শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাজে আসছে না ৩১ লাখ টাকার কালভার্ট

Paris
Update : বুধবার, ২৫ মে, ২০২২

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : সীমান্তে বিজিবির টহল ও কৃষকদের মাঠে যাতায়াতের সুবিধার্থে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে একটি কালভার্ট নির্মাণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনকাষা ইউনিয়নের মাসুদপুর বিজিবি ক্যাম্পের পাশে খালের ওপর কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়। ৭ বছর আগে কালভার্টটি নির্মাণ করতে খরচ হয় ৩১ লাখ ১৭ হাজার ৪১৭ টাকা। তবে সেতুটির অপর পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় কালভার্টটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে নির্মানের পর থেকেই।

বর্তমানে স্থানীয় গৃহীনিরা কালভার্টটিতে গোবর শুকানোর কাজে ব্যবহার করছেন। স্থানীয়রা বলছেন, মনকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়া, তারাপুর, ঠুঠাপাড়া, মুন্সিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা কালভার্টটির ওপারে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে আম, ধান, পাটসহ অনান্য মৌসুমি ফলন চাষাবাদ করেন। এছাড়াও কৃষি জমির পাশেই ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা হওয়ায় বিজিবির টহলের সুবিধার্থে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়।

ঠুঠাপাড়া গ্রামের শেষ প্রান্তে কালভার্টটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে তার এক পাশে কাঁচা রাস্তা। অপর পাশে ডোবা থাকায় সেখানে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কথা ছিল। তবে নির্মাণের প্রায় ৭ বছর পার হলেও তা সংযোগ সড়ক তৈরি হয়নি। এ কারণে কালভার্টটি কোনো কাজেই আসেনি। বর্তমানে কালভার্টের ওপর গোবর শুকিয়ে জ্বালানি তৈরির কাজে লাগাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। অন্যদিকে, কালভার্ট থাকা স্বত্বেও দীর্ঘ পথ ঘুরে ফসল ঘরে তুলতে হচ্ছে কৃষকদের। ঠুঠাপাড়া গ্রামের কৃষক সাদিকুল ইসলাম (৬০) বলেন, খালের ওপারে সীমান্ত ঘেঁষে হাজার হাজার বিঘা ফসলী জমি। আম, ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা হয়।

এমনকি এখনও ধান কেটে রাখা থাকলেও আমরা একটা সংযোগ সড়কের কারনে ঘরে তুলতে পারছি না। এক ঘন্টার রাস্তা কয়েক কিলোমিটার দূর দিয়ে ঘুরে ঘুরে ৫-৬ ঘন্টা লাগে ফসল তুলতে। ব্রীজ পেয়েছি কিন্তু রাস্তা না থাকার কারনে তার কোন সুফল ভোগ করতে পারছি না। স্থানীয় যুবক রাকিব হাসান জানান, ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ বছর আগে মাসুদপুর বিজিবি ক্যাম্পের পাশে খালের ওপর দিয়ে যে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি ভালো উদ্যোগ ছিল। অল্প সময়ে নিজেদের কৃষি জমিতে যাতায়াত করতে পারত কৃষকরা। এছাড়াও সীমান্তে চোরাচালান রুখতে টহলও দিতে পারত বিজিবি। কিন্তু সংযোগ সড়কের অভাবে যে কাজে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছিল, সে কাজে আসছে না।

কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামে অনেক লোকসংখ্যা বেড়েছে। যেহেতু অনেকের খালের ওপারে জমি রয়েছে, তাই তারা চাইছে ওই এলাকাতে বাড়ি করতে। কিন্তু তাদের অপেক্ষা একটি রাস্তার। কারন খালের উপর কালভার্ট আছে, কিন্তু ওপারে কোন রাস্তা নেই। তাহলে যাতায়াত করবে কিভাবে। কয়েকদিন আগে তো মধ্যখানে কালভার্ট, আর দুই দিকই ফাঁকা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি গ্রামের দিকে কিছু মাটি দেয়া হয়েছে। এভাবে গ্রামের দিকে দিয়ে কি লাভ? কারন গ্রাম থেকে কালভার্টে গিয়ে মানুষ কি পানিতে নামবে? কলেজছাত্র আশিক আলী জানান, কালভার্টটি দেখলেই আমাদের মনে হয়, ৭ বছর আগের ৩১ লাখ টাকার কোন দামই ছিল না। রাস্তা না করে এমন কালভার্ট তৈরির কোন মানেই হয় না।

কালভার্ট থাকার পরেও তার পাশ দিয়ে খালের মাজাভর্তি পানির উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এদিকে খালের ওপারে কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমি নিয়ে দুর্ভোগে রয়েছে কৃষকরা। তাই আমাদের দাবি, দ্রুত সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করা হোক। রফিকুল ইসলাম জানান, কালভার্টের পাশেই একটা কাঁচা রাস্তা আছে। আপাতত ওই রাস্তা দিয়েই সবাই যাতায়াত করছে। এতে কয়েক ঘণ্টা বেশি সময় ব্যয় হয়। তবে জমির ফসল ঘরে তুলতে এ ছাড়া আর কোনো উপায়ও নাই। কালভার্টির অপর পাশে মাটি ভরাট করে সংযোগ সড়ক বানানো হলে এলাকার কয়েক হাজার কৃষক উপকৃত হবে।

স্থানীয় গৃহবধূ শাহনাজ খাতুন বলেন, অনেকদিন আগে কালভার্টটি আমাদের গ্রামের মানুষের উপকারের জন্য তৈরি করা হয়। কিন্তু কোন উপকারে আসেনি। বরং ব্রীজ থাকার পরেও পানি দিয়ে যেতেই কষ্ট কয়েকগুন বেড়ে যায়। কোন কাজে না আসায় ব্রীজে আমরা এখন গোবর শুকানোর কাজে ব্যবহার করছি। যখন থেকে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে, তখন থেকেই এরকম অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কালভার্টির একপাশে রাস্তা আছে, আরেক পাশে নাই। অপর পাশে রাস্তাটি বালুভরাট দিলেই কালভার্টির রাস্তা চালু হয়ে যাবে।

মনকষা ইউনিয়নের ০৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন জানান, কোন পরিকল্পনা ও সংযোগ সড়ক ছাড়াই অযথা ৩১ লাখ টাকা নষ্ট করে চলে গেছে। আমাদের কোন কাজে আসছে না। অন্যদিকে, রাস্তা না থাকায় জমিতেই পচে যাচ্ছে ধান। আমের দামের থেকে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আরও ভোগান্তিতে এখানকার কৃষকরা। গরুর গাড়িতে করে আম আনতেই দিতে হয় ১ হাজার টাকা। তাই কয়েকটি গ্রামের মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হোক। এবিষয়ে মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা শাহাদাৎ হোসেন মুঠোফোনে তিনি জানান, বাজেট আসলেই মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মান করে দেয়া হবে।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত বলেন, আমি এখানে কয়েকদিন আগেই যোগদান করেছি। বিষয়টি জানা নেই। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্তা নিব। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল মুঠোফোনে জানান, সম্প্রতি কালভার্টটির এক পাশে মাটি ফেলা হয়েছে। অন্যদিকেও সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করা হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris