শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আরডিএ’র জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ! বাগমারায় এক স্কুলের সভাপতি ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এলাকাছাড়া! বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল জাতীয় চার নেতা কখনো মৃত্যু ভয় করেননি : লিটন প্রেমিককে কুপিয়ে জখম করল প্রেমিকা! গোদাগাড়ীতে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো ২ আসামি গ্রেপ্তার এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের সরে দাঁড়াতে নির্দেশ সেনাবাহিনীতে ভুয়া নিয়োগ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তিন প্রতারক রাজশাহীতে গ্রেফতার পুঠিয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করে লাশ গুম করেছিলেন পুত্রবধূ! রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আরডিএ’র জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ! সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে ‘হস্তক্ষেপ’ নিয়ে চিন্তিত প্রার্থীরা

দেশের বৃহৎ মোকাম নওগাঁয় চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা মাত্র

Paris
Update : সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০২২

নওগাঁ প্রতিনিধি
দেশের বৃহৎ চালের মোকাম নওগাঁয় আবারও বেড়েছে মোটা চালসহ সবধরণের চালের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে স্বর্ণা-৫ (মোটা চাল) চালসহ সবধরণের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪-৫ টাকা। দফায় দফায় চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে জ¦ালানি তেলের দাম কমানো সহ আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ ব্যবসায়ি নেতাদের। চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে নিয়মিত প্রশাসনের মনিটরিং বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন সচেতনরা।

একসময় চালের দাম কম থাকায় এবং খাদ্যভাস পরিবর্তন হওয়ায় মানুষ সরু চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত ছিল। বর্তমানে সরু চালের বাজার যেমন অস্থিতিশীল। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোটা চালের দামও। মানুষ তার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলার চেষ্টা করে। অর্থাৎ আয় বুঝে ব্যয় করে। এ কারণে মানুষ এখন মাঝারি আকারে চাল কেনার চেষ্টার করছেন। নিম্ন আয়ের মানুষ এখন ঝুঁকছেন মোটা চালের দিকে। বাজারে মোটা চালের সংকট থাকায় বেড়েছে দাম।

গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে মোটা চালের (স্বর্ণা-৫) দাম ছিল ৫০ টাকা। তবে সরু চালের বাজার ছিল স্থিতিশীল। বর্তমানে মোটা এবং সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪-৫ টাকা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে পাইকারি বাজারে মোটা চাল (স্বর্ণা-৫) বিক্রি হয়েছে ৩৯-৪০ টাকা কেজি। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৪২-৪৫ টাকা কেজি। ৫মাস পর আগষ্টের মাঝামাঝিতে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৫৭টাকা কেজি। এসময়ে মধ্যে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। এছাড়া সরু চাল প্রকারভেদে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০-১৫ টাকা।

দফায় দফায় চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। সেই সাথে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবধরণের জিনিসপত্রের দাম। সংসারে যোগান দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের। এভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকলে বেঁচে থাকা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে সাধারণদের। শহরের চকগরিব মহল্লার বাসিন্দা মাসুম হোসেন। গত সপ্তাহে মোটা চাল (স্বর্ণা-৫) ৫০ টাকা কেজি চাল কিনেছিলেন। সোমবার (১৫ আগষ্ট) সকালে শহরের পৌর খুচরা বাজারে চাল কিনতে আসেন। চালের দাম শুনার পর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। দুইদিন পর পর ৩ কেজি চাল কিনতে হয়। ৩মাস আগেও সরু চালের ভাত খেতাম। এখন তো তার ধারে পাশেও যাওয়া যায় না। মোটা চালের কেজি ৫৫ টাকা। ২-৩ দোকান ঘুরে একই দাম। যেভাবে চালের দাম বাড়ছে এতে করে আমাদের মতো খেটে খাওয়া নিম্ম আয়ের মানুষদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। শুধু চাল না, সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। চালসহ নিত্যপণ্যের জিনিসপত্রের দাম কমানোর জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

শহরের পৌর খুচরা চাল ব্যবসায়ি মানিক প্রামাণিক বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও সরু চালের বাজার স্থিতিশীল ছিল। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৭টাকায়। এছাড়া সরু চাল কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে জিরাশাইল ৬৫-৬৮ টাকা, কাটারি ৭২-৭৪ টাকা এবং বিআর-২৮, ৫৮-৬০ টাকায়। বর্তমানে বাজারে মোটা চালের সরবরাহ কম। মিলারদের কাছে চাল নিতে গেলে বিভিন্ন কথা শুনতে হচ্ছে। তারা বলছেন চাল নাই, দাম বেশি।

নওগাঁ সদর উপজেলার মেসার্স ফারিয়া রাইচ মিল এর স্বত্বাধিকারি শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, বড় বড় চাল চাউল কল মালিকদের হাতে ধান আছে। তবে সাধারন যারা কৃষক তাদের হাতে ধান নেই বললেই চলে। যেহেতু চালের বাজার বর্তমানে অস্থিতিশীল রয়েছে। সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানি হলে চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পাশাপাশি খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস) সহ সরকারের বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী রয়েছে তা গ্রহণ করা হলে স্বাভাবিক ভাবেই মোটার চালের দাম কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

নওগাঁ জেলা চাউলকল মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, গত ইরি-বোরে মৌসুমে দেশে প্রাকৃতিক দূর্যোগে শষ্য নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। প্রতি বিঘায় যেখানে ২৫ মন ধান হওয়ার কথা সেখানে ১৮-২০ মণ ফলন হয়েছে। এদিকে অনাবৃষ্টিতে এখনো রোপা-আমন লাগানো সম্পূর্ন হয়নি। চাষীরা হাট-বাজারে ধান নিয়ে না আসায় ব্যবসায়িরা কিনতে পারছেন না। বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এতে বাজারে ধানের দাম যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে চালের দামও। তিনি বলেন, মানুষের খাদ্যভাস পরিবর্তন হওয়ায় সরু চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত ছিল। কারণ সরু চালের দাম কম ছিল। বর্তমানে সরু চালের বাজার যেমন অস্থিতিশীল তেমনি বাড়ছে মোটা চালের দামও। যাদের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে তারা এখন সরু থেকে মোটা চালের দিকে ঝুঁকছেন। মোটা চালের চাহিদা কম থাকায় চাষীরা ধান চাষও কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে। তবে বাজারে মোটা ধানের সংকট। ধান সংকট ও চালের চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে মোটা চালের দাম।

জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে চালসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ও পরিবহনে। ২০০ মণ ধান মোকামে নিয়ে আসতে যেখানে ৩ হাজার টাকা খরচ হতো। সেখানে এখন ৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ঢাকায় চাল পাঠাতো প্রতি ট্রাক ১০-১২ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হতো। বর্তমানে ১৬-১৭ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য জ¦ালানি তেলের দাম কমানো, সংকট মোকাবেলায় আমদানি বাড়ানো এবং পাশাপাশি অভ্যন্তরিন ভাবে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ফরহাদ হোসেন চকদার

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris