শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ফাঁসির আসামি পাহারায় মোতায়েন রাখতে হচ্ছে বিপুলসংখ্যক কারারক্ষী

Paris
Update : মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২

এফএনএস : দেশের কারাগারগুলোর ফাঁসির আসামি পাহারাতেই মোতায়েন রাখতে হচ্ছে বিপুলসংখ্যক কারারক্ষী। কারাগারগুলোতে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ফাঁসির আসামি রয়েছে। আর কারাগার পাহারায় কারারক্ষী আছে মাত্র ১২ হাজার। তার মধ্যে ফাঁসির আসামির পাহারাতে থাকছে প্রায় ৬ হাজার কারারক্ষী। কারণ প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একজন ফাঁসির আসামির পাহারায় ৩ জন কারারক্ষী থাকে। বর্তমানে সারাদেশের কারাগারগুলোতে ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি বন্দি রয়েছে। দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার ৯৪৪ জন হলেও সেখানে ৮৮ হাজার ৮৪ কারাবন্দী রাখা হয়েছে।

ওই কারাবন্দী পাহারার জন্য প্রায় ২৫ হাজার কারারক্ষীর প্রয়োজন হলেও বর্তমানে কারারক্ষী রয়েছে অর্ধেকেরও কম। তার মধ্যে অনেক কারারক্ষীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে তদন্ত চলমান, অনেকে সাময়িক বরখাস্ত রয়েছে, অনেকে অসুস্থ ও ছুটিতে থাকায় প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক কারারক্ষীকেই কাজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর এমন অবস্থায়ও কনডেম সেলের সামনে কারারক্ষী মোতায়েন রাখতেই হয়। কারাগার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি কারাবন্দী থাকার পাশাপাশি ফাঁসির আসামির সংখ্যা বাড়তে থাকায় কারাগারের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী প্রতিটি কনডেম সেলের সামনে একজন করে কারারক্ষী ৮ ঘণ্টা করে দায়িত্ব পালন করেন। ফলে ২৪ ঘণ্টায় একজন আসামির পেছনে ৩ জন কারারক্ষী নিয়োজিত থাকে। ওই হিসাবে ১ হাজার ৯৮৩ ফাঁসির আসামির জনের জন্য প্রতিদিন ৫ হাজার ৯৪৯ জন কারারক্ষীর পাহারায় থাকার কথা।

ফলে বর্তমানে কারাগারের ১২ হাজারের মতো রক্ষীর মধ্যে ফাঁসির আসামিদের পেছনে অর্ধেককেই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। বর্তমানে দেশের ৬৮টি কারাগারে অন্ততত ২৫ হাজার কারারক্ষী প্রয়োজন। কিন্তু রয়েছে তার অর্ধেকেরও কম। আর তার মধ্যেই কনডেম সেলে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বিপুলসংখ্যক করারক্ষী মোতায়েন রাখতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের ৬৮ কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার ৯৪৪ জন আর কারাবন্দী রাখা হয়েছে ৮৮ হাজার ৮৪। কারাগারের ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার নবনির্মিত ৫টি কারাগারকে কারাগার-১ এবং পুরনো কারাগারকে কারাগার-২ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাছাড়া নতুন কারাগার নির্মাণ এবং পুরনো কারাগার সম্প্রসারণ বা নতুন ভবন তৈরি করেও বন্দি ধারণক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে সারাদেশের কারাগারে ১ হাজার ৯৮৩ জন ফাঁসির আসামি রয়েছে।

তার মধ্যে কোনো কোনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ১৫-২০ বছরেরও বেশি সময় কনডেম সেলে রয়েছে। তাদের পেছনে সরকারেরও অনেক ব্যয় হচ্ছে। হাইকোর্টে অনেক ফাঁসির আসামির মামলায় ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। আবার অনেকে ডেথ রেফারেন্স শেষ হওয়ার পর আপীল করেছে। উচ্চ আদালতে থাকা ওসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রায়ই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে থাকে।

সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। বাংলাদেশে ৬৮ কারাগারে কনডেম সেলে আছে মোট ৮৮৮ জন বন্দী। সাধারণ বন্দী ও ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত বন্দীদের জন্য থাকা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এক নয়। অন্য বন্দীদের থাকার জায়গার সঙ্গে কনডেম সেলের বেশ পার্থক্য আছে। একজন বন্দী থাকার কনডেম সেল সাধারণত ১০ ফুট বাই ৬ ফুট আয়তনে থাকে। আবার অনেক কারাগারে সেলের মাপ কিছুটা বড় থাকে। কনডেম সেলের মধ্যে বন্দীর থাকা-খাওয়া, গোসল ও টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। একটি কনডেম সেলে সাধারণত একজন বা তিনজন বন্দী রাখা হয়।

বাংলাদেশের জেল কোড বা কারাবিধিতে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলে রাখার মতো কোন বিষয় উল্লেখ না থাকলেও তাদের আলাদা ধরনের কক্ষে রাখা হয়। একে একধরনের রেওয়াজ বলা যেতে পারে। কনডেম সেলের ভেতরে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য ছোট আকারের জানালা থাকে। সাধারণত ধারণা করা হয়, কনডেম সেলে দুজন বন্দী থাকলে তারা কারাগার থেকে গোপনে পালানোর পরিকল্পনা করতে পারেন।

তবে তিনজন থাকলে পরিকল্পনা আর গোপন থাকে না। ওই ধারণা থেকেই দুজন বন্দীকে একটি কনডেম সেলে রাখা হয় না। আর এই সেলে থাকা বন্দীদের দিনে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেলের বাইরে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। কারাবিধি অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড পাওয়ার পর একজন বন্দীকে কারাগারে সার্বক্ষণিক পাহারায় রাখা হয়।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris