আমস্টারডাম শহরে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণের অভাব নেই। তবে শহরের বাসিন্দাদের কাছে অনেক অজানা, অচেনা ও লুকানো দ্রষ্টব্যের হদিশ পাওয়া যায়। সে সব জায়গা শহরের ভিন্ন এক চিত্র তুলে ধরে। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহর প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক আকর্ষণ করে। কিন্তু প্রথাগত বা পরিচিত আকর্ষণের বাইরে সেখানে আরো কী দেখার আছে? স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এক দিনে দেখা যায়, দ্রষ্টব্যের এমন এক তালিকা প্রস্তুত করা যায় কি? ওয়ারেন গ্রেগরি তাঁর রংচংয়ে ফুল দিয়ে সাজানো সাইকেলের জন্য গোটা শহরে পরিচিত। তার পরামর্শ কী? তিনি বলেন, ‘‘দর্শনীয় স্থানের অভাব রয়েছে? যেমন স্পিগেলগ্রাখট থেকে যাত্রা শুরু করে হারিয়ে যাওয়া যেতে পারে।’’ অসংখ্য খাল ও সেতুর পাশে যাত্রা শুরু করা যায়। আমস্টারডামে ১,২০০-ও বেশি এমন খাল ও সেতু রয়েছে! কিন্তু পরামর্শ অনুযায়ী স্পিগেলগ্রাখট খাল দেখে বিশেষ কোনো অনুভূতির কারণ বোঝা গেল না। কিন্তু সেখানে ওয়ারেন গ্রেগরির একটি সাইকেল চোখে পড়লো। সেখান থেকেই শহরের লুকানো আকর্ষণের সন্ধান শুরু করতে হবে। এরিন ডেল নামের আরেক বাসিন্দা পরের পরামর্শটি দিলেন। তার মতে, ‘‘এক দিনের জন্য কেউ আমস্টারডাম এলে অবশ্যই ফন্ডেলপার্ক যাওয়া উচিত।
সেখানে শহরের নীরব জাদু অনুভব করা যায়। মানুষ সাইকেল চালায়, হাঁটে, ব্যয়াম করে। একসঙ্গে অনেক মানুষ দেখা যায়।”ফন্ডেলপার্ক আমস্টারডামের সবুজ ফুসফুস হিসেবে পরিচিত। সম্ভবত গোটা নেদারল্যান্ডসের সবচেয়ে পরিচিত পার্ক সেটি। প্রায় ৪৭ হেক্টর জুড়ে সবার জন্যই সেখানে কিছু না কিছু আছে। কবি ও নাট্যকার ইয়োস্ট ফান ডের ফন্ডেলের নামে সেই পার্কের নামকরণ করা হয়েছে। সেই পার্কের প্যাভিলিয়নও সত্যি দেখার মতো। আমস্টারডাম শহরের গভীরতম অংশে সেটি শোভা পাচ্ছে। এবার ব্যার্টুস হলেমানের সঙ্গে আলাপের পালা। তিনি নিজের পছন্দের দুটি জায়গার মধ্যে কোনটিকে বেছে নেবেন, বুঝতে পারছেন না। ব্যার্টুস বলেন, ‘‘আরেকটি পছন্দের জায়গা হলো হেন্ডরিক ডে কাইসারের ডিজাইন করা একটি ভবন।
সেই ভেস্টারকার্ক হলো শহরের প্রথম প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা, যা সে সময়ে ইউরোপের সবচেয়ে বড় এমন উপাসনালয় ছিল। সম্প্রতি সেটি সংস্কার করা হয়েছে। কাজ প্রায় শেষ। অবশ্যই সেখানে যাবেন, দারুণ ভবন সেটি।’’ আমস্টারডাম শহরের সবচেয়ে উঁচু গির্জার চূড়ার খোঁজ করলেই ভেস্টারকার্কে পৌঁছে যাওয়া যায়। ২৬টি বিশাল জানালার কারণে গির্জার ভিতরে আলোর অভাব নেই। সেখানে নেদারল্যান্ডসের অনেক বিখ্যাত মানুষের সমাধি রয়েছে। বারোক যুগের বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী রেমব্রান্টও তাঁদের অন্যতম। শহরে চটজলদি খাবারেরও নানা ব্যবস্থা রয়েছে। রেস্তোরাঁ বিশেষজ্ঞ মিশায়েল স্মিট বলেন, ‘‘খিদে পেলে আমি হয়তো ওয়াল থেকে কিছু স্ন্যাক্স কিনে নেবো। শহরের কেন্দ্রস্থল তো বটেই, গোটা দেশে এমন সহজলভ্য, সুস্বাদু ও রকমারি স্ন্যাক্স পাওয়া যায় না। দেওয়াল থেকে স্ন্যাক্স? মিশায়েল স্মিট আসলে ফেবো নামের ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁর কথা বলছেন। সেখানে ভেন্ডিং মেশিন তাজা ও গরম খাবার সরবরাহ করে। ফেবোর খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই রেস্তোরাঁর অনেক শাখা সক্রিয় রয়েছে। মিশায়েল স্মিট এমনই এক মেশিন থেকে খাবার বার করার কায়দা দেখিয়ে বলেন, ‘‘বোতাম টিপে পছন্দের স্ন্যাক বার করে নিলেই হলো। এটা যেমন চিজ সুফলে। ভেতরে গলা চিজ ভরা। কারণ আমরা নেদারল্যান্ডসে অনেক চিজ খাই। খুব সহজেই খাওয়া যায়। তবে সাবধানে না খেলে মুখ পুড়ে যেতে পারে।’’ আমস্টারডামের এই বাসিন্দারা খুব সুন্দর এক দিন কাটানোর ব্যবস্থা করেছেন। মাঝেমধ্যে পরিচিত রুট ছেড়ে এলে যে নতুন কিছু আবিষ্কার করা যায়, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।-এফএনএস