শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাজ শেষ না করেই শতাধিক প্রকল্পের সমাপ্তি ঘোষণায় প্রশ্ন

Paris
Update : শনিবার, ৫ মার্চ, ২০২২

এফএনএস : শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ওসব প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। অথচ ওসব প্রকল্পের পেছনে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ফলে ওসব প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য কতোটুকু পূরণ হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেন এতো বিপুলসংখ্যক প্রকল্পে এমন ঘটনা কেন ঘটছে সংশ্লিষ্টরা তার সঠিক কোনো কারণ জানাতে পারেনি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপিভুক্ত মোট প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৯৪৫টি। তার মধ্যে ৪৩৯টি উন্নয়ন প্রকল্প সমাপ্ত করার জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২০২১ সালের জুনের মধ্যে ২৩৬টি প্রকল্প শেষ হয়েছে। তাছাড়া সমাপ্তর জন্য নির্ধারিত না থাকলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে আরো ২৮টি প্রকল্প সমাপ্ত করা হয়েছে। ওই অর্থবছরে মোট ২৬৪টি প্রকল্প শেষ করা হয়। সমাপ্ত ঘোষণা করা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১৪০টির শতভাগ কাজ শেষ হয়।

বাকি ১২৪টি প্রকল্পের কাজ বাকি রেখেই সমাপ্ত করা হয়েছে। ওসব প্রকল্প পর্যালোচনা করে দেখা যায় কোনো কোনো প্রকল্পের ৩৫-৪০ শতাংশ কাজ হলেও প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। ৬০ শতাংশের নিচে কাজ হয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যাও রয়েছে উল্লেখযোগ্য। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ৩০৫টি উন্নয়ন প্রকল্প সমাপ্ত করার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু ২০২০ সালের জুনের মধ্যে ১৪১টির কাজ শেষ করা সম্ভব হয়। তাছাড়া লক্ষ্যমাত্রা ছিল না কিন্তু তারপরও ৪১টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়। সব মিলিয়ে ওই অর্থবছরের শেষ হয়েছে ১৮২টি উন্নয়ন প্রকল্প।

সেগুলোর মধ্যে ৯০টি প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। বাকি ৯২টির কাজ শতভাগ শেষ না হলেও সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। সূত্র জানায়, বিগত ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ইনস্টিটিউশনাল কো অপারেশন (বিটুইন স্ট্যাটিসটিকস সুইডেন অ্যান্ড বিবিএস) প্রকল্পটি গ্রহণ করে ২০২০ সালের জুনে শেষ করা হয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ছিল ১৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। তার মধ্যে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ আর বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৩৮ শতাংশ। বিগত ২০১৭ সালের জুলাইয়ে সেকেন্ড স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম সাইজ এন্টারপ্রেনিওর শীর্ষক প্রকল্পটি শুরু হয় ।

পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এটির ব্যয় ধরা হয় ১৬ কাটি ৭১ লাখ টাকা আর খরচ হয় ১৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। কিন্তু বাস্তব কাজ শেষ হয় মাত্র ৪৬ শতাংশ। তবে আর্থিক অগ্রগতি ছিল ৮৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। প্রাণী ও মুরগির ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়সংক্রান্ত প্রকল্পেও একই অবস্থা দেখা যায়। প্রকল্পটি ২০১২ সালে হাতে নেয়া হলেও দীর্ঘ ৯ বছর চলার পর বাস্তব অগ্রগতি হয় ৬০ শতাংশ। আর আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়ায় ৫৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এমন অবস্থায় প্রকল্পটি সমাপ্ত করা হয়েছে। এরকম আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হচ্ছে টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (টিপিপি) ফর প্রজেক্ট ডিজাইন অ্যাডভান্স (পিডিএ) ফর সিটি রিজিওন ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রজেক্ট।

সেটির আর্থিক অগ্রগতি ৪৪ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ। কনস্ট্রাকশন অব কানেকশন রোড উইথ শেখ হাসিনা ব্রিজ অন মহানন্দা রিভার আন্ডার চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৩৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ২৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এমন ধারা ঠিক নয়। ওসব প্রকল্পের বিষয়ে অবশ্যই ভাববার আছে।

কেননা শতভাগ কাজ শেষ না করে প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণার মানেই হচ্ছে কোন কোন অঙ্গ হয়ত বাদ দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রকল্পটি সম্ভাব্যতা যাচাই হয়তো ঠিকঠাক করা হয়নি। ফলে বাস্তবায়ন পর্যায়ে গিয়ে কিছু কিছু কাজ বাদ দেয়া হয়েছে। তাতে প্রকল্পটির উদ্দেশ্য যেমন ব্যাহত হতে পারে, তেমনি যে টাকা ব্যয় হয়েছে সেটিও কতটুকু কাজে লেগেছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তাই এরকম প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা দরকার।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris