বৃহস্পতিবার

২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হজ-ওমরার প্রস্তুতিতে করনীয়

Paris
Update : শুক্রবার, ৩ জুন, ২০২২

এফএনএস : হজ-ওমরাহ কষ্টসাধ্য ইবাদত। হজের জন্য আর্থিক প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক প্রস্তুতিও জরুরি। কারণ শারীরিক সক্ষমতা না থাকলে হজের বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব নয়। হজ-ওমরার জন্য বিশেষ কিছু বিষয়ের প্রস্তুতি আবশ্যক। তাহলো-

১. আকিদা-বিশ্বাসের সংশোধন
সঠিক আকিদা-বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত মুসলিম জীবন। যার আকিদা ঠিক নেই তার জীবন ব্যর্থ। মুসলিম ব্যক্তির প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে, নিজেদের আকিদা-বিশ্বাস বিশুদ্ধ করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে কুফরি করবে, তার আমল নষ্ট হয়ে যাবে। সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৫)
হজের মতো ফরজ ইবাদত পালনের আগে প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের আকিদা-বিশ্বাস বিশুদ্ধ করা জরুরি। কুফরি, শিরকি, বিদাতি ও ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসা একান্ত আবশ্যক।

মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও অনেক মুসলিম যেমন মসজিদে যায়, তেমনি তারা মাজারে গিয়ে সেজদা করে আবার মক্কায় যেমন যায়, তেমনি তারা মন্দিরেও যায়। সমাজে এদের সংখ্যা কম নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের অধিকাংশ; যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তারা মুশরিক।’ (সুরা ইউসুফ : আয়াত ১০৬)
তাই হজ-ওমরাসহ ইসলামে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য শিরকমুক্ত ঈমানি চেতনা জরুরি। তবেই বান্দার ছোট-বড় সব আমল আল্লাহর কাছে কবুল হবে। কারণ আকিদার-বিশ্বাসের উপর সব আমল কবুল হওয়া নির্ভরশীল। নবিজী বলেছেন, ‘সব আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।’

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো আমল কবুল করেন না, যদি তার জন্য খালেছ হৃদয়ে ও তার সন্তুষ্টির জন্য করা না হয়।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
এজন্য বলা হয়, বিশুদ্ধ আকিদা দ্বীন ইসলামের শিকড় এবং মুসলিম মিল্লাতের সুদৃঢ় ভিত্তি।’
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বরকতময় আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি শিরককারীদের শিরক থেকে মুক্ত। যে ব্যক্তি কোনো আমল করে আর তাতে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে শরিক করে; আমি তাকে এবং তার শরিককে বর্জন করি।’ (মুসলিম)

২. বৈধ সম্পদ সংগ্রহ
ইবাদত কবুলের পূর্ব শর্ত হচ্ছে, হালাল রুজি তথা অর্থ সংগ্রহ। হজ-ওমরার জন্য এর বিকল্প নেই। নবিজী বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কবুল করেন না।’ (মুসলিম)
কারো খাদ্য, পানীয় ও পোশাক হারাম হলে তার কোনো ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই প্রত্যেকের সতর্ক থাকতে হবে, খাদ্য, পানীয়, পোশাক ও আসবাব-পত্র হালাল নাকি হারাম। কোনো ধরনের দুর্নীতি ও অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থে হজ-ওমরা করা হলে তা কবুল হবে না।

৩. হজ প্রশিক্ষণ
হজে যাওয়ার আগে হজ-ওমরাহ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ নেওয়া জরুরি। প্রশিক্ষণ ছাড়া হজে গেলে এর রোকন ও বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকে ভুল করে ফেলেন। যে কারণে অনেকের কাফফারা গুনতে হয়। এ জ্ঞান না থাকার ফলে অনেকের হজ সম্পাদনও হয় না। এজন্য যোগ্য সঙ্গী তথা আলেম-ওলামার সঙ্গে হজে যাওয়ার বিকল্প নেই।

৪. হজের কাফেলা
হজে যাওয়ার জন্য যোগ্য কাফেলার বিকল্প নেই। যারা হজে যাবেন, তাদের হজ-ওমরাহ সম্পর্কিত বিষয়াবলী তদারকির জন্য যোগ্যতা সম্পন্ন মুয়াল্লিম বা গাইড আবশ্যক। উপযুক্ত কাফেলা সংঘটিত না হলে সুন্দরভাবে হজ সম্পাদন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সুন্দরভাবে হজ সম্পাদনের জন্য উত্তম কাফেলা গঠন করা জরুরি। হাদিসে ভালো মানুষের সংস্পর্শের কথা বলা হয়েছে এভাবে-
হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হচ্ছে- আতর বিক্রেতা ও কামারের মতো। আতর বিক্রেতা হচ্ছে হয় সে তোমাকে আতর দেবে; না হয় তুমি তার কাছ থেকে আতর কিনবে; আর না হয় তুমি অন্তত তার কাছে সুঘ্রাণ পাবে। পক্ষান্তরে কামার হচ্ছে- হয় সে তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে; আর না হয় তুমি তার কাছে দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)তাই হজের জন্য যদি আলেম-ওলামা সমৃদ্ধ যোগ্য কাফেলা পাওয়া যায় তবে কাফেলার অন্যান্য সদস্যরা সুন্দর ও উত্তমভাবে হজ সম্পাদন করতে সক্ষম হবে।

৫. হজ-ওমরার আহকাম জেনে নেওয়া
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পদ্ধতি ও রীতি-নীতিতে হজ সম্পাদন করতে হবে। হজের জন্য প্রয়োজনীয় হুকুম-আহকাম, নিয়ম-পদ্ধতিগুলো সঠিকভাবে জেনে নিতে হবে। নবিজী পদ্ধতি অনুসরণ করা ছাড়া হজ করলে তা কবুল হবে না। হাদিসে এসেছে-
‘তোমরা তোমাদের হজের পদ্ধতি (নিয়ম, রীতি-নীতি) আমার কাছ থেকে গ্রহণ করো।’ (বাইহাকি, মুসলিম, মিশকাত)
মনে রাখতে হবে

হজ ও ওমরার অর্থ হলো, মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জন করা। তাই আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নবিজীর দেখানো রীতি-নীতি অনুযায়ী নির্ধারিত কার্যক্রম সম্পাদন করা। বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা। সাফা-মারওয়া সায়ী করা। মাথার চুল মুন্ডন করা এবং আরাফা, মিনা, মুজদালেফায় অবস্থান ও কাজগুলো সম্পাদন করা জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজ-ওমরার কাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করার লক্ষ্যে উল্লিখিত প্রস্তুতিগুলো সম্পাদন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris