শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জুমার দিনে যে সময় দোয়া কবুল হয়

Paris
Update : শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০২২

এফএনএস : জুমার দিন অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ফজিলতের দিন। এ দিন দ্বারা আল্লাহতায়ালা ইসলামকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছেন এবং মুসলমানদের জন্য এই দিনটি আল্লাহতায়ালার বিশেষ দান। মহান আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত হও এবং কেনা-বেচা বন্ধ কর এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে। (সূরা জুমু’আ আয়াত-৯) এই আয়াত দ্বারা জুমার আজানের পর পার্থিব সকল কাজ পরিত্যাগ করে খুতবা ও নামাজের জন্য মসজিদের দিকে ধাবিত হওয়া একান্ত কর্তব্য। অনুরূপভাবে জুমায় বিঘ্নতা সৃষ্টি করে এমন কাজ সমূহ হারাম করে দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে রাসূল (সা.) আরো বলেন বিনা কারণে যে ব্যক্তি তিন জুমা ছেড়ে দিবে, আল্লাহতায়ালা তার অন্তরে সিলমোহর লাগিয়ে দেন। অন্য সূত্রে বর্ণিত, এমন ব্যক্তি ইসলাম কে যেন স্বীয় পৃষ্ঠের পশ্চাতে নিক্ষেপ করল। এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাসকে (রা.) জিজ্ঞেস করলেন জনৈক ব্যক্তি মারা গেছে; সে জুমার নামাজ পড়তো না এবং জামাতেও হাজির হতো না। তিনি বললেন, সেই ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে।প্রশ্নকারী লোকটি এক মাস পর্যন্ত একই প্রশ্ন করতে থাকলেন এবং ইবনে আব্বাস (রা.) তাকে একই জবাব দিলেন। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, ইহুদি-নাসারাদের জুমার এই দিনটি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা এতে মত বিরোধ করে। ফলে এ থেকে তারা বঞ্চিত হয়।আর আল্লাহতায়ালা জুমার দিন দিয়ে আমাদের সম্মানিত করেছেন, এবং পূর্ব থেকেই এই দিনটি উম্মতের জন্য নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল। এ উম্মতের জন্য দিনটি ঈদের দিন। সুতরাং আমরা সকলে অগ্রবর্তী হয়ে গেলাম আর ইহুদি-নাসারারা পিছিয়ে গেছে। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (সা.) বলেছেন, একদিন হযরত জিবরাঈল (আ.)আমার নিকট আসেন, তার হাতে ছিলো সাদা কাচের টুকরা; তিনি বললেন এটি জুমা আপনার রব যা আপনার উপর ফরজ করেছেন।যাতে আপনার জন্য এবং আপনার পর উম্মতের জন্য একটি দলিল হয়। রাসূল (সা.) প্রশ্ন করলেন, এতে আমাদের জন্য কি আছে? হযরত জিবরাঈল আমীন বলেন, এতে এমন একসময় রয়েছে, সে সময় কেউ নিজের কোন নেক মাকসূদ পূরণের জন্য দোয়া করলে তা নিঃসন্দেহে কবুল হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত তিনি বলেন- রাসূল (সা.) বলেন অবশ্য জুমার দিনে এমন একটা সময় আছে তখন কোন মুসলিম বান্দা আল্লাহর কাছে কল্যাণকর কিছু কামনা করলে অবশ্যই তাকে তা দেয়া হয়। (বুখারী ৪/৮৫২.মুসলিম) জুমার দিনে যে কোন সময় সেই সময়টি পেতে পারি। তবে ওলামায়ে কেরাম বলে থাকেন সেই সময়টি সম্ভবত মাগরিবের আজানের পূর্বে,তাই আসুন! আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সকল দিন অপেক্ষা বরকতময় দিন হচ্ছে জুমার দিন। এদিনই হযরত আদম (আ:)কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে, এ দিনই তাকে ভূ-পৃষ্ঠে অবতরণ করানো হয়েছে, এ দিনেই তার তাওবা কবুল করা হয়েছে,এই দিনেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন এবং এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। আল্লাহ তাআলার নিকট এদিন’ইয়াওমুল মাজীদ’ অতিরিক্ত পুরষ্কারের দিন, আসমানে ফেরেশতারা এ দিনটিকে এ নামেই জানেন, জান্নাতে এ দিনই আল্লাহ তাআলার দিদার লাভ হবে। জুমার দিনে আল্লাহতালা ছয়লক্ষ জাহান্নামীকে নাজাত দান করেন। হযরত কা’ব (রা:) বলেন আল্লাহতায়ালা সমগ্র ভূখণ্ড থেকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন মক্কাকে, সব মাস থেকে শ্রেষ্ঠ দিয়েছেন রমজান মাসকে, সব দিন থেকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন জুমার দিনকে এবং সব রাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন শবে কদরকে। পক্ষীকুল এবং পোকামাকড় পর্যন্ত জুমার দিন পরস্পর সাক্ষাৎ করে এবং বলে, ‘সালাম, সালাম’ শুভ দিন। রাসূলে কারীম (সা.)বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে অথবা রাতে মারা যায়, আল্লাহতায়ালা তার জন্য শহীদের সমতুল্য সওয়াব লিখে দেন এবং কবরের সওয়াল জওয়াব থেকে তাকে রক্ষা করেন। জুমার দিনে রাসূলে কারীম (সা.) এর প্রতি দরুদ শরীফ পাঠ করলে সরাসরি মদিনাতুল মনোয়ারায় রাসূলের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। জুমার দিনের বরকত ও ফজিলতকে সামনে রেখে অসংখ্য ওলামায়কেরাম ও অলি-আওলিয়ারা মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন, হে আল্লাহ আমাদের মৃত্যু যেন হয় জুমার দিনে। আসুন! আজ থেকে আমরা প্রতিজ্ঞা করি সকলেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো এবং জুমার দিনকে গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে আমলের দিন বানাবো ইনশা-আল্লাহ। হে মহা মুনিব আমাদেরকে কবুল করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris