বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

১০ বছর ধরে ভুয়া এনআইডি-ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ চক্রের ৫ জন গ্রেপ্তার

Paris
Update : বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২

এফএনএস : ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জাল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য নথিপত্র তৈরি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে গ্রাহকদের ভুয়া এনআইডি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে আসছে চক্রটি। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু রোহিঙ্গা এক শ্রেণির অসাধু চক্রের মাধ্যমে ভুয়া এনআইডি কার্ড পায়। এ ছাড়া কয়েকজন জঙ্গি সদস্য আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে ভুয়া এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করে বিভিন্ন দেশে গমন করতো নানা অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সেই দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বেশকিছু পলাতক আসামি গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। সেখানে আমরা দেখেছি তারা নিজেদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য ভিন্ন নামে ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করে অন্যত্র বসবাস করছে।

আপনারা দেখেছেন সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘাতক পরিবহনের চালকদের গ্রেপ্তারে দেখেছি তাদের অনেকেই অপরিপক্ক চালক এবং তারা ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করে পরিবহন চালাচ্ছে। সম্প্রতি দেখা যায়, কয়েকজন অসাধু ব্যক্তি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে বিভিন্ন দ্রব্য বেচাকেনার পাশাপাশি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভুয়া এনআইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন ধরনের জাল সনদ তৈরি করে আসছে।

বর্ণিত বিজ্ঞাপণটি র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং সেলের নজরে এলে র‌্যাব ওই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এ ভিত্তিতেই গত সোমবার (২১ মার্চ) রাজধানীর মালিবাগ, বাসাবো, শাহজাহানপুর ও কোতোয়ালি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা। গ্রেপ্তাররা হলেন- প্রতারণা চক্রের মূলহোতা মো. গোলাম মোস্তফা (৬০), মো. জালাল বাশার (৫৪), মো. মুসলিম উদ্দিন (৬৫), মো. মিনারুল ইসলাম (২২) ও মো. তারেক মৃধা (২১)।

অভিযানে তাদের কাছ থেকে দুটি কম্পিউটার, ২ হাজার ৪৬০টি বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) জাল প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ, ২৬টি ভুয়া এনআইডি, একটি ল্যাপটপ, একটি ডিজিটাল ক্যামেরা, ১৮টি ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, ৮০টি প্লাস্টিকের ভুয়া এনআইডি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির ব্লাঙ্ক কার্ড, ৫০টি স্বচ্ছ কার্ড হোল্ডার, একটি কার্ড প্রিন্টার, চারটি সফ্টওয়্যারের সিডি, ৪টি পেনড্রাইভ, ৫টি মোবাইল ফোন ও নগদ ২ হাজার ৮০০ টাকা। তিনি বলেন, গ্রেপ্তাররা ৫ থেকে ৭ জনের একটি চক্র।

তারা গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জাল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য জাল নথিপত্র তৈরি করে আসছে। এ চক্রের সদস্যরা সাধারণত নির্বাচন কমিশন ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে গ্রাহকদের টার্গেট করতো। টার্গেট করা গ্রাহকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে এনআইডি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতো। বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জনে তারা বিআরটিএ ও বিভিন্ন ব্যাংকের ভুয়া সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে গ্রাহকদের ভুয়া এনআইডি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতো। চক্রটি গত ১০ বছর ধরে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

একইভাবে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে চটকদার বিজ্ঞাপন পোস্ট করতো। পরে কোনো গ্রাহক তাদের সঙ্গে এনআইডি/ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য যোগাযোগ করলে তারা তাদের মধ্যে কেউ গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুততম সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স/এনআইডি প্রাপ্তির অফার দিতো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার ক্ষেত্রে তার ফেক আইডি ব্যবহার করতো। প্রতিটি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দাবি করতো।

এ ছাড়া দ্রুত এনআইডি/ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার জন্য ক্ষেত্র বিশেষ তারা ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করতো। এ ক্ষেত্রে তারা মোটরসাইকেল রাইডার, লাইসেন্সবিহীন বিভিন্ন গাড়িচালক যারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স/এনআইডি পেতে আগ্রহী অথবা যারা অবৈধভাবে লাইসেন্স/এনআইডি প্রত্যাশী তাদের টার্গেট করতো। র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে তারা সাধারণত বিভিন্ন নির্বাচন কমিশন, বিআরটিএ বা সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের আশপাশে দেখা করতো। পরে তারা ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স/এনআইডি সরবরাহ করতো। জরুরি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে তারা একদিনের মধ্যেই সরবরাহ করতো।

তারা মোবাইল ব্যাংকিং বা সরাসরি অর্থ লেনদেন করতো। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার মোস্তফা এ চক্রের মূলহোতা, বাকিরা তার সহযোগী। মোস্তফা এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তিনি ৩০ বছর আগে ঢাকায় এসে ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ থেকে এক্সরে মেশিন টেকনিশিয়ানের ওপর এক বছরের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর একটি ক্লিনিকে ৫ থেকে ৭ বছর এক্সরে মেশিন অপারেটর হিসেবে চাকরি করেন। ২০০০ সালে তিনি একটি এক্সরে মেশিন নিয়ে ছোট দোকান দেন। ২০১০ সালে তিনি প্রতারণার সঙ্গে জড়িত পড়েন। তার একাধিক লেগুনা গাড়ি রয়েছে। একই ধরনের প্রতারণায় একাধিক মামলায় তিনি কারাবরণও করেছেন।

গ্রেপ্তার মিনারুল ২০২০ সালে জামালপুরের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল সম্পন্ন করেন। এক বছর ধরে তিনি এ চক্রের সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি কম্পিউটার অভিজ্ঞ ও ভুয়া এনআইডি কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ জাল সার্টিফিকেট তৈরির ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স ও ডিজাইনের কাজ করতেন। মুসলিম ঢাকায় বসবাস করছেন। তিনি প্রাথমিকভাবে লেগুনাসহ অটোরিকশাচালক হিসেবে কাজ করছেন। গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে তিনি পুরাতন মোটরসাইকেল কেনা-বেচাসহ বিআরটিএ ও নির্বাচন অফিসের সামনে থেকে গ্রাহক সংগ্রহ, যোগাযোগ ও কার্ড তৈরির পর সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রতারণার কাজ করতেন।

গ্রেপ্তার জালাল গত ১৫ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করছেন। তিনি প্রথমে প্রেসে কাজ করতেন। পরে আদালতের সামনে দালালি করতেন। গত ৫ থেকে ৭ বছর ধরে তিনি এ প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত হয়। গ্রাহক সংগ্রহ, যোগাযোগ ও কার্ড তৈরির পর সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রতারণার কাজ করতেন তিনি। গ্রেপ্তার তারেক এক বছর আগে এ চক্রের সঙ্গে জড়িত হন। এর আগে দুই-তিন বছর বিভিন্ন কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ের কাজ করেছেন। গ্রাহক সংগ্রহ, যোগাযোগ ও কার্ড তৈরির পর সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রতারণার কাজ করতেন। এ চক্রের সঙ্গে কোনো অসাধু কর্মকর্তা জড়িত আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সরকারি কোনো অসাধু কর্মকর্তা জড়িত নেই। তবে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি কিছু চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা জড়িত রয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris