বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

রাজশাহীতে প্রতিবছর ধ্বংস হচ্ছে ৮০০ হেক্টর কৃষি জমি!

Paris
Update : রবিবার, ৮ মে, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর অর্থনীতি প্রায় সম্পুর্ণ কৃষি নির্ভর। কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয়ের একটি অসাধু ভুমিগ্রাসী চক্রের কৌশলের কাছে পরাস্থ হয়ে কৃষি জমির মালিকরা অনেকটাই বাধ্য হয়ে তাদের আবাদি জমিতে পুকুর করতে দিতে বাধ্য হচ্ছে। প্রভাবশালীরা প্রথমে বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মধ্যে যে জমিতে ফসল উৎপাদন তুলনামূলক কম হয় ওই জমি বাছাই করে সেখানে কৌশলে পুকুর করা শুরু করে। এরপর ওই পুকুরের কারণে আশেপাশের জমিগুলোেেত জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন ওই সকল জমির মালিকেরা ফসল উৎপাদনে লোকশানে পড়ে।

এতে করে তারা বাধ্য হয়ে তাদের আবাদি জমি প্রভাবশালী ওই পুকুর খননকারীকে লীজ দিতে বাধ্য হয়। এই সিন্ডিকেট তানোরের কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) শস্যভান্ডার নামে পরিচিত হাতিশাইল-নেজামপুর বিলে পানি প্রবাহের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও চার ফসলী জমির প্রায় ৫০ বিঘা ফসলী জমি নষ্ট করে অবৈধ পুকুর খনন শুরু করেছে। স্থানীয়রা জানান, কেশরহাট এলাকার আলোচিত সাদিকুল ইসলাম রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন ও মিডিয়া ম্যানেজ করে পুকুরপাড়ে রীতিমতো লাঠিয়াল বাহিনীর পাহারা বসিয়ে জোরপুর্বক অবৈধ পুকুর খনন করছে।

কৃষকেরা জানান, অবৈধ এই পুকুর খনন সম্পন্ন হলে অসময়ে জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার অমৃতপুর, আজিজপুর, নড়িয়াল, চন্দনকৌঠা, ঘৃতকাঞ্চন, কুজশহর, নেজামপুর ও হিরানন্দপুরসহ ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে। আমোদপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন (৪০), শিবাস টিয়াল (৩৩) চন্দনকৌঠা গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, এখানে পুকুর খনন করে আমাদের পেটে লাথি মারা হচ্ছে। তারা বলেন, আমরা পুকুর প্রতিবোধের বার বার প্রশাসনের দ্বারে ঘুরছি তবে রহস্যজনক কারণে প্রশাসন নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। আবার আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদের মিথ্যা মামলাসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। তারা বলেন, এভাবে চলতে থাকলে এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে নিশ্চিত খাদ্য ঘাটতি দেখা দিবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, রাজশাহী জেলায় গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৮০০ হেক্টর (প্রায় ২ হাজার ৪০০ বিঘা) পরিমাণে কৃষি জমি কমে আসছে। যার মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৯-২০ অর্থ বছরেই কমেছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমি। রাজশাহীর তানোরসহ অধিকাংশ উপজেলার প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা মিলবে পুকুরের বিস্তীর্ণ সীমানা। প্রধান সড়ক থেকে এই দৃশ্য অনেকটাই ফিকে। ফসলি জমি নষ্ট করে নতুন পুকুর খনন করা হচ্ছে, নয়তো এরইমধ্যে তা পুকুর গেছে।

আবাদি জমিতে ড্রেজার বসিয়ে এসব পুকুর খবন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আর একাজে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ওইসব এলাকার বর্তমান অথবা সাবেক রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি নয়তো প্রভাবশালী ব্যক্তি। স্থানীয় জমির মালিক ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন একএকটি পুকুরের আয়নত ২০ থেকে ৫০ বিঘা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ।সুত্র জানায়, প্রায় ৫০ বিঘা আয়নের একটি পুকুর খননে বিঘা প্রতি প্রশাসন ৫ হাজার, রাজনৈতিক নেতা ৩ হাজার এবং সাংবাদিক ও হোমড়া-চোমরাদের ম্যানেজ করতে বিঘা প্রতি ২ হাজার টাকা করে আর্থিক সুবিধা দিতে হয়।

কিছুদিন আগেও রাতের আঁধারে পুকুর খননের অভিযোগ পাওয়া গেলেও, এখন প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে প্রকাশ্যে দিন-রাত এক নাগাড়ে চলছে খনন কাজ। কৃষি জমির আকৃতি পরিবর্তন দণ্ডণীয় অপরাধ হলেও এনিয়ে প্রশাসনের তৎপরতা হতাশাজনক। আর এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে পুকুর খননকারী সিন্ডিকেট। এদিকে পুকুর করতে গিয়ে কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বরা মাটি (টপসয়েল) পাঠানো হচ্ছে ইটের ভাটায়। গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে ট্রাক্টর বা ট্রাকে করে পুকুর খননের মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে করে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো। চলাচলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে গ্রামবাসীকে।

অন্যদিকে, একরের পর একর বিস্তৃত এসব পুকুরের পানির সরবরাহ ঠিক রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। পুকুরের ধারে ব্যক্তিমালিকানায় গভীর নলকূপ বসিয়ে নয়তো বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়স কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সেচের পানি এসব পুকুরে সরাসরি ফেলা হচ্ছে পানির স্তর ঠিক রাখতে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে রাজশাহীর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিয়ে সংকট দেখা দিবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. সারওয়ার জাহান সজনল জানান, আপাতদৃষ্টিতে ফসলের চাইতে মাছকেই লাভজনক মনে করছেন অনেকে।

তবে আবাদি জমি নষ্ট করে মাইলের পর মাইল অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন হতে পারে এই অঞ্চলের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, ভূগর্ভস্ত পানির অপরিকল্পিত ব্যবহারের ফল ভোগ করছে তানোর-গোদাগাড়ীর মানুষ। কৃষি জমিতে অপরিকল্পিত পুকুর খনন অদূর ভবিষ্যতে বিপদে ফেলবে সকল পক্ষকেই। এবিষয়ে এখনই সতর্ক হতে হবে। দেশেকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে রাজশাহী অঞ্চলের আবাদি জমি ও কৃষক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিরা রাখছে। হাওড় অঞ্চলে প্রকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে প্রতি বছর শঙ্কা থাকলেও উত্তরের কৃষক নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ফসল উৎপাদন করে চলেছে।

কৃষি জমিতে পুকুর খনন বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের বক্তব্য নিতে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি, এতে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এব্যাপারে তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, বিষয়টি তার জানা নাই, তিনি বলেন,এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবিষয়ে জানতে চাইলে সাদিকুল ইসলাম বলেন, অবৈধ নয় সকলকে ম্যানেজ করেই পুকুর খনন করা হচ্ছে। আপনি যোগাযোগ করলে আপনাকেও মিস্টিমুখ করানো হবে!


আরোও অন্যান্য খবর
Paris