বৃহস্পতিবার

১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডিগ্রী না থাকলেও সকল রোগের চিকিৎসক সাঈদ!

Paris
Update : বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

নওগাঁ প্রতিনিধি
এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রী না থাকলেও বর্তমানে সকল রোগের চিকিৎসক সাঈদ হোসেন। নামের আগে পদবি লিখছেন ‘ডাক্তার’। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভিজিট নিয়ে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন সাধারণ রোগীদের। ব্যবস্থাপত্রে ডিএমএফ ডিগ্রী বসিয়ে তিনি এখন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। অথচ কোথা থেকে কতসালে ডিএমএফ কপ্লিট করেছেন তার কোন সনদ বা রোল-রেজিস্ট্রেশনসহ কোন প্রকার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমান দিতে পারেননি তিনি। নেই কোন বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রেশন। নওগাঁর হোগল বাড়ি মোড়ে ভাই ভাই মেডিকেয়ার ফার্মেসীতে তার রোগী দেখার চেম্বার। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত অব্দি রোগী দেখেন তিনি। সাঈদ হোসেন হোগল বাড়ি মোড়ের শহিদুল ইসলামের ছেলে।

জানা গেছে, সাঈদ হোসের মা সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এর সুনামধন্য এক ডাক্তার এর বাসায় বুয়ার কাজ করতেন। সে সুবাদে মায়ের অনুরোধে সাঈদ হোসেনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পিওন পদে চাকরি পাইয়ে দেন সেই ডাক্তার। এরপর করোনা মহামারি শুরু হওয়াতে সাঈদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যায় হাসপাতালে বসে করোনার ভুয়া সনদ (সার্টেফিকেট) বানিয়ে বিক্রি শুরু করেন তিনি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর দায়ের করা রাষ্টদ্রোহী মামলায় ২০২০ সালের ২৫ মে গ্রেফতার হয়ে জেলে যেতে হয় সাঈদকে। বর্তমানে সে মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে। পরে ২০২১ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে রাতারাতি ডাক্তার হয়ে যান সাঈদ। গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসে একটি ফার্মেসী ও চেম্বার বসিয়ে শুরু করেন সকল রোগের চিকিৎসা।
হোগল বাড়ি গ্রামের সাজু নামে এক ভুক্তভোগী জানান, মাস তিনেক আগে আমার বাচ্চার সুন্নাতে খাৎনা করাই ডাঃ আবু সাঈদের কাছে তারপর কোনভাবে বাচ্চার ব্লেডিং বন্ধ হচ্ছেনা। বাচ্চার অবস্থা বেগতী দেখে শেষে রাত ১টা দেড়টার দিকে বাচ্চাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাঁচাতে পারি। আমার বাচ্চা সেদিন মরেই যাচ্ছিলো আল্লাহ পুনরায় হায়াত দিছে। তিনি আরো বলেন, পরে এ বিষয়টি নিয়ে আমি গ্রাম্য মাতব্বরদের নিকট অভিযোগ করলে গ্রাম্য শালিশে ভুয়া ডা: সাঈদকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন মাতব্বররা।

স্থানীয় মোতাহার হোসেন নামে এক বয়স্ক রোগী বলেন, বাবারে এই সাঈদ একটা ভুয়া ডাক্তার। আমার একটা সমস্যার জন্য দির্ঘদিন থেকে তার কাছে বহু টাকার চিকিৎসা করছি কিন্তু রোগ সারেনা। উপায় না পেয়ে আমি শহরে ভালো ডাক্তার দেখাই তারা আমাকে জানায় অসুখ অনুযায়ী এগুলা উষুধ ঠিক নাই রোগ সারবে কই থেকে। পরে আমাকে ১শ টাকার ঔষুধ দিছে খেয়ে আমি বর্তমানে সুস্থ। এ তো রোগ-ই ধরতে পারেনা তাহলে কিসের ডাক্তার এই সাঈদ। চিকিৎসা নিতে আসা খাদেমুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, প্রসাবের জ্বালা পোড়া, মাথা ঘোরানো ও চোখে ঝাপসা এই সমস্যা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে আসছি এর আগেও চিকিৎসা নিয়েছি কোন উন্নতি হচ্ছেনা। বরং সমস্যা আরো বাড়ছে ১০দিন পর আসতে বলছিলো তাই আজকে আসছি।
স্থানীয় আবুল কালাম আজাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি জানান, সে তো ঢাকায় একটা হাঁসপাতালের পিওন ছিল এরপর শুনেছি করোনার জাল সনদ বিক্রি করার জন্য জেলে গেছে। এখন জেল থেকে এসে আবার দেখি ডাক্তার হয়ে গেছে। সে কখন ভর্তি হল আর কখন চাকরি করলো আর কিভাবেই বা ডাক্তার হয়েছে বিষয়টা তদন্ত হওয়া দরকার।

এ বিষয়ে সাঈদ হোসেনের চেম্বারে গিয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাভার প্রিন্স মেডিকেল ইন্সটিটিউ (ম্যাটস) থেকে আমি ১১-১২ সেশনে ডিএমএফ করেছি। এরচেয়ে বেশি কোন তথ্য দিতে পারেন নি তিনি। কিন্তু সেখানে আপনার কোন ডকুমেন্ট বা পাশ কারর ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি এমন প্রশ্ন করা হলে তার জবাব এড়িয়ে কোন মন্তব্য না করে চেম্বার ছেড়ে বাইরে চলে যান তিনি।
পরে আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সামনে মাসে ২৩ তারিখ আমার কেসের হাজিরা আছে সেটা শেষ করে এসে সকল তথ্য দিবো, আমার সকল কাগজ পত্র আছে। এক পর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন এসব ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে পারবনা। আপনাদের যা ইচ্ছে করতে পারেন। নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা: আবু হেনা মোহাম্মদ রায়হানুজ্জামান সরকার বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বিষটি জানলাম। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris