শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে এবার হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবন

Paris
Update : শনিবার, ১৪ মে, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার : চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমির বাগানে গাছে গাছে ঝুলছে পরিপক্ক আম। গতকাল শুক্রবার থেকে গুটিজাতের আমপাড়া শুরুর মধ্যদিয়ে ক্রয়-বিক্রয় মহৌৎসব শুরু হচ্ছে। করোনা মহামারীর ভয় কাটিয়ে এবার ব্যবসায়ীরাও আটঘাট বেঁধেই প্রস্তুতি নিয়েছেন আম বাণিজ্যের। সেই সাথে রাজশাহী জেলা প্রশাসনও গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সভায় আম নামানোর সম্ভাব্য তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। রাজশাহীতে এবার ২ লাখ ১৪৬৭৬ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সেই হিসাবে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের বিকিকিনি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় রাজশাহীতে এবার আমের উৎপাদন কম। প্রকৃতিগতভাবেই চলতি মৌসুম জন্য অফ সিজিন হওয়ায় রাজশাহীর আমবাগানগুলোর গাছে মুকুল কম আসায় আম উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। তবে গত বছর আমের উৎপাদন বেশি হলেও করোনা মহামারী ও আমের ভরা মৌসুমে রমজান মাসের কারণে চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাননি।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের তুলনায় গত বছর কম জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। আর গেল মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮.২৪ মেট্রিকটন আম। গড়ে ৪০ টাকা কেজি দরে আম কেনা-বেচা নির্ধারণ করেছিল কৃষি অধিদপ্তর। সেই হিসাব অনুযায়ী, গত মৌসুমে ৮০৬ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকার আমের ব্যবসা হয়েছে। আর চলতি মৌসুমে তুলনামূলক বেশি জমিতে আমের চাষ হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬.২৪ মেট্রিকটন। কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার প্রতিকেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা। সেই অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের ব্যবসা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলার ৯ উপজেলা ও মহানগরীর ২টি থানা এলাকায় কমবেশি আমের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় জেলার বাঘা উপজেলায়। চলতি মৌসুমে বাঘায় ৮ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এই উপজেলা থেকেই ৯৬ হাজার ৮৪১ মেট্রিকটন (হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১১.৩০ মেট্রিকটন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এছাড়া জেলার চারঘাটে ৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে ৪৪ হাজার ২৮৪ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১১.৪০ মেট্রিকটন), পুঠিয়ায় ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৫১৩ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১০ মেট্রিকটন),

গোদাগাড়ীতে ১২২০ হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার ৮২৩ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিকটন), পবায় ৯২০ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ১৭৮ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিকটন), দুর্গাপুরে ৮৫০ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ৩৭০ মেট্রিকটন (হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১২.২০ মেট্রিকটন), বাগমারায় ৫৬৫ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৮৬৪.৭৫ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিকটন), মোহনপুরে ৪০৭ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৯৫৩.১৯ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৭ মেট্রিকটন), তানোরে ৩৬০ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৩২৬ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.০২ মেট্রিকটন), মহানগরীর মতিহারে ১৩৫ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৬৪১ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৬ মেট্রিকটন) এবং বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ৭৩ হেক্টর জমিতে ৮৮৩.৩০ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১০ মেট্রিকটন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে রাজশাহীতে শুক্রবার থেকে গুটিজাতের আম নামানোর তারিখ নির্ধারণের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জাতের আম পাড়ার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ শরিফুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় রাজশাহীতে আম নামানোর সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকালে মোবাইল ফোনে জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, ‘শুক্রবার থেকে গুটিজাতের আম নামানো শুরু হবে। এছাড়া ভোপালভোগ ২০ মে, লক্ষণভোগ, ২৫ মে, রাণী পছন্দ ২৫ মে, হিমসাগর ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন, আশ্বিনা ও বারি ফোর ১০ জুলাই, গৌড়মতি ১৫ জুলাই এবং ইলামতি জাতের আম ২০ আগস্ট নামানোর তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বেধে দেয়া তারিখের আগে কোনো আমচাষি আম নামালে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফরমালিনমুক্ত আম যাতে বাজারজাত নিশ্চিত হয় এজন্য জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান টিম সব সময় মনিটরিং করবে।’

রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলীম উদ্দীন বলেন, ‘সামগ্রীক অর্থে এবার আম বাগানের পরিধি বেড়েছে, ফলে এ মৌসুমে ফলন কম হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। এছাড়া এবার ঝড়-বৃষ্টির এখন ওইভাবে না হওয়ায় আমের গুটিও কম ঝড়েছে।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমী এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন আহমদ বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই চলতি মৌসুম আমের জন্য অফ সিজিন। স্বভাবতই কোন বছর আমের বাম্পার ফলন হলে পরের বছর গাছে আম কিছুটা কম আসে। এবারও তাই হয়েছে।

তবে চাষিরা এবার দাম ভালো পেলে তারা পুষিয়ে নিতে পারবে।’ রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসন থেকে আম নামানোর সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। গত বছরের চেয়ে এবার ৫৭২ হেক্টর বেশি জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। তবে ফলন কম হওয়ায় গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৪৫২ মেট্রিকটন আম কম উৎপাদন হতে পারে। তবে গত বছরের চেয়ে এবার আমের দাম চড়া যাবে। সেই দিক বিবেচনায়, আমচাষিরা বেশ লাভবান হবে বলে আশা করি।’


আরোও অন্যান্য খবর
Paris