শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সূর্য়মুখী’র স্বপ্ন দেখছেন নওগাঁর কৃষক

Paris
Update : রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০২২

সুমন আলী, নওগাঁ : এ যেন গায়ে হলুদের কনে। মুখটা হলুদ আর শরীরে সবুজ শাড়ি। হঠাৎ দেখায় এমন মনে হতেই পারে। যদিও আদতে তেমন কিছুই নয়। সবগুলোই ফুল গাছ। সবুজ পাতার ভেতর থেকে মাথা উঁচু করে প্রকৃতিতে নিজের সৌন্দর্য জানান দিচ্ছে সূর্যমুখী ফুলগুলো। এমনই দৃশ্য এখন চোখে পড়বে নওগাঁর ফসলের মাঠগুলোতে। ফুটে আছে শত শত সূর্যমুখী ফুল। কোমল রোদের আলোতে ফুলগুলো যেন হাসছে। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় নওগাঁয় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই সূর্যমুখী ফুল চাষ। কম খরচে লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ২৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪০ হেক্টর, রানীনগরে ৩৪, আত্রাইয়ে ১৩, বদলগাছীতে ৩৩, মহাদেবপুরে ২৭, পত্নীতলায় ২৭, ধামইরহাটে ২৭, সাপাহারে ১৩, পোরশায় ১৩, মান্দায় ২৭ ও নিয়ামতপুরে ১৩ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও কৃষি বিভাগ থেকে সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে জেলার ১১টি উপজেলায় ১ হাজার কৃষক ১ হাজার বিঘা জমিতে এই সূর্যমুখি ফুলের চাষ করছেন।

আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। বর্তমানে সূর্যমুখীর অধিকাংশ গাছেই ফুল ফুটেছে। বীজ বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য রান্নার তেলের চেয়ে ভালো এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ উপকারী। সূর্যমুখী চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন এ জেলার কৃষকরা। যদি কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে সূর্যমুখী চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করতে পারবেন। ফলে একদিকে উপকৃত হবেন কৃষক অপর দিকে মিটবে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা।

রাণীনগর উপজেলার মধ্যরাজাপুর গ্রামের চাষী নুরুল হক নয়ন বলেন, গত বছর অন্যের কাছ থেকে সূর্যমুখি ফুলে বীজ নিয়ে অল্প পরিমাণ জমিতে সূর্যমুখি ফুলের চাষ করে আমি অনেক লাভবান হয়েছি। তাই চলতি মৌসুমে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সূর্যমুখি ফুলের চাষ করেছি। এটি খুবই লাভজনক একটি ফসল। আমি আগামী বছর ১০বিঘা জমি লিজ নিয়ে সূর্যমুখি ফুলের চাষ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা সূর্যমূখী ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

একই গ্রামের আরেক চাষী মাসুদ রানা বলেন, নয়নের দেখাদেখি চলতি মৌসুমে আমিও কিছু জমিতে এই আবাদ করেছি। তবে আগামী বছর কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে ধানের পরিবর্তে সূর্যমুখি ফুলের চাষ করবো। এটি শুধু একটি ফসলই নয় জমিতে এসে অনেক মানুষ বিনোদনও নিচ্ছে। আবার অনেকে পরিবারের সদস্যদের জমিতে এনে ছবি তুলছেন।

সদর উপজেলার ফুল চাষি গোলাম রব্বানী বলেন, সরকারি প্রণোদনায় আমি এবারই প্রথম ১৫ কাটা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। এখন গাছ ও ফুল দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ফলন আশানুরূপ হবে। আমরা ভালো লাভের স্বপ্ন দেখছি। সদর উপজেলার কুমাইগাড়ি এলাকার ফুল চাষি পাইলট জানান, আমার অনেকদিনের শখ সূর্যমুখী ফুল চাষ করা। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোনো সঠিক পরামর্শ পাইনি। হঠাৎ করে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাই। তাই বেশি আগ্রহ নিয়ে সূর্যমুখী চাষ করি। প্রথমে ধারণা ছিলো জমি থেকে যা ফসল আসবে তা দিয়ে নিজের পরিবারের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ হলেই হবে। কিন্তু এখন আরো বেশি করে চাষ করার ইচ্ছা পোষণ করছি।

আরকে ফুল চাষি রতন বলেন, সূর্যমুখীর কাণ্ড, মূল এবং গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া বিক্রি করে অতিরিক্ত আয়েরও একটা সুযোগ মিলবে। তাছাড়া চাষে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। দু’একবার পানির সেচ এবং ফুলগুলো একটু দেখে রাখলেই হলো। সদর উপজেলার বর্ষাইল গ্রামের ফুল চাষি নূরু মিয়া জানান, আগে তিনি তার জমিতে আলু, ধনিয়া, টমেটো, ঢেড়শ চাষ করতেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এ বছরই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়েছে।

বাগানে ফুল আসার পর প্রতিদিনই লোকজন আসছে বাগান দেখতে। তিনিও আশা করছেন সূর্যমুখী চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার। বদলগাছী উপজেলার ফুল চাষী বাবু বলেন, সূর্যমূখী একটি লাভজনক ফসল। অন্যান্য ফসলের চেয়ে চাষাবাদে সময় ও খরচ দুটোই কম লাগে। জমিতে স্বল্প চাষে সূর্যমুখী চাষ করা যায়। রোপন থেকে কর্তন পর্যন্ত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। সূর্যমুখীর গাছ রান্নার জ্বালানি হিসেবে আমরা ব্যবহার করতে পারবো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ বলেন, ভোজ্যতেলের মধ্যে সূর্যমুখীর তেল শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সূর্যমুখীর তেল শরীরের কোলেস্টরাল ঠিক রাখে। এক কথায় সূর্যমূখীর তেল মানবদেহের জন্য অনেক উপকারীজেলার ১১ উপজেলায় এবার ২৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। সূর্যমুখীর চাষ লাভজনক। এবার আমরা সূর্যমুখী চাষের জন্য কৃষকদের সার ও বীজ প্রণোদনা দিয়েছি।

আগামীতে আরো বেশি পরিমাণে সূর্যমুখীর চাষ হবে বলে প্রত্যাশা করছি। যার কারনে আমরা কৃষকদেরকে লাভজনক ফসল সূর্যমুখী আবাদ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা আশা করি অন্যান্য ফসলের তুলনায় সূর্যমুখী চাষ করে চাষিরা বেশি লাভবান হবে। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে এবার কৃষকরা সূর্যমুখি ফুলের বাম্পার ফলন পাবেন বলে আশা করছি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris