঝায়। সমাজে নিজেকে এই সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্কাউট আইনকে কেবলমাত্র গুটিকতক নীতিকথা বা নির্দেশ হিসেবে না নিয়ে এটাকে একজন প্রকৃত মানুসের স্বাভাবিক আচরণের দিক র্নিদেষনা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। শিশুকালেই এ বীজ বপন করতে হবে। যার জন্য প্রয়োজন পারিবারিক শিক্ষা। পরিবার থেেেক এবং পরর্বতীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিশুকে যদি গাইড করা হয় তবে সে একজন সুনাগরিক হতে বাধ্য। আর একজন সুনাগরিক পরিবার সমাজ এবং দেশেরে জন্য সম্পদ, বোঝা নয়।
স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা র্লড ব্যাডেন প্ওায়েলের নির্দেশিত নিয়ম অনুসারে অনুশীলন, প্রতিজ্ঞাপাঠ ও দীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে স্কাউট আন্দোলনের সদস্য হতে হয়। স্কাউটদের মটো বা মূলমন্ত্র হচ্ছে : কাব – যথাসাধ্র চেষ্টা করা, স্কাউট- সদা প্রস্তুত থাকা । মূলত স্কাউটিং হলো একটি আন্দোলন যার কাজ আনন্দের মধ্য দিয়ে শিক্ষা দান । এর মাধ্যমে এক জন ছেলেবো মেয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে। স্কাউটিং এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে অপার আনন্দ যার স্বাদ নিতে হলে যোগদান করতে হবে এই আন্দোলনে।
নিজ নিজ ধর্মে বিশ্বাসীরাই কেবল স্কাউটের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। নাস্তিকদের কোন জায়গা স্কাউটে নেই। দেশপ্রেমিক সুসন্তান যে সকলেরই কাম্য তা আমরা খুব ভালোভাবেই জানি। ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের মায়েরা নিজেদের সন্তানদের কোরেবাণী দিয়েছেন। সুতরাং স্কাউট আইনের যে প্রতিজ্ঞা দেশের প্রতি র্কতব্য পালন তা আমরা বাংলাদেশীরা অনেক আগেই করে দেখিয়েছি। এক জন স্কাউট এগিয়ে যায় সকলে সাহায্যে। কোনকিছু পাবার উদ্দেশ্যে নয় মানবতার টানে। রাস্তা পার করে দেয়া থেকে শুরু করে যে কোন দূর্ঘটনায় সে থাকে সবার আগে, এগিয়ে দেয় সাহায্যের হাত। নেতৃত্বের গুণাবলী তৈরী হয়ে যায় আপনাআপনি। কারণ এই শিক্ষাগুলো সে আগেই পেয়েছে স্কাউটিং এ। স্কাউট এর যে ৭টি আইন রয়েছে, সেখানে বলা আছে একজন মানুষের গুণাবলী কেমন হবে বিশ্বাসী-বন্ধু-বিনয়ী-সদয়-প্রফুল্ল-মিতব্যয়ী-নির্মল। সহজেই অনুমেয় যে স্কাউট আইনের এই গুণাবলী যারমধ্যে থাকবে সে কখনওই বিপথগামী হতে পারবে না, চাইলেও পারবে না।স্কাইটিং এর ফলে শুধুমাত্র এক জন স্কাউট ই নয় সমাজের অন্যান্যরাও তার চাল চলন ও আচার আচরণ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনুসরণ করবে। জীবনকে, সমাজকে তথা দেশকে সুন্দর সুচারুরূপে পরিচালনা করার জন্য স্কাউটের ভ’মিকা অনস্বীকার্য
দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকমন্ডলী বাংলাদেশ স্কাউটের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট রয়েছেন। আজকের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের যুগে স্কাউটিং আমাদের দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। স্কাউটিংয়ের মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিশু-কিশোরদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সামাজিক গুণাবলি উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের পরিবার, সমাজ, দেশ তথা বিশ্বের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। সময়ের চাহিদা পূরণে স্কাউট আমাদের দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই স্কাউট আন্দোলন রয়েছে। অবিভক্ত উপমহাদেশে ১৯১১ খ্রি. স্কাউট আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। বাংলাদেশে স্কাউট আন্দোলনের সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। ১৯৭২ সালের ৮-৯ এপ্রিল সারাদেশের স্কাউট নেতারা ঢাকায় এক সভায় মিলিত হয়ে গঠন করেন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি। ওই বছরের সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতির ১১১নং অধ্যাদেশ বলে (১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭২, সোমবার) ওই সমিতি সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। বিশ্ব স্কাউট সংস্থা ১৯৭৪ সালের ১ জুন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতিকে ১০৫তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল সভায় সমিতির নাম বদল করে রাখা হয় বাংলাদেশ স্কাউটস। এই কার্যক্রম প্রতিটি মানুষকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নানা ধরনের চেষ্টা চলায়। এই আন্দোলনের মাধ্যমে একজন শিশু তার স্বাভাবিক মেধা বিকাশের সুযোগ পায়। স্কাউট আন্দোলন সমগ্র বিশ্বে ভ্রাতৃত্বের আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত। স্কাউট আন্দোলন শিশু-কিশোর ও যুবকদের সত্য ও ন্যায়ের অনুযায়ী উদ্যম, সুশৃঙ্খল ও সাহসী করে তোলে। এই আন্দোলনের শিশু-কিশোর ও যুবকরা শিখে কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশে দৃঢ়তা এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে টিকে থাকতে হয়। প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার লড়াই চারিত্রিক দৃঢ়তা তৈরি করে। দেশ, জাতি, বর্ণ ও ভাষায় স্কাউটদের মধ্যে কোনো পার্থক্য বিবেচনা করা হয় না। তাদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতি, আইন, শপথ, মূলমন্ত্র, আচার-আচরণ সবকিছুর মধ্যে একটা ঐক্য বিরাজ করে। প্রতিটি স্কাউটকে নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হয়। তবে তারা অপরের ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধা রাখে। স্কাউটদের মধ্যে কোনো সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ থাকে না। সেবামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করাই এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পরোপকারের মহান ব্রত নিয়ে এটি কাজ করে। মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করাই তাদের অন্যতম কাজ। এছাড়া বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বিভিন্ন গ্রম্নপ ও জেলা পর্যায়ে গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বৃক্ষরোপণ, টিকাদান, স্যানিটেশন ও পরিবেশ সংরক্ষণ, জ্বালানি-সাশ্রয়ী চুলা, ট্রাফিক কার্যক্রম এবং বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় স্কাউটদের সেবাদান কর্মসূচি বাংলাদেশের মানুষ সর্বদাই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।
আমাদের শিশু-কিশোর ও যুবক-যুবতীদের আনুগত্য ও আত্মনির্ভশীলতা ও শিক্ষা দিয়ে যোগ্য করে গড়ে তোলে। তারা পরোপকারের অনুশীলন করবে এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণে এগিয়ে আসবে। স্কাউটদের শারীরিক, আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন স্কাউট আন্দোলনের উদ্দেশ্য। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সামাজিক সম্পর্ক এবং দেশের অভ্যন্তরে আঞ্চলিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ও বিভিন্ন এলাকার কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিষয়ে বাস্তব ধারণা লাভ করে। বিভিন্ন উপদলের মাধ্যমে স্কাউট আন্দোলন কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং এর মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। স্কাউটের উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি ব্যাপক থেকে ব্যাপকর হচ্ছে। এর ফলে শিশু-কিশোরদের মধ্যে সেবামূলক মনোভাব গড়ে উঠছে। যে কোনো বিপদে বিচলিত না হয়ে ধীরে-সুস্থে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা আমরা স্কাউট আন্দোলন থেকে লাভ করি। আমাদের দেশে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন স্কাউট কার্যক্রম চালু আছে। একজন স্কাউট সবার বন্ধু। তার দ্বারা কোনো ক্ষতি সাধিত হয় না। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কাউট কার্যক্রমকে আরো বেশি গতিশীল ও কার্যকর করতে হবে। বাংলাদেশের স্কাউটরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমাবেশে অংশগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম অর্জন করেছে। কোমলমতি ছেলেমেয়েদের সমাজসেবামূলক কাজে ব্যস্ত রাখার মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশ ও দেশপ্রেম জাগ্রত করা যায়। একজন স্কাউট এগিয়ে যায় সবার সাহায্যে। কোনো কিছু প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে, মানবতার টানে। সব মানবিক গুণাবলি কমবেশি দেখা যায় স্কাউটদের মধ্যে। সব নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলা এবং সবার সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার মনমানসিকতা তাদের মধ্যে থাকে। নানান শিক্ষার মধ্য দিয়ে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন স্তরবিশিষ্ট প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে তাদের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন সৎ, চরিত্রবান, কর্মদ্যোগী সেবাপরায়ণ, সর্বোপরি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্কাউট কাজ করে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতি গঠনে স্কাউট আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিহার্য। মূলত প্রচলিত প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার একটি সম্পূরক সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম হচ্ছে স্কাউটিং। স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে মাদক প্রতিরোধ, বাল্যবিবাহ রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধসহ গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক আন্দোলনে ভূমিকা পালন করতে পারে।এসো সবাই স্কাউটিং করি সৎ সাহসী ও আত্মনির্ভরশীল জীবন গড়ি। লেখক পরিচিতি : উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দুর্গাপুর, রাজশাহী।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris