শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যার কারণে এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত, পরিস্থিতি অবনতির আভাস

Paris
Update : শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২

এফএনএস : সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আগামীকাল রোববার থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সব শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি জেনারেল, এসএসসি ভোকেশনাল এবং দাখিল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের জানান, পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি পরে জানানো হবে। ১৯ জুন থেকে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। আর শেষ হতো ৬ জুলাই। এবার পরীক্ষায় মোট ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন পরীক্ষার্থী। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে মোট পরীক্ষার্থী কমেছে দুই লাখ ২১ হাজার ৩৮৬ জন। পরীক্ষায় ছাত্র ১০ লাখ ৯ হাজার ৫১১ জন এবং ছাত্রী ১০ লাখ ১২ হাজার ৩৫৭ জন। এবার ছাত্রের তুলনায় ছাত্রী সংখ্যা বেশি দুই হাজার ৮৪৬ জন। এ বছর ৯টি সাধারণ বোর্ডে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১১ জন এবং দাখিলে দুই লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৫ জন ও কারিগরিতে এক লাখ ৬৩ হাজার ৬৬২ জন অংশ নেওয়ার কথা।

 

 


এদিকে উজানে প্রবল ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী দুই দিন এই ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে দুই দিনে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এদিকে গতকাল শুক্রবার দেশের তিন নদীর ৫ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। একই সময় বন্যা কবলিত হতে পারে নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি জায়গা। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, দেশের সকল প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি স্থানে মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সকল প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘন্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘন্টায় তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপদসীমার উপরে অবস্থান করতে পারে।

 

এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি স্থানে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক আরিফুজ্জামান ভুইয়া বলেন, উজানে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে, এই কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আগামী দুইদিন এই পানি আরও বাড়তে পারে। এতে পরিস্থিতি আরও কিছুটা খারাপ হতে পারে। শনি ও রবিবারের পর পরিস্থিতি কিছুটা ভাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্র জানায়, সুরমা নদীর তিন পয়েন্টের পানি এখন বিপৎসীমার উপরে। এরমধ্যে কানাইঘাট পয়েন্টের পানি ৯৯, সিলেট পয়েন্টে পানি ২৫ এবং সুনামগঞ্জ পয়েন্টের পানি ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। এদিকে সারিগোয়ান নদীর সারিঘাট পয়েন্টের পানি ৩২ এবং সোমেশ্বরী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। বৃষ্টিপাতের বিষয়ে বলা হয়, গত ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সিলেটের লালাখালে ২৮৩ মিলিমিটার। এ ছাড়া সিলেটের কানাইঘাটে ১১৫, জাফলংয়ে ১১৩, জকিগঞ্জে ৮৫, লাটুতে ৭০ এবং শেওলায় ৬৪ মিলিমিটার করে বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ১৮৬, ছাতকে ২০০, নীলফামারীর ডালিয়াতে ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে সর্বোচ্চ ৬৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া অরুণাচলের পাসিঘাটে ৭৩, আসামের ধুব্রি ও তেজপুরে ৬৯, আসামের গোহাটিতে ৪৯, শিলচরে ৫০, ত্রিপুরার কৈলাশহরে ৬৩, শিলংয়ে ৫০ এবং জলপাইগুড়িতে ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

 

এদিকে রংপুরে টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী ও দুর্গম চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে প্রবেশ করছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৩০টি গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে গঙ্গাচড়া উপজেলায় নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫টি বাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজারসহ শত শত ঘরবাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ড দুর্গম চরাঞ্চলের লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য মাইকিং করছে। গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম বাগেরহাট এলাকায় কয়েকশ’ বাড়িঘর ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তাঘাট ও জমির ফসল। দুর্ভোগে পড়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা সোলেমান মিয়া বলেন, এক সপ্তাহ ধরে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় রাস্তায় বাস করছি। অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর দিন কাটছে। এখনও সরকারিভাবে কোনও ধরনের সহযোগিতা পাইনি। জানা গেছে, তিস্তার পানি গত পাঁচ দিন ধরে বাড়ছে। গত বুধবার থেকে তিস্তা নদীর পানি গঙ্গাচড়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে উপজলার ছয়টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম দুই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।

 

এদিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিনবিনিয়াচরের পশ্চিমপাড়ায় ডান তীররক্ষা বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ, বাঁশঝাড়, জমি ও বসতবাড়ি। গত তিন দিনে ২৫টি বাড়ি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি যে, লোকজন বাড়িঘর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ারও সময় পাচ্ছে না। লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি জানান, বেড়িবাঁধে ভাঙনের ফলে গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে হু হু করে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে। এলাকায় কয়েকশ’ বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। রাস্তা ভেঙে গেছে লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। ওই ইউনিয়নের সদস্য মানিকা বেগম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে তিস্তায় পানি বাড়ছে, ভাঙনও চলছে। পানি যদি আরও বাড়ে তাহলে এই এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে আজকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষগুলো।

 

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, ভাঙনকবলিত কোলকন্দ ইউনিয়নের বিনবিনিয়া চর ও লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতির মুখে। তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এসব এলাকার বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েছেন। তাদেরকে উঁচু স্থানে যেতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, টেকসই মজবুত বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি সমীক্ষা করা হচ্ছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আহসান হাবিব বলেন, রংপুরের গঙ্গাচড়ায় পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। বেড়িবাঁধের বাইরে ভাঙনের খবর পাওয়া গেলে জিওব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। তবে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর প্রবাহিত হওয়া ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris