শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বগুড়ায় দুই নৈশপ্রহরী হত্যার রহস্য উন্মোচন

Paris
Update : মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২

এফএনএস : বগুড়ার শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় দুই নৈশপ্রহরী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে। বিসিক শিল্প নগরী এলাকার মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মালামাল চুরিতে বাধা এবং এ বিষয়ে মালিককে জানাতে চাওয়ায় তাদেরকে হত্যা করা হয়। গত শনিবার অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার রড এবং দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑমাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ট্রাকচালক শাজাহানপুর উপজেলার হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা (৩৪), হেলপার নারুলী তালপট্টি এলাকার রাহাত প্রামানিক এবং কারখানার সাবেক কর্মচারী একই এলাকার সুমন ব্যাপারী (২৭)।

গত রোববার বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। গ্রেফতারের পর আসামিরা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদেরকে আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড ও রিমান্ডে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। পুলিশ সুপার জানান, ট্রাকচালক নিনজা ও হেলপার রাহাত কারখানা থেকে সব সময় অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে যেতো। এতে মালিকের ক্ষতি হচ্ছে ভেবে বিশ্বস্ত নৈশপ্রহরী আবদুল হান্নান (৪৫) ও শামসুল হক (৬৬) বাধা দিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি তারা মালিকের কাছে প্রকাশ করার কথা বলেন। ধরা পড়ার বয়ে নিনজা ও রাহাত দুই নৈশপ্রহরীকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে শহরের খোকন পার্কে নিনজা, রাহাত ও সুমন আড্ডা দিচ্ছিলো। এ সময় সুমন তাদের কাছে ১০ হাজার টাকা ধার চায়। কিন্তু ‘একটা কাজ করলে’ নিনজা তাকে দুই লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কী কাজ করতে হবে জানতে চাইলে নিনজা সুমনকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ফজরের নামাজের পর মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিতে যেতে বলে। তখন সুমন বলে, সে সাবেক কর্মচারী, নৈশপ্রহরীরা তাকে কারখানায় ঢুকতে দেবে না। এ সময় নিনজা তাকে জানায়, সকালে মাল ডেলিভারি আছে এবং ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দেবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টায় কারখানার সামনে যায় সুমন। নিনজা ও রাহাত কৌশলে সুমনসহ তিন জনকে কারখানা ভেতরে নিয়ে যায়। তারা প্রথমে নৈশপ্রহরী আবদুল হান্নানকে কৌশলে কারখানার উত্তর পাশে সেফটি ট্যাংকের কাছে নিয়ে যায়। লোহার রড দিয়ে মাথার পেছনে সজোরে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই হান্নানের মৃত্যু হয়। গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিতের পর মরদেহ সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়। এরপর নৈশপ্রহরী শামসুল হককে ঘুম থেকে ডেকে তুলে সেখানে নিয়ে একইভাবে হত্যা করে এবং মরদেহ সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়। রডও সেখানে ফেলে দেয় তারা।

হত্যা ও মরদেহ গুমের পর হান্নানের মোবাইল ফোন সুমনকে দেয় নিনজা এবং তাকে গাজীপুর চলে যেতে বলে। সেখানে গিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিহতদের পরিবার ও কারখানার মালিককে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করতে বলে। এ ছাড়া নিনজা ও রাহাত ‘বগুড়া সামলাবে’ বলে জানিয়ে দেয়। সুমন মোবাইল ফোনটি গাবতলীর একটি পুকুরে ফেলে দিয়ে শুধু সিম নিয়ে গাজীপুরে চলে যায়। সেখানে গিয়ে হান্নানের সিম ব্যবহার করে তার পরিবার ও কারখানা মালিকের কাছে ইংরেজিতে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে মুক্তিপণের নাটক সাজায়। গত শুক্রবার বিকালে কারখানার শ্রমিকরা সেফটি ট্যাংকে হান্নান ও শামসুলের মরদেহ দেখতে পান।

পরে মরদেহ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। এ ব্যাপারে হান্নানের স্ত্রী হিরা বেগম সদর থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ সুপার জানান, গত শনিবার গাজীপুর থেকে নিনজাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছে নৈশপ্রহরী হান্নানের মোবাইল ফোনসহ দুটি ফোন জব্দ করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বগুড়ার বিভিন্ন স্থান থেকে রাহাত ও নিনজাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর হত্যায় ব্যবহৃত লোহার রডটি কারখানার সেফটি ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিনজা, রাহাত ও সুমন দুই নৈশপ্রহরীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।

তারা বলে, কারখানার মালামাল বেশি নেওয়ার ঘটনা ফাঁস হওয়ার আশংকায় পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া অপর দুই জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেফতারের স্বার্থে এখই তাদের নাম প্রকাশ করা হবে না। হত্যা মামলা ডিবি পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই ওয়াদুদ আলী জানান, অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার তারেকের আদালতে আসামি রাহাত প্রামানিক ও সুমন বেপারীকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড এবং হোসাইন বিন মিল্লাত ওরফে নিনজাকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris