বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

মরা খাল এখন কৃষকের আর্শিবাদ

Paris
Update : শনিবার, ২৬ মার্চ, ২০২২

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের দুঃখুমারী খালটি সর্বশেষ কবে, কখন খালটি খনন করা হয়েছে তার কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য নেয় স্থানীয় বাসিন্দা, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে। দীর্ঘদিন ধরে খনন না করা, বর্ষা মৌসুমে পানির স্রোতে খালের দুই পাড়ে ভাঙন ও পলি জমে মরা খালে পরিনত হয়েছিল দুঃখুমারী খালটি। এই খাল আবার সরাসরি গিয়ে যুক্ত হয়েছে ৩৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ-ভারতের আন্তঃসীমান্ত নদী মহানন্দায়। খালের দুই ধারেই রয়েছে ফসলী জমি ও আমবাগান। খাল খননের উদ্দেশ্য ছিল, বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি খাল দিয়ে মহানন্দা নদীতে নিষ্কাশন করা।

এছাড়াও বর্ষা মৌসুমের পানি ধারন করে শুষ্ক মৌসুমে দুই পাড়ের ফসলী জমিতে ব্যবহার করার জন্য ৩টি বাঁধ নির্মাণ করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ। তবে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে খাল খনন ও বাঁধ নির্মাণ করা হলেও ভরাট হয়ে গিয়ে খালটি উল্টো গলার কাঁটা হয়ে ছিল দীর্ঘদিন ধরে৷ দুই পাড়ে ভাঙন ও পলি জমে থাকা মরা খালে দুর্ভোগ ও নানা ক্ষতির মধ্যে ছিল দুই পাড়ের কৃষকরা। বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের কথা থাকলেও উল্টো পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো দুই পাড়ের কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমিতে। আবার বর্ষা ফুরালেই আর কোন পানির দেখা পাওয়া যেত না। এই পরিত্যক্ত ৪.২ কিলোমিটার মরা খালই এখন দুই পাড়ের কৃষকদের জন্য আর্শিবাদ।

২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর একনেক সভায় অনুমোদন পায় “৬৪টি জেলায় অভ্যন্তরস্থ ছোট বদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প”। এই প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮৬ টাকা ব্যয়ে দুঃখুমারী খালটি পুনঃখনন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সিংড়িবনি উপ-প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের দুঃখুমারী রেগুলেটর হতে বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের রসুলপুর পর্যন্ত ৪.২ কিলোমিটার দীর্ঘ খালের পুনঃখনন করা হয়। গতবছরের ২০ ডিসেম্বর পুনঃখননের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েকদফা বৃষ্টির কারনে কাজ শেষ হতে দেরি হয় এক মাসের বেশি সময় পর।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, এই খাল পুনঃখননের ফলে বর্ষা মৌসুমে দুই পাড়ে পাড়ে থাকা ফসলী জমিতে জলাবদ্ধতা থাকবে না।

পাশাপাশি অতিরিক্ত পানি দ্রুত নদীতে নিষ্কাশন হবে। এছাড়াও গভীর করে খনন করায় বর্ষার মৌসুমের পানি ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা যাবে ফসলী জমিতে। তারা বলছেন, অন্তত আগামী ১০ বছর সময়ের মধ্যে সারাবছর পানি ধরে রাখবে দুঃখুমারী খালটি। এতে মৎস্য চাষের জন্য রাজস্ব পাবে সরকার। স্থানীয় কৃষক শরিফুল ইসলাম, খালের পাশেই কয়েকবিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছেন বলসুন্দরী জাতের কুল৷ তিনি বলেন, খালঘেঁষা জমি চাষাবাদ করলেও আমরা কোনদিন এর সুফল পায়না। উল্টো বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানিতে জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। বর্তমানে খালটি খননের ফলে আর কোন জলাবদ্ধতা থাকবে না।

এমনভাবে খনন করা হয়েছে, যাতে পানি আটকে থাকার কোন সুযোগই নেই। এমনকি সারাবছর পানি থাকবে। যাতে কৃষি কাজেও ব্যবহার করা যাবে। আমচাষী তরিকুল ইসলাম জানান, খালের পাশেই ৮ বিঘা জমিতে আমবাগান রয়েছে। আম চাষাবাদ করতে গিয়ে বছরের বিভিন্ন সময়ে গাছে সেচ দিতে হয়। অন্য কোন ব্যবস্থা না থাকায় আমাদেরকে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে হয়। এতে খরচও বেশি হয় এবং পরিমানমতো পানিও দিতে পারি না। খাল খননের কারনে খুব সহজে, যেকোন সময়, কম খরচে আমবাগানে সেচ দেয়া যাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা আপন রেজা বলেন, ১৫ বছর আগেই আমরা দেখেছি বর্ষা মৌসুমে এই ছিল খরস্রোতা। যেমন দ্রুত পানি নদীতে নিষ্কাশন হত, তেমনি মাছ চাষও করা যেত। কিন্তু এটি দীর্ঘদিন ধরে খনন না করার কারনে মরা খালে পরিনত হয়েছিল। খালটি আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এমনভাবে খনন করা হয়েছে যাতে সারাবছর পানি থাকবে। ফলে মাছচাষের জন্যেও উপযোগী করে খনন করা হয়েছে। একটিকে পরিত্যক্ত খালে মাছ চাষ হবে, অন্যদিকে সরকার এ থেকে রাজস্ব পাবে। ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, দুঃখুমারী খালটির পাশের জমিগুলোতে শুস্ক মৌসুমে কৃষি কাজে সেচের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে হয়। পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় এই খালের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করা যায় না।

ফলে চাষাবাদে খরচ যেমন বাড়ছে তেমনি আবাদযোগ্য অনেক জমি পতিত থেকে যাচ্ছে। খাল খননের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। এতে সেচ কাজে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বেড়ে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমবে। কৃষকের খরচ কমবে। এর ফলে পতিত জমি কমে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়বে। চাঁপাই গ্রামীণ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাসেম আলী বলেন, মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে ক্রমশ নেমে যাচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। এতে দেশে মরুকরণের সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুপেয় পানি ও কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে।

কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। এই খাল খননের ফলে শুস্ক মৌসুমে এ পানি ব্যবহার করে কৃষিতে সেচ কাজ চালানো যাবে। এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফ সরকার বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে নানারকম পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৬৪টি জেলায় অভ্যন্তরস্থ ছোট বদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮৬ টাকা ব্যয়ে দুঃখুমারী খালটি পুনঃখনন করা হয়েছে। এতে এখন সারাবছর পানি থাকবে, যা খালের দুই পাড়ের কৃষকরা ব্যবহার করতে পারবে। এতে পতিত জমি থাকবে না এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও মৎস্য চাষ করার উপযোগী করে খালটি খনন করা হয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris