মঙ্গলবার

১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউটিউব ভিডিও’ই কাল হলো সোহানের আগুনে দগ্ধ হয়ে লড়ছেন মৃত্যুর সাথে

Paris
Update : সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার : গত শুক্রবার আনুমানিক রাত্রি একটার সময় নগরীর ১৯নং ওয়ার্ড অন্তর্গত নিউকলোনী এলাকায় পারিবারিক কলোহের জের ধরে সোহান নামের এক যুবক গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয়দের সহোযোগিতায় গুরুত্বর আহত সোহানকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও অবস্থা গুরুতর দেখে পরেরদিন সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত ডাক্তার দগ্ধ সোহানকে ঢাকায় রেফার্ড করেন বলে জানায় সোহনের স্ত্রী স্নেহা আক্তার লোপা ও স্থানীয়রা। সোহান ও তার স্ত্রী লোপার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর শহরেই। নিউকলোনী এলাকার মোতালেবের বাড়িওেত তারা ভাড়া থাকতো। একবছর আগে তারা ঐ বাড়ি ভাড়া নেয় বলে জানান বাড়িন মালিক মোতালেব।

সোহান ও তার স্ত্রী স্নেহা আক্তার লোপা দুজনেই প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন বছর দুয়েক আগে বলে জানায় স্থানীয়রা। তাদের উভয়ের বাড়ি দিনাজপুর জেলায়। কোন পক্ষই তাদের বিয়ে মেনে না নেয়াতে ঘর সংসার করার আশায় পারি জমায় রাজশাহী শহরে। নগরীর মাঝিপুকুর নিউকলোনী এলাকার মোতালেব নামের এক ব্যক্তির বাড়ির নিচতলার ছোট্ট দুইটা রুম ভাড়া করে চলছিল তাদের প্রেমের সংসার। সোহান নগরীর লক্ষিপুরস্থ একটি ফার্মেসীর দোকানে চাকরি করে সংসারের ব্যয়ভার বহন করতেন।

অভাবের সংসারে কিছুটা আর্থিক সহোযোগিতা করার জন্য সোহানের স্ত্রী লোপা নগরীর একটি শোরুমে চাকুরি করার ইচ্ছে পোষণ করলে সোহান তাতে রাজি না হবার পরেও লোপা স্বামীর নিষেধ উপেক্ষা করে চাকুরিতে যোগদান করে। সোহান তার দোকান থেকে রাতে বাসায় ফিরে প্রায়শই দেখতেন বাসা তালা মারা। অবশেষে তালা ভেঙ্গে সে প্রবেশ করে ভেতরে। এমন ঘটনা প্রায়ই হবার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলোহো চরমে ওঠে বলে জানায় স্থানীয়রা। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, বিয়ের কয়েকমাস যেতে না যেতেই ঐ পরিবারে অশান্তি শুরু হয়। প্রায় প্রতিদিন রাতেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সেই কলোহের মাত্রা চরমে পৌছায় বলে জানান স্থানীয়রা। উভয়ের মধ্যে চলা তর্কবির্তকের এপর্যায়ে সোহান নিজের গায়ে আগুণ লাগিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেয় স্ত্রীকে। তাতেও লোপা ক্ষান্ত হননি বলে জানায় স্থানীয়রা। অবশেষে সোহান নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাদের আত্মচিৎকারে আশেপাশে লোকজন ছুটে আসে।

বাড়ির প্রধান ফটক দিয়ে স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী নন্দিতা ও তার স্বামীসহ অন্যরা দেখেন, সমস্ত শরীরে আগুণ নিয়ে সোহান বাড়ির উঠোনে দৌড়ঝাপ করছে। পরে স্থানীয়রা বাড়ির মালিককে গেট খুলতে বললে বাড়ির মালিক গেট খুলতে দেড়ি করেন। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহোযোগিতায় সোহানকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করেন ডাক্তার।

সোহানের স্ত্রী লোপা জানায়, সোহানের ৬৫ শতাংশ শরীর দগ্ধ হয়ে গেছে। তবে আগের চাইতে অবস্থা এখন একটু ভাল বলেও জানাই লোপা। লোপার চাকুরি করার বিষয়টি সোহান মেনে নিতে পারেনি বলেও স্বীকার করেন তিনি। চাকুরি করলে আর্থিকভাবে কিছুটা সহোযোগিতা করতে পারবে বিষয়টি সোহানকে একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হবার পর লোপা চাকুরিতে যোগদান করলে পারিবারিক কলোহের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায় বলে দাবি লোপার। আগত ঈদ পর্যন্ত চাকুরি করার অনুমতি চাইলেও সেই অনুমতি সোহান দেয়নি। আর্থিক অভাব অনটনের বিষয়টি কিছুটা ওভারকাম করার জন্য লোপা নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকায় সোহান ক্ষিপ্ত হয় লোপার উপর।

লোপা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা কোন আত্মহত্যার চেষ্টা না, সোহান আমাকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানোর নাটক করতে গিয়েই এমন দূর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানাই লোপা। সোহানের তো কোন বাইক নেই। তাহলে এতো রাতে সে পেট্রোল পেলো কোথায় প্রশ্নের জবাবে সোহানের স্ত্রী লোপা বলেন, সোহান ইউটিউবের ভিডিও দেখে ঐসকল দাহ্য পদার্থ তৈরির করার চেষ্টা করতো। বাসাতে ঐরকম একাধিক দাহ্য পদার্থজাতীয় তরল কিছু বস্তু সোহানের ঘরেই থাকতো। এটা আত্মহত্যা কিংবা আত্মহত্যার প্ররোচনার কোন বিষয় না; এটা শুধুই একটি দূর্ঘটনা মাত্র বলে দাবি লোপার।

চন্দ্রিমা থানা কর্তৃপক্ষের কাছে এমনটাই স্টেটমেন্ট দিয়েছে আগুনে দগ্ধ হওয়া সোহান বলে দাবি স্ত্রী লোপার। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন অন্যকিছু। ঘটনার সময় সোহান চেচিয়ে চেচিয়ে বলছিল, তুমি চাকরি না ছাড়লে আমি আমার শরীরে আগুণ লাগিয়ে দেবো। এতেও লোপা রাজি না হওয়াতে অবশেষে সোহান সেটিই করে বসে। তবে সোহানের সেই আত্মহত্যার হুমকির বিষয়টি স্ত্রী লোপা সিরিয়াসলি না নেয়াতেই এমন অনাকাঙ্খিত আগুণ ঘটনা বলে মন্তব্য স্থানীয়দের। এ বিষয়ে চন্দ্রিমা থানার অফিসার্স ইনচার্জ বলেন, এমন কোন ধরনের ঘটনার প্রেক্ষিতে কোন প্রকার অভিযোগ থানায় কেউ দেয়নি। আমরা বিষয়াট সম্পর্কে অবগতও না। বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন অফিসার্স ইনচার্জ।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris