শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আর নেই

Paris
Update : রবিবার, ১ মে, ২০২২

এফএনএস : সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত মারা গেছেন। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। মুহিতের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা বাচ্চু মিয়া বলেন, স্যার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। শ্বাসকষ্ট ও সুগার ফল্ট করে তার। সকাল ৭টায় নিজের হাতে আমি স্যারকে খাইয়েছি। সারাদিন অসুস্থ ছিলেন।

স্যার রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে মারা গেছেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত বছর করোনায় আক্রান্ত হলে ওই বছরের ২৯ জুলাই তাকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। পরে তিনি করোনামুক্ত হয়ে বাসায় ফেরেন। এরপর থেকেই তিনি শারীরিকভাবে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মুহিত ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একাধারে লেখক, কূটনীতিক ও গবেষক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ১৯৩৪ সালে সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মুহিত।

তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের নেতা আবু আহমদ আবদুল হাফিজের দ্বিতীয় ছেলে মুহিত। তার মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করার পর অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ডে উচ্চশিক্ষা নেন মুহিত। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার পর তখনকার পাকিস্তান এবং পরে স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো, মুহিত তখন ওয়াশিংটন দূতাবাসে কূটনৈতিক দায়িত্বে ছিলেন।

জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন তিনি। ১৯৭২ সালে পরিকল্পনা সচিবের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব হন মুহিত। ১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে ‘অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে’ কাজ শুরু করেন ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও আইএফএডি-তে। ১৯৮২-৮৩ সালে তখনকার এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে প্রথমবারের মতো অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন মুহিত। দীর্ঘদিন বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি পান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তার কাঁধেই রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোট ১২ বার ও টানা ১০ বার বাংলাদেশের বাজেট ঘোষণা করার রেকর্ড গড়েন মুহিত। মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন এবং রাজনীতি নিয়ে ৩০টির অধিক বই লিখেছেন মুহিত। জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মুহিতকে ২০১৬ সালের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কারে’ ভূষিত করে সরকার।

গুলশানে প্রথম জানাজা : সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম জানাজা রাজধানীর গুলশানে আজাদ মসজিদে সম্পন্ন হয়। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে বহু মানুষের অংশগ্রহণে এ জানাজা হয়। তবে সংসদ প্লাজায় তার দ্বিতীয় জানাজা অনিবার্য কারণে বাতিল করা হয়েছে। জানাজা নামাজ শেষ মসজিদের দক্ষিণ ফটকে আবুল মাল আবদুল মুহিতের লাশ দেখতে তার বন্ধু, শুভাকাক্সক্ষীরা ভিড় করেন। বেলা সোয়া ১১টায় সবার দেখা শেষে লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নিয়ে যান তার পরিবারের সদস্যরা।

জানাজা নামাজে আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালসহ সরকারের বিভিন্ন এমপি, আমলা ও তার শুভাকাক্সক্ষীরা অংশ নেন। জানাজার আগে গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদে সাংবাদিকদের সঙ্গে স্মৃতিচারণ করেন এ কে আবদুল মোমেন। এ সময় তিনি বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে একজন ‘ট্যালেন্ট অভিভাবককে’ হারিয়েছি। মুহিত ভাইয়ের মতো ট্যালেন্টেড লোক আমাদের পরিবারের আর নেই। তিনি খবই মহৎ ছিলেন। আমরা একজন অভিভাবককে হারালাম। তিনি বলেন, মুহিত ভাই আমার ভাই হিসেবে, বন্ধু হিসেবে আমাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ছিল। তার মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। মুহিতকে সিলেটের রায় নগরে সাহেব বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

ওখানে আমার বাবা-মা, দাদা-দাদিসহ সবার কবর রয়েছে। সংসদ ভবনের সামনে জানাজার আয়োজন না করার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, দুই বছর ধরে করোনার কারণে সংসদ ভবনের সামনে কারও জানাজা আয়োজন করা যায়নি। গতকাল (গত শুক্রবার) আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এ ধরনের কোনো আয়োজন দেখে নিন। এখন গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে মুহিত ভাইয়ের লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে শেষ শ্রদ্ধা জানায় সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, বিশিষ্টজন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সাবেক এ অর্থমন্ত্রীর লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তার ভাই ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি (আবুল মাল আবদুল মুহিত) অত্যন্ত সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তিনি বলছিলেন যে, আমার প্রাপ্তি হয়েছে, আমার কাজ শেষ, তোমরা দেখো বাকিটুকু। কয়েকদিন ধরেই তিনি বলছিলেন সিলেট চলে যাবেন। তার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। শ্রদ্ধা জানাতে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বন্ধের দিনেও তাকে অফিসে দেখা যেতো। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি সফল ছিলেন।

এদেশের রাজনীতিতে সৎ মানুষ বেশি নেই, মুহিত সাহেব শতভাগ সৎ লোক ছিলেন। তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে সংসদে ১২টি বাজেট পেশ করেছেন। তার মধ্যে ১০টি শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে। এর আগে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবীর আহাম্মদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকারের পক্ষে সার্জেন্ট এট আর্মস কমোডর এম এম নাঈম রহমান। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শোক : সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক শোক বিবৃতিতে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। স্পিকারের শোক: আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্পিকার মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

রাসিক মেয়রের শোক : সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এক শোক বার্তায় রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মহোদয় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris