বৃহস্পতিবার

২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দুর্গাপুরের ‘আব্দুল্লাহ ফিস ফিডের’ প্রতারণা রুখবে কে?

Paris
Update : শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মোবারক হোসেন শিশির
রাজশাহীর দুর্গাপুরে বাণিজ্যিক মৎস্য খামারে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে খামারিদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল্লাহ ফিড মিল নামের একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ফিড উৎপাদনের নামে গবেষণাগার দেখানো হলে নিয়োগ দেয়া হয়নি কোনো গবেষক কিংবা রসায়নবিদ। প্রশ্ন উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির মালিক আশরাফ আলী ওরফে এস্রাফ কি নিজেই রসায়নবিদ? গত বৃহস্পতিবার আব্দুল্লাহ ফিড মিলে অভিযান চালিয়ে নিম্নমানের ফিড জব্দ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অপরদিকে, আব্দুল্লাহ ফিড মিল থেকে নিম্নমানের ফিড পুকুরে ব্যবহার করে একজন খামারির শুধু এক মৌসুমেই আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৬৬ লাখ টাকা। দিনের পর দিন আব্দুল্লাহ ফিড মিলে নিম্নমানের ফিড উৎপাদন করে বিক্রি করে আসলেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছেনা আইনানুগ ব্যবস্থা।

 

মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এ ধরনের প্রতারণা চালিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটির মালিক আশরাফ আলী ওরফে এস্রাফ। ইতিমধ্যে আব্দুল্লাহ ফিড মিলে নিম্নমানের ফিড উৎপাদন ও বিপণনের একাধিক ডকুমেন্ট হাতে এসেছে এই প্রতিবেদকের। ক্ষতিপূরণ আদায় ও প্রতারণার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গত বছরের ৯ এপ্রিল আদালতে মামলা করেন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের ভুক্তভোগী খামারি শফিকুর রহমান। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রাজশাহীর এস আই রাকিবুল হাসান। এতে নিম্নমানের ফিড ব্যবহারের ফলে খামারি শফিকুর রহমানের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদন দাখিলের আগে আব্দুল্লাহ ফিড মিলসের তৈরি মাছের খাবারের নমুনা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়েছে।

 

মামলার অভিযোগ ও পিবিআইর তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, শফিকুর রহমান দুর্গাপুর এলাকায় ১০০ বিঘা আয়তনের পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করেন। প্রতি মৌসুমে তিনি এই পুকুর থেকে ৮৮ লাখ টাকার মাছ আহরণ ও বিক্রি করে আসছিলেন। খামারি শফিকুর রহমানের অভিযোগ, তিনি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৮৮ লাখ টাকার মাছ পান। তবে আব্দুল্লাহ ফিড দেওয়ার পর সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত মাত্র ২২ লাখ টাকার মাছ আহরণ করেন। শফিকুর রহমানের দাবি, নিম্নমানের আব্দুল্লাহ ফিড পুকুরে দেওয়ার পর মাছের বৃদ্ধি কমে যায়। ফলে আব্দুল্লাহ ফিডের গুণগত মান নিয়ে তার সন্দেহ হয়। তিনি নমুনা পরীক্ষা করান রাজশাহী সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে। পরীক্ষায় ধরা পড়ে আব্দুল্লাহ ফিডে, মাছের প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন নেই। আব্দুল্লাহ ফিডের প্যাকেটে প্রোটিনের হার ২৬ শতাংশ লেখা থাকলেও ল্যাব পরীক্ষায় আসে মাত্র ১৫ দশমিক ৫৯। শফিকুর বলেন, মাছের খাবারে প্রোটিন থাকতে হবে ন্যূনতম ২২ শতাংশ।

 

পিবিআই তদন্তে বলা হয়েছে, আব্দুল্লাহ ফিডের মান কাম্য মানের চেয়ে অনেক নিচে। রাজশাহীর দুর্গাপুরের বর্ধনপুরে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটির কোনো স্থায়ী রসায়নবিদ নেই। ফলে মাছের খাবার উৎপাদনে নিয়মিতভাবে মান পরীক্ষারও কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রতিবেদন অনুযায়ী আব্দুল্লাহ ফিড ব্যবহার করে রাজশাহীর আরও আটজন বড় মৎস্য ব্যবসায়ী বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মৎস্য খামারিদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা করেছেন আব্দুল্লাহ ফিডের মালিক আশরাফ আলী।

 

এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ ফিড মিলের স্বত্বাধিকারী আশরাফ আলী বলেন, আমরা স্বীকৃত পরীক্ষাগারে মান পরীক্ষা করে ফিড উৎপাদন ও বিপণন করি। অনেক সময় খামারিদের বাকিতে পণ্য সরবরাহ করি। বাকি টাকা চাইতে গেলেই তারা ফিডের দোষ-ত্রুটি বের করেন। তবে খামারি শফিকুর রহমান জানান, সাম্প্রতিক সময়ে আশরাফ আলী ৪৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকার ফিড সরবরাহ করেছেন। বিপরীতে তাকে ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। নিম্নমানের ফিড দিয়ে প্রতারণা ও তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করায় তিনি বাকি টাকা দেননি। আদালত আদেশ দিলে তিনি বাকি টাকা দিয়ে দেবেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার আব্দুল্লাহ ফিড মিলে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে নিম্নমানের ফিড জব্দ করে হোজা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এর আগে ভোক্তা অধিকার আব্দুল্লাহ ফিড মিলে অভিযান চালিয়ে নামকাওয়াস্তে জরিমানা করলেও কঠোরভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ফিড মিলের মালিক আশরাফ আলীর সাথে কথা বলা হলে তিনি এ ব্যাপারে নিউজ প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন। এমনকি সময় করে তাঁর সাথে দেখা করতে বলেন এই প্রতিবেদককে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris