শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২২

এফএনএস : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় জেএমবির চার সদস্যের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আল-মামুন এ রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেকের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-জেএমবির শুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগিনা শহিদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু।

এর আগে গত ২৭ মার্চ ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আল-মামুন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন হুমায়ুন আজাদ। তাকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ঘটনার পরদিন তার ভাই মঞ্জুর কবির রাজধানীর রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। ওই হামলার পর ২২ দিন রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এবং ৪৮ দিন থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন হুমায়ুন আজাদ।

পরে জার্মানির মিউনিখে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ১২ আগস্ট মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে হত্যা এবং বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার আসামিরা হলেন- জেএমবির শুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগিনা শহিদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন, হাফিজ মাহমুদ ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। আসামিদের মধ্যে মিনহাজ ও আনোয়ার কারাগারে।

সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ পলাতক। এ ছাড়া হাফিজ মারা গেছেন। এ মামলায় জেএমবির শুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক ও আনোয়ার আলম ওরফে ভাগিনা শহিদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যা মামলায় ৫৮ সাক্ষীর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৪১ জন সাক্ষ্য দেন।

রায়ে সন্তুষ্ট পরিবার: হুমায়ুন আজাদ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। তারা এখন রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন চান। রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হুমায়ুন আজাদের মেয়ে মৌলি আজাদ এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাবার হত্যার রায় নিয়ে পরিবারের সবার মধ্যে একটা দ্বিধা ছিল যে আসলে বিচার হবে কি না। তবে আমার বিশ্বাস ছিল হবে। এটার বিচারও হবে। অবশেষে দেরিতে হলেও রায় হয়েছে। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু এখন আমাদের দাবি রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করা। পলাতকদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা। তাহলে আমি প্রকৃতপক্ষে সন্তুষ্ট হবো। মৌলি আজাদ বলেন, রায় যদি আগে বাস্তবায়ন হতো তাহলে পরে বিভিন্ন লেখক, মুক্তচিন্তার মানুষকে হত্যার শিকার হতে হতো না। এখন যদি দ্রুত রায় বাস্তবায়ন হয় তাহলে সামনের দিনগুলোতে লেখকদের ওপর হামলার ঘটনা বন্ধ হয়ে আসবে।

সন্তুষ্ট রাষ্ট্রপক্ষ: ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় জেএমবির চার সদস্যের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের এ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) বলেছেন, আমরা রায়ে সন্তুষ্ট। রায় দ্রুত কার্যকর হোক, এমনটাই চাই। জঙ্গি সংগঠন জেএমবি তৎকালীন সময়ে দেশকে অস্থিতিশীল ও বিতর্কিত করতে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। এ কারণে রায় ঘোষণায় কোনো অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই। বাকিটা পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে জানতে হবে। রায়ের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে আব্দুল্লাহ আবু বলেন, সাক্ষী সময় মতো হাজির না হওয়ায় মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হতে দেরি হয়েছে।

অসন্তুষ্ট আসামিপক্ষ : ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় জেএমবির চার সদস্যের মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ‘একপেশে’ বলে মন্তব্য করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। তিনি বলেছেন, মহামান্য আদালত আজকে যে রায় দিয়েছেন সেটি একপেশে রায় হয়েছে। যিনি (হুমায়ুন আজাদ) ঘটনার ছয় মাস পর মারা গেছেন। তার ডাক্তারের যে রিপোর্ট সেটিও দেখা হয়নি। এ ছাড়া তিনি স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে গেছেন, সেটাও আমরা দিয়েছি। তাই এটি হত্যা মামলা হয় না। তিনি বলেন, এর আগে মানিকগঞ্জে একটি মামলায় দেখা গেছে, ১১ দিন পর মারা যাওয়ার কারণে সেটি হত্যা মামলা হয়নি। হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছিল। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আনোয়ার আলম ওরফে ভাগিনা শহিদ আদালত প্রাঙ্গণে বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।’


আরোও অন্যান্য খবর
Paris