শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দ্বাদশ টার্গেটে সম্মেলনবর্ষ, রোডম্যাপ করতে বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগ

Paris
Update : রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২২

এফএনএস : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বছরের মধ্যে দলের জাতীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনসহ মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় আওয়ামী লীগ। রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে চলতি মাসে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন অনুষ্ঠিতে রোডম্যাপ করার পরিকল্পনার পাশাপাশি সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ফোকাসিং’কে সামনে রেখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জোরদার করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

দলের নীতি-নির্ধারক কয়েকজন নেতা জানান, ২০২৩ সালের শেষের দিকে কিংবা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তার আগে চলতি বছরে আওয়ামী লীগের জাতীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছেন। আগামী জুন মাসের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলন সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন এবং নিজেরা সংশ্লিষ্টদের তাগাদা দিচ্ছেন। এদিকে এরইমধ্যে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সংসদের ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী বাছাই করার জন্য প্রাক-প্রস্তুতির অংশ হিসাবে মাঠপর্যায়ে জরিপ কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

১০ থেকে ১৫টি সূচকের ভিত্তিতে এই মাঠ প্রাক-প্রাইমারি মাঠ জরিপের কাজ দুইটি সংস্থার মাধ্যমে এগিয়ে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এতে চলতি বছরে দৃশ্যমান হবে উন্নয়ন অবকাঠামো। যা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফোকাস পয়েন্ট হবে মনে করেন দলের নীতি-নির্ধারকরা। দলের নীতিনির্ধারক নেতারা জানান, চলতি বছর দলের দুইধাপে সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

জুন-জুলাই এবং অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বর; এই দুই ধাপে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একই মঞ্চে ১০ থেকে ১৫ দিনের গ্যাপ রেখে সম্মেলন করার পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলনসহ সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংগঠনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে সাভার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে খুব শিগগির তথা চলতি মাসেই কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ডাকার বিষয়ে উপস্থিত নেতাদের অবহিত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সংবাদমাধ্যমকে জানান, এখনও কোনো তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। এ মাসেই হবে, খুব শিগগির হবে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২১-২২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের তিন বছর মেয়াদী কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। তার আগে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড শাখার সম্মেলন করার লক্ষ্যে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জোরেশোরে কাজ শুরু করেছেন। গত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা তিন মাসের ‘আলটিমেটামের পর সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জোরেশোরে কাজ শুরু করেন।

গত (২ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান ও সদস্য নবায়ন অনুষ্ঠানে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে শুধু আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন নয়, মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনেরও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘জাতীয় সম্মেলন জাতীয় নির্বাচনের আগে আমাদের শুধু আমাদের দলের সংগঠন নয়, শাখা সংগঠন নয়। আমাদের সহযোগী সংগঠন যাদের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে তাদেরকেও সম্মেলন অনুষ্ঠান করতে হবে। তাদেরকেও এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।’

দলীয় সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হবে। ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সে অনুযায়ী আগামী ২৯ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী জুন-জুলাইয়ে হবে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ, সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের জাতীয় সম্মেলন হতে পারে। তবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ঠিক করে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বরে কৃষক লীগ, যুবলীগ,

স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং মহিলা শ্রমিক লীগের মেয়াদ শেষ হবে। মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল ২০১৭ সালের ৪ মার্চ, যুব মহিলা লীগের সম্মেলন হয়েছিল ২০১৭ সালের ১১ মার্চ, তাঁতী লীগের সম্মেলন হয়েছিল ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সালের ২১ মে ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’-এর আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। গঠনতন্ত্র অনুসারে এসব সংগঠনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। এর দুই মাস পর ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ গঠিত হয়।

এর আগে ২৯তম সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন আর সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী নির্বাচিত হওয়ার পর অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগে তাদেরকে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অপসারণ করা হয়। পরে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠনের ১ নম্বর সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে সভাপতি ও ১ নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তাদের ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল, তিনবছর সমাপ্ত হবে ডিসেম্বরে। স্বাভাবিকভাবে ধরেই নেওয়া হয়েছে যে ডিসেম্বরেই কাউন্সিল হবে।’

সেই ভিত্তিতেই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ডিসেম্বরে কাউন্সিল হবে। এরপরও আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন শেষ করে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে কি না? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ যে সব কমিটি রয়েছে তাদের সম্মেলন করাই প্রয়োজন। আমরা মনে করি, সেগুলো সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে অবশ্যই মাননীয় নেত্রীর দৃষ্টি রয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে চূড়ান্ত দেবেন।’ ছাত্রলীগের সম্মেলন কবে নাগাদ হতে পারে জানতে চাইলে নানক বলেন, ‘এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলা যায় না।

তবে আমরা মাননীয় নেত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব। সম্মেলনের বিষয়টির আসলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। কাজেই উনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরেই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ; সম্মেলনের ব্যাপারে সকলের ব্যাপারেই আসলে নেত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানান। আমরা মনে করি মেয়াদোত্তীর্ণ যে সব কমিটি রয়েছে তাদের সকলেরেই সম্মেলন হওয়া উচিত।’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘হয়ত রমজানের পরেই ডেকে বলা হবে যার যার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য।

সম্মেলনগুলো যাতে আমাদের মূল দলের সম্মেলনের আগেই অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে তাদেরকে জানানো হবে। আমাদের দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নেত্রীর সিদ্ধান্ত অনুসারে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখেই আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগে তৃণমূলের সম্মেলন করছি। এরইমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা সম্মেলন সম্পন্ন করার কাজ শেষ হয়েছে। বাকি মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা শাখাগুলোর সম্মেলন রমজানের ঈদের পর থেকে শুরু করা হবে। ২০২৩ বা ২০২৪ সালের শুরুতে যে নির্বাচন হবে যাতে সেই নির্বাচনে দল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, সে লক্ষ্যেই দলকে তৃণমূলে এগিয়ে নিচ্ছি।’


আরোও অন্যান্য খবর
Paris