বৃহস্পতিবার

২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও এবার বেশি হতে পারে কোরবানির পশুর দাম

Paris
Update : শুক্রবার, ১০ জুন, ২০২২

এফএনএস ; জুলাই মাসের শুরুতে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদ। এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশের পশু ব্যবসায়ী ও খামারিরা। ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে গৃহস্থ ও খামারিদের কাছ থেকে গরু কিনছেন। অনেক গৃহস্থ ও খামারি সরাসরি হাটে নিয়ে গরু বিক্রির প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। দুই-তিন সপ্তাহ পর থেকেই জমে উঠবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন পশুর হাট। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দেশে এবারও পশুর সংকট নেই, আমদানির প্রয়োজন হবে না। তবে অধিদপ্তরের মতো খামারি-ব্যবসায়ীরাও বলছেন, পশুর দাম এবার কিছুটা চড়া থাকবে। আর এর কারণ হিসেবে রয়েছে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি। খামারি ও পশুর ব্যবসায়ীদের মতে গত ছয় মাস আগে গো-খাদ্যের যে দাম ছিল, তা এখন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে অধিকাংশ গো-খাদ্যের দাম। ঈদের আগে এই একমাসের মধ্যে গো-খাদ্যের দাম আরও বাড়তে পারে। ফলে এবার চড়া হতে পারে কোরবানির পশুর বাজার।

এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর মনে করছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা বেশি হবে। এবার করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসায় গত কোরবানির ঈদের তুলনায় পশুর চাহিদা ১০ শতাংশ বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্টা বলছেন, দেশে প্রস্তুত হওয়া পশু দিয়ে এবারও কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত কোরবানির ঈদে সারা দেশে পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার। যার মধ্যে গরু-মহিষ ছিল ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার, ছাগল-ভেড়া ছিল ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ও অন্যান্য পশু ছিল ৪ হাজার ৭৬৫টি।

ওই বছর করোনার প্রকোপ থাকায় কোরবানির পশু বিক্রি কিছুটা কম ছিল। তবে এবার করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসায় গত কোরবানির ঈদের তুলনায় পশুর চাহিদা বাড়তে পারে। এ বিষয়ে মাঠপর্যায় থেকে বিস্তারিত তথ্য পেতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চিঠি পাঠিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। গত ১০ মে এ চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির উত্তর এলে কোরবানির পশুর সংখ্যা ও চাহিদা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা মিলবে। অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জিনাত সুলতানা বলেন, গত ১০ মে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চিঠি পাঠিয়েছি। এটা আসতে প্রায় এক মাস সময় লাগবে। তবে এটা স্পষ্ট যে, দেশে কোরবানির গরুর সংকট নেই। দেশে প্রস্তুত করা গরু দিয়ে কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় গরুর দামও বাড়তি থাকতে পারে। কোরবানির পশুর চাহিদা সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের আর্থিক অবস্থা এবার ভালো। আশা করছি, গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বাড়তি চাহিদা হবে। তবে চাহিদা বাড়লেও গরুর সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

দেশের খামারে পর্যাপ্ত গরু প্রস্তুত আছে। আশা করি, কোরবানিতে চাহিদা মিটিয়েও গরু মজুত থাকবে। কোনোভাবেই বিদেশ থেকে গরু আনার প্রয়োজন হবে না। বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শাহ এমরান বলেন, কোরবানির গরু পর্যাপ্ত আছে। সমস্যা হলো খাদ্যের দাম বেশি। গত এক বছরে পশুখাদ্যের দাম ৫০ শতাংশের উপরে বেড়ে গেছে। খাদ্যের উচ্চমূল্যের প্রভাব তো কোরবানির পশুর বাজারে অবশ্যই আসবে। দাম তো কিছুটা বাড়তি হবেই। তবে কোরবানির পশুর চাহিদা প্রসঙ্গে তিনি বলছেন অন্য কথা। তার মতে, যেহেতুু পশু খাদ্যের উচ্চমূল্য, যে হারে পণ্যের দাম বেড়েছে মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। তাই এ বছর গত বছরের চাইতে অন্তত ১৫-২০ শতাংশ কম হবে। খামারিরা বলছেন- পশুখাদ্যের দাম বাড়লেও বাড়ছে না দুধের দাম।

খাবারের সঙ্গে দুধের দামের সামঞ্জস্য না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। পশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে গেলেও সরকার কমানোর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তারা। জানা যায়, ২০ দিনের ব্যবধানে গো-খাদ্যের নারিশ ফিড বর্তমানে ২৫ কেজি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৯৫ টাকা। যা আগে ছিল ১ হাজার ২৩০ টাকা। বস্তায় বেড়েছে ৬৫ টাকা। ভুসি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আগে ছিল ৫০ টাকা। মাসকলাইয়ের খুদি ও খৈল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৪০ টাকা। প্রতি কেজি চালের খুদ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়, আগে ছিল ৩০ টাকা। আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি, আগে ছিল ৩৮-৪০ টাকা। ধানের গুঁড়া ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা, আগে ছিল ৬০০ টাকা। রাইস পালিস বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা কেজি। এ ছাড়া ভুট্টার আটা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৩০ টাকা। খামারি ও কৃষকরা বলছেন, সংসারে সচ্ছলতা আনতে ও পরিবারের দুধের চাহিদা মেটাতে গবাদিপশু লালনপালন করেন তারা। খড় ও ঘাসের পাশাপাশি দানাদার খাবার হিসেবে ভুসি, খৈল, আটা ও ফিড দেওয়া হয়। গত ২০ দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-২০ টাকা। দফায় দফায় দাম বেড়েই চলেছে। খাবার জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। খাবারের দাম বাড়ায় দুধ উৎপাদন ও গরু মোটাতাজাকরণ ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে পশুখাদ্যের দাম বাড়তে থাকলে খামার বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকবে না। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬শ টাকা। সেই হিসাবে তিন মণ ওজনের একটি গরুর দাম পড়ছে ৭২ হাজার টাকা। তবে ঈদুল ফিতরের আগে থেকেই গরুর মাংসের বাজার ওঠানামা করছিল। ঈদের আগে গরুর মাংসের কেজি ৭শ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ৭শ টাকা কেজি ধরলে তিন মণের গরুর দাম পড়বে ৮৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ কেউ তিন মণের একটি গরু কিনতে চাইলে ১২-১৩ হাজার টাকা বেশি গুনতে হতে পারে। সে হিসেবে কোরবানি ঈদে পশু কিনতে বাড়তি খরচ করতে হতে পারে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris