শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঘায় আমবাগান ধ্বংস করে পুকুর খনন, নিরব প্রশাসন

Paris
Update : রবিবার, ২০ মার্চ, ২০২২

শাহানুর আলম বাবু, বাঘা : রাজশাহীর বাঘায় এবার আমবাগানে থাবা পড়েছে পুকুর খননকারীদের। সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উপজেলার আমবাগান ধ্বংস করে সেখানে রাতারাতি খনন করা হচ্ছে পুকুর। কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজশে অর্থনীতির অন্যতম উৎস আমবাগান ধ্বংস করে পুকুর খনন করলেও দেখার কেউ নেই। ফলে বাধাহীনভাবেই চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। এতে শুধু আমবাগানই নয়, হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। আমের চেয়েও মাছে বেশি লাভের আশায় পুকুর খননে মেতে উঠেছে ভুমিদস্যুরা। শুধু আম বাগান ধ্বংস নয়, বাগানের মাটি কেটে ট্রাক্টরে বহনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তাঘাটও।

সড়ক-মহাসড়কেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত অবসান না হলে জলাবদ্ধতাসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ারও আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদর বলিহারে পৌর মেয়র আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ির অদুরে বলিহার মৌজায় অবাধে চলছে পুকুর খনন। অধিকাংশ পুকুর খননকারী বিভিন্ন জমির মালিকদের নিকট থেকে টাকার বিনিময়ে বাগান লিজ নিয়ে গাছ উজার করে এসব পুকুর খনন করছেন। দেদারসে সাবাড় করা হচ্ছে আমসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান। সঙ্গে ধ্বংস করা হচ্ছে ধানসহ তিন ফসলি জমি।

এতে সাময়িকভাবে জমির মালিকরা লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়ছেন পুকুর খননকারী জমির আশপাশে থাকা বাগান মালিক ও ফসলি জমির মালিকরা। তাদের দাবি, এভাবে যত্রতত্র আমবাগান কেটে পুকুর খননের ফলে স্থায়ী জলাবদ্ধতাসহ জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বলিহার গ্রামের শৈলেন বাবুর বাড়ির পূর্ব দিকে একটি সাঁকোর মুখ বন্ধ করে পুকুর খনন করা হচ্ছে। পাশেই আরেকটি আমবাগান কেটে পুকুর খননের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এই এলাকায় গত এক মাসে প্রায় দুইশত বিঘা আমবাগান ও আবাদি জমি ধ্বংস করে পুকুর খনন করা হয়েছে।

বর্তমানে সেখানে তিনটা ভেকু (স্কেভেটর) দিয়ে মহা উৎসবে চলেছে পুকুর খননের কাজ। শুধু বলিহার নয়, বারখাদিয়া, ঢাকা চন্দ্রগাতি, আরিফপুর, বাউসা, তুলসিপুরসহ পুরো উপজেলা জুড়ে চলছে অবাধে পুকুর খনন। বাগান কেটে পুকুর খনন অবৈধ কিনা জানতে চাইলে সেখানে দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার বলেন, এ সম্পর্কে মিন্টু ভাই ভাল বলতেন পারবেন। তিনি প্রশাসন সাংবাদিক, নেতাসহ সবাইকে কিভাবে ম্যানেজ করছে আমি জানিনা। এ বিষয়ে পুকুর খননকারী রশিদ বলেন, আমরা মাটি কেটে নিচ্ছি। এ মাটি ইটভাটায় দেয়া হচ্ছে। শুধু আমরা না, এভাবে আমের বাগান কেটে পুকুর খনন চলছে পুরো উপজেলায়।

আপনারা কয়জনকে বাধা দিবেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাত্তার আলি বলেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও থেমে নেই পুকুর খনন। নানাভাবে চলছে এসব অবৈধ কাজকারবার। এ কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। তবে পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু একটি লোক দেখানো অভিযান চালানো হলেও পুকুর খনন বন্ধে নেই কোন কার্যকরি পদক্ষেপ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও কয়েকজন কৃষক বলেন, শুধু বলিহার নয়, পুরো উপজেলাজুড়ে চলছে পুকুর খননের কাজ। যেখানে একমাস আগে ছিলো বিশাল আমবাগান, সেখানে এখন তাকালেই দেখা যাবে পুকুর আর পুকুর।

এভাবে পুরো উপজেলার বেশিরভাগ মাঠজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে পুকুর খনন। দেখার যেন কেউ নেই। এতে করে পুকুর খননকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের সিন্ডিকেটের নিকট আমরা অসহায়। দ্রুত এসব অবৈধ পুকুর খননকারীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা বলেন, সারা বাংলাদেশে কোথাও পুকুর খননে নিষেধাজ্ঞা নেই। পুকুর খননের কারণে কারও কোন সমস্যা হলে থানায় অভিযোগ দিতে পারে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris