শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাজশাহীতে হাসপাতালে বাড়ছে রোগী তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রাইমারি স্কুলে অ্যাসেম্বলি না করানোর নির্দেশ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্ত মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে : জাতিসংঘ রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত রাজশাহীতে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ধামুইরহাটে ভূয়া সিআইডি গ্রেফতার রাজশাহীতে বিভাগীয় পেনশন মেলা অনুষ্ঠিত স্ত্রীকে কারাদণ্ড দেওয়া নিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে ইমরান খানের হুমকি ইরানের ইসফাহান কেন হামলার টার্গেট?

নওগাঁয় এবার রেকর্ড আম উৎপাদনের আশা

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০২২

নওগাঁ প্রতিনিধি : ধানকে ঘিরে দেশের শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। ধানের পাশাপাশি এই জেলা এখন সারাদেশে আমের রাজধানী হিসাবে পরিচিত। এবার নওগাঁ জেলায় ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ বেড়েছে। আম চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এই আমের চাষাবাদ। গতবারের চেয়ে গাছে মুকুল এসেছে বেশি। তাই ফলনও ভালো পাওয়ার আশা করছেন বাগান মালিকরা। তবে বাগান মালিকদের দাবি বিদেশে বেশি পরিমানে আম রপ্তানি করা গেলে তারা আরও লাভবান হবেন। এছাড়াও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে এবার নওগাঁতে আম উৎপাদনে সব রেকর্ড ছাড়াতে পারে।

নওগাঁ জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে নওগাঁয় আম বাগান ছিল ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছিল ১২ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৪৪১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত ২০২০-২১ মৌসুমে আমবাগান ছিল ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৫৭০ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও গতবারের চেয়ে জেলায় এবার ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ বেশি হওয়ায় উৎপাদন অন্য যে কোনো সময়ের রেকর্ড ভাঙবে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।

চলতি মৌসুমে উপজেলা ভিত্তিক আম চাষের পরিমান হলো-সদর উপজেলায় ৪৪৫ হেক্টর, রানীনগরে ১১০, আত্রাইয়ে ১২০, বদলগাছীতে ৫২৫, মহাদেবপুরে ৬৮০, পত্নীতলায় ৮ হাজার ৮৬৫, ধামইরহাটে ৬৭৫, সাপাহারে ১০ হাজার, পোরশায় ১০ হাজার ৫২০, মান্দায় ৪০০ ও নিয়ামতপুরে ১ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে। জেলার বিভিন্ন আম বাগান সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আম বাগানগুলো মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে। মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত পুরো এলাকা। যে দিকে তাকায় গাছে গাছে এখন শুধু দৃশ্যমান সোনালী মুকুলের আভা। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়ার উপক্রম প্রতিটি গাছ। মৌমাছিরাও আসতে শুরু করেছে মধু আহরণে। অবার কিছু কিছু গাছে ইতিমধ্যে আমের গুটি ফোটতে শুরু করেছে। আমের ভালো ফলনের আশায় গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পারছেন বাগান মালিকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন বাগান মালিকরা। এদিকে আমের ভালো ফলন পেতে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি অফিস।

জেলার পোরশা উপজেলার আম বাগান মালিক আব্দুল কুদ্দস বলেন, এবার গাছে বিপুল পরিমাণ মুকুল এসেছে। কিছু কিছু গাঝে গুটিও আসতে শুরু করেছে। তাই ফলন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আবহাওয়াটা একটু ভালো থাকলেই হয়। তিনি আরো বলেন, গাছে মুকুল থাকাকালে কয়েক বার বৃষ্টির প্রয়োজন। বৃষ্টি হলেই চিন্তা নাই। আর বৃষ্টি না হলে ওষুধ মেশানো পানি গাছের মুকুলে স্প্রে করতে হবে, যাতে মুকুল ঝরে না পড়ে।
সাপাহার উপজেলার আইহাই ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের আম বাগান মালিক নাজমুল হাসান বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে আম চাষ করেছি। বাগানের সবগাছে মুকুল আসছে। সে কারণে এইসময়ে গাছে পোকার আক্রমণ না করতে পারে, মুকুল যেন ভালো থাকে সেজন্য কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।

এতে করে মুকুলে পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারবে না। মুকুলগুলোও ভালো থাকবে ও ভালো ফলন আসবে। এছাড়া গাছের গোড়ায় গর্ত করে সেখানে সার দেওয়া হচ্ছে যাতে গাছে পরিপূর্ণ মুকুল আসে ও ভালো আম ধরে।

একই উপজেলার চাচাহার গ্রামের আমচাষি মো. আলামিন বলেন, আমি অন্যর জমি বিভিন্ন মেয়াদি লিজ নিয়ে ৩৫ বিঘা জমিতে আমের বাগান করেছি। তাতে আম্র্রপালি, বারি ফোর, গৌড়মতি ও আশির্^না জাতের ৩ হাজার ৫০০ অধিক আম গাছ রয়েছে। এবারে গাছে যথেষ্ট পরিমাণ আমের মুকুল এসেছে, মুকুল যেন ঝড়ে না পরে সে কারণে মুকুল রক্ষায় গাছের পরিচর্যায় বিভিন্ন ধরনের সুষম খাবারসহ সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু গাছে ইতিমধ্যে আমের গুটি আসতেছি। অল্পদিনের মধ্যে পুরোপুরি চলে আসবে।

সেওয়াপাড়া গ্রামের আরেক আম চাষি জাকারিয়া বলেন, আমি বিভিন্ন মেয়াদে ১০০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আমের বাগান তৈরী করেছি। গতবারের তুলনায় এবার সবার আম বাগানের গাছগুলোতে আমের মুকুল অনেক ভালো এসেছে। গাছে মুকুল যেন ঝড়ে না পরে সেজন্য সার, কিটনাশক ও সেচ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, গতবছরে করোনার কারনে আমের তেমন দাম পাই নাই। যার কারণে আমিসহ কেউ তেমন লাভ করতে পারি নাই। যেহেতু এবার ভালো মুকুল আসছে আমরা আশা করছি এবারে আবহাওয়া ভালো থাকলে আমের ভালো ফলন হবে ও বাজার যদি ঠিক থাকে তাহলে ভালো লাভবান হবো। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে আম রফতানি করা গেলে আম চাষিরা আরো বেশি লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি।

জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামসুল ওয়াদুদ বলেন-আম চাষ লাভজনক ও আম চাষের জন্য মাটি উপযোগী হওযায় দিন দিন এই জেলায় আম বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে নওগাঁ জেলা আমের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এখানে বেশ ভালো আম চাষ হয়। চলতি বছর এই জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও গতবারের চেয়ে জেলায় এবার ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ বেশি হওয়ায় উৎপাদন অন্য যে কোনো সময়ের রেকর্ড ভাঙবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন-চলতি মৌসুমে আমের জন্য আবহাওয়া এখনো বেশ অনুকূলে থাকায় আম গাছে মুকুল বেশ ভালো আসছে। এইসময়ে সাধারণত হুপার পোকার আক্রমণ করে। যার কারণে আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া বিচিং পদ্ধতিতে সেচ না দেওয়ার কারণে মুকুল শুকিয়ে ঝড়ে পড়ে। এগুলো থেকে রক্ষা পেতে ও ফলন ভালো পেতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমচাষিদের সবধরনের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। আমচাষিরাও সে মোতাবেক গাছের পরিচর্যায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে ও বড় ধরনের দুর্যোগ না হলে উৎপাদনের যে লক্ষমাত্রা তার চেয়ে বেশি হবে।

আম উৎপাদনে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা করা হচ্ছে। এছাড়াও কৃষি মন্ত্রনালয়ে নির্দেশে বশি পরিমান আম বিদেশে রফতানির লক্ষে কৃষকদের নিরাপদ আম উতপাদনের লক্ষে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিদেশে আম রফতানির জন্য যেসব বাগার নির্ধারিত করা হয়েছে সেখানে ব্যাগিং ও ফেরমেন ট্যাপ ব্যাবহারের প্রক্রিয়া চলছে এবং এর পরিমান বেশি হবে বলে। এছাড়াও যারা আম রফতানি করে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে তারাও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমের মধ্যে আম্র্রপালি, বারি ফোর, ব্যানানা ম্যাংগো ও গৌড়মতি আম বেশি রফতানি হয়।

এসব আমের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নওগাঁর আমের খেতে অনেক সু-স্বাদু ও মিষ্টি। পাশর্^বর্তী রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ব্যাবসায়ী ও আম চাষিরা নওগাঁ এসে আমের বাগান কিনে তাদের জেলার আম বলেও প্রচার করে থাকে। আশা করা যাচ্ছে আগামীতে আরও বেশি পরিমানে নওগাঁ আম বাগান বাড়বে ও উদপাতন বেশি হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris