বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

রাজশাহী স্টেশন মাস্টারের কক্ষে তুলকালাম?

Paris
Update : বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে টিকেট কালোবাজারির কারণে দীর্ঘদিন থেকেই সাধারণ যাত্রীদের জন্য টিকেট পাওয়া যেন সোনার হরিণ। আর হঠাৎ একদিন ‘কালোবাজারি’র টিকেট না পেয়ে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ‘অশ্লীল’ ভাষায় গালাগাল করেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের এক কর্মচারি। এসময় রেলওয়ের সাবেক এক কর্মকর্তাকেও চরম উত্তেজিত হয়ে স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়। গত রবিবার (১৭ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে টিকেট না পেয়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে অশ্লীল গালাগালকারী ওই কর্মচারির নাম বেদব্রত সিনহা। সে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আর তার সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারসহ কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে হুমকি প্রদানকারীর নাম ওয়ালী খান। তিনি রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়েলফেয়ার ইন্সপেক্টর।

এদিকে ট্রেনের টিকেট না পেয়ে দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে রেলের সাবেক ও বর্তমান এই দুই কর্মচারির হুমকি-ধমকি ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করার ঘটনায় রেলওয়ে জিআরপি থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুল মোমিন ওই দুইজনের বিরুদ্ধে এই জিডি করেন।

অভিযোগ উঠেছে, ‘নেশাগ্রস্ত’ অবস্থায় গত রবিবার রাতে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে যায় রেলের কর্মচারি দেবব্রত সিনহা। তার সঙ্গে মহানগর শ্রমিক লীগ নেতা ও সাবেক রেল কর্মকর্তা ওয়ালী খানও যান। তারা গিয়েই কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে হইচই শুরু করেন। চাহিদামত টিকেট না পাওয়ায় তখন চরম উত্তেজিত হয়ে দেবব্রত সিনহা রেলের দুই কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে ‘অশ্লীল’ ভাষায় গালাগাল করেন। এসময় ওয়ালী খান টিকেট না পেয়ে জিএমকে উদ্দেশ্য করে হুমকি-ধমকি দেন এবং স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুল মোমিনকে তৎক্ষণাৎ স্টেশন মাস্টারের কক্ষে ডেকে নিয়ে আসতে নির্দেশ দেন। জানতে চাইলে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুল মোমিন বলেন, ‘দেবব্রত সিনহা রেলের একজন কর্মচারি। কিন্তু তার অত্যাচারে আমরা বুকিং সহকারী অতিষ্ঠ। সাধারণত বুকিং সহকারীদের ডিউটি না থাকলে টিকেট কাউন্টারের অভ্যন্তরে প্রবেশ নিষেধ। অথচ রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী দেবব্রত প্রতিনিয়ত টিকেটের জন্য কাউন্টারের অভ্যন্তরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে টিকেটের জন্য ধর্ণা দিয়ে আসছে। টিকেট না দেয়া পর্যন্ত কাউন্টারের কম্পিউটার ও সার্ভারের পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে।

প্রতিদিনের মত সে ১৬ জুলাই এসে ১৭ তারিখের যাত্রার টিকেটের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু ১৭ তারিখে জিএম স্যারসহ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বেশ কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা অফিসিয়াল কাজে ঢাকায় যান। যার কারণে তাকে আমি টিকেট দিতে পারিনি। এজন্য ১৭ জুলাই রাতে দেবব্রত তার কয়েকজন বাহিনী নিয়ে আমাকে খোঁজার জন্য জোরপূর্বক কাউন্টারে প্রবেশ করে কাউন্টার অফিস ঘেরাও করে। ওই দিন দুই দিনের টিকেট বিক্রির প্রায় ৬০-৭০ লাখ টাকা কাউন্টার অফিসে ছিলো। যেখানে অন্য কারও কাউন্টারের অভ্যন্তরে প্রবেশ নিষেধ সেখানে সে টিকেটের জন্য প্রতিনিয়ত জোরপূর্বক সেখানে ঢুকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ১৭ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে আমাকে কাউন্টারের অভ্যন্তরে না পেয়ে কতর্ব্যরত স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে আমিসহ রেলের আরও দুই একজন কমকর্তাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য-অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে। তাই জীবনের নিরাপত্তা ও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রেলওয়ে জিআরপি থানায় জিডি করেছি।’

মোবাইলে ধারনকৃত ভিডিও

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও সিসি টিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গত ১৫ জুলাই টিকেটের জন্য দেবব্রত সিনহা ৩ বার (সকালে একবার ও বিকালে দুইবার) কাউন্টার অফিসের ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুল মোমিন জানান, ওইদিন সে ১৬ তারিখের যাত্রার ধূমকেত এক্সপ্রেস ট্রেনের ৭টি এসি চেয়ার, পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের ৪টি এসি চেয়ার, সিল্কসিটির ১টি এসি চেয়ার এবং এই তিন ট্রেন মিলিয়ে ১২টি শোভন চেয়ারের টিকেটসহ মোট ২৪টি টিকেট আমাদের নিকট থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। এর আগের দিন ১৪ জুুলাই একইভাবে ২০-২৫টি টিকেট নিয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘদিন থেকে সে একই কাজ করে আসছে। কিন্তু ১৬ তারিখে আবার সে ১৭ তারিখের যাত্রার টিকেটের জন্য আসলে দেয়া সম্ভব না হওয়ায় ১৭ তারিখ রাতে দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে এমন তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছে।’ জানতে চাইলে রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়েলফেয়ার ইন্সপেক্টর ওয়ালী খান বলেন, ‘যা সত্য তাই বলছি। সবাই টিকেট পায় আর আমরা টিকেট পাই না। কেন আমরা টিকেট পাই না তা জানার জন্যই মূলত স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়েছিলাম।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী ও রেলওয়ে শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক দেবব্রত সিনহা বলেন, ‘আমি ১৪ তারিখে তিনটি টিকেট নিয়েছি মাত্র। আর কখনো টিকেট নেইনি। জমসেদ নামের একজন রেলওয়েতে চাকরি করে না। অথচ তাকে টিকেট দেয়া হলেও আমাকে দেয়া হয়নি। এজন্য আমি জমসেদকে গালাগালি করেছি। ১৫ তারিখে আপনি ৩ বার স্টেশন কাউন্টারের অভ্যন্তরে কেন গিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘টিকেট নিতেই গিয়েছিলাম, কিন্তু টিকেট দেয়া হয়নি। মূলত রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় করার জন্য রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান উঠেপড়ে লেগেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে রেলের এই কর্মচারি বলেন, ‘ওই দিন স্টেশন মাস্টারের কক্ষে যা বলেছি ইচ্ছে করে নয়। তবে এগুলো বলা আমার উচিত হয়নি।’ পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘কালোবাজারির টিকেট দেয়া বন্ধ করার কারণেই স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে ওই কর্মচারি উত্তেজিত হয়ে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দিয়েছে। আমি ঢাকায় আছি, লিখিত অভিযোগ পেলে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কালোবাজারির টিকেট বিক্রির সময় স্টেশনের প্লাটফর্মে জিয়াউর রহমান (৩৬) নামে রেলওয়ের এক কর্মচারিকে আটক করেছে রলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি)। এসময় ধূমকেতু এক্সপ্রেসের ৫টি কালোবাজারির টিকেটও জব্দ করা হয়। আটককৃত কর্মচারি রাজশাহী মহানগরীর রেল কলোনি এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে এবং পশ্চিম রেলের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে বার্তাবাহক হিসেবে কর্মরত। পরে অবশ্য মুচলেকায় ছাড়া পায় সে। টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই কর্মচারিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জিএম অসীম কুমার তালুকদার। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। শুধু রেলের এই দুই কর্মচারিই নন; রেলওয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা যারা রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারাও এই টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারি জানিয়েছেন।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris