চারঘাট প্রতিনিধি : চারঘাটে পদ্মা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাঁধের পাড়ের মাটি কেটে সমান না করে উঁচু-নিচু রেখেই তড়িঘড়ি করে ব্লক বসানো হচ্ছে। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে তীর সংরক্ষণ বাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত বছর এই বাঁধ নির্মাণের ব্লক তৈরির কাজ শুরু হয়। এরপর দীর্ঘ সময় কাজ ফেলে রাখা হয়েছিল। এখন পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে থাকায় ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে জোড়াতালি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করছেন। ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী। এতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে আবারও ভাঙনের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডসূত্রে জানা যায়, পদ্মার ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ২২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পের চারঘাট উপজেলার রাওথার অংশে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫২ মিটার সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ন্যাশনটেক-মোজাহার (জেভি)। কাজ শুরুর কথা ছিল গত বছরের ১৮ এপ্রিল এবং শেষ হওয়ার কথা ৩১ মে। প্রকল্পের অর্থ ছাড় না হওয়াসহ নানা জটিলতায় মাঝখানে কয়েক মাস কাজ বন্ধ ছিল। তাই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না। রাওথা এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তফা হোসেন বলেন, ‘পদ্মা নদীর এ বাঁধ আমাদের এলাকাবাসীর জন্য বহুল প্রতীক্ষিত। অথচ শুরু থেকেই এই নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইট, পাথর ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। টাকা ছাড় না হওয়ার অজুহাতে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রেখেছিল ঠিকাদার।
এখন নদীতে পানি বাড়ায় ঠিকাদারেরা নড়েচড়ে বসেছেন। জোড়াতালি দিয়ে তড়িঘড়ি করে ব্লক বসানো হচ্ছে। এতে আসছে বর্ষা মৌসুমে আবারও আমরা ভাঙনের আশঙ্কা করছি।’ স্থানীয় নদীপাড়ের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, সারা বছর বন্ধ রেখে এখন খেয়াল-খুশিমতো কাজ করা হচ্ছে। বাঁধের পাড়ের মাটি কেটে সমান করা হচ্ছে না। উঁচু-নিচু রেখেই পাড়ের ওপর ব্লক বসানো হচ্ছে। এভাবে বাঁধ নির্মাণ করলে কত দিন টিকবে, সেটাই সন্দেহ। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেভির প্রজেক্ট ইনচার্জ জালাল উদ্দীন বলেন, এই প্রকল্পের কাজ শুরুর পর কখনো বন্ধ রাখা হয়নি। দরপত্র ও নকশা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই বাঁধ নির্মাণ শেষ হবে। কাজ দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম মর্তুজা বলেন, সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে। নদীর বাঁধ উঁচু-নিচু হলে হয়তো দেখতে খারাপ লাগবে। তবে বাঁধ টেকসই হবে না—এমনটা না।
করোনার কারণে টাকা ছাড় না হওয়ায় কাজ বন্ধ ছিল। তবে এখন ঠিকাদার নিজ দায়িত্বে ঠিকমতোই কাজ বাস্তবায়ন করছে। নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। জানতে চাইলে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সারওয়ার-ই-জাহান বলেন, ‘বাঁধের এই কাজ বাস্তবায়নে টাকা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের তো ঠিকাদারদের বিষয়টাও দেখতে হবে। তাঁরা কাজ শেষ করেছে ৭০ শতাংশ। অথচ বিল পেয়েছে ১০ শতাংশের মতো। এরপরও তাঁরা কাজ চলছে। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ যাচাই করে দেখা হবে।’