শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আরডিএ’র জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ! বাগমারায় এক স্কুলের সভাপতি ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এলাকাছাড়া! বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল জাতীয় চার নেতা কখনো মৃত্যু ভয় করেননি : লিটন প্রেমিককে কুপিয়ে জখম করল প্রেমিকা! গোদাগাড়ীতে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো ২ আসামি গ্রেপ্তার এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের সরে দাঁড়াতে নির্দেশ সেনাবাহিনীতে ভুয়া নিয়োগ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তিন প্রতারক রাজশাহীতে গ্রেফতার পুঠিয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করে লাশ গুম করেছিলেন পুত্রবধূ! রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আরডিএ’র জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ! সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে ‘হস্তক্ষেপ’ নিয়ে চিন্তিত প্রার্থীরা

যুদ্ধের গতি কমলো রুশ বাহিনীর

Paris
Update : রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

এফএনএস : ইউক্রেনের মেলিটোপোল শহর দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শহরটি দখলের খবর নিশ্চিত করেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার অভিযান শুরুর পর এই প্রথম ইউক্রেনের কোনও জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে মারিয়োপোল বন্দরের কাছে অবস্থিত মাঝারি আকারের শহর মেলিটোপোল। শহরটিতে প্রায় দেড় লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিক বসবাস করে। রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শহর লক্ষ্য করে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং কামানের মাধ্যমে সমন্বিত হামলা চালাচ্ছে রুশ বাহিনী। মেলিটোপোল শহরের পতন নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করেনি ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা।

তবে তারা আগেই জানায়, রুশ বাহিনী কৃষ্ণ সাগর থেকে মারিয়োপোল বন্দর লক্ষ্য করে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে। এ ছাড়া দক্ষিণপূর্ব, উত্তরপূর্ব সামি শহর এবং পূর্বে পোলতাভা শহর লক্ষ্য করে রুশ হামলা চালানো হচ্ছে বলে জানায় ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা। কিয়েভ কর্তৃপক্ষ জানায় একটি ক্ষেপণাস্ত্র আবাসিক ভবনে আঘাত হেনেছে। আবার বিমানবন্দরের কাছে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। হতাহত নিয়ে কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল শনিবার ভোরে কিয়েভের কেন্দ্রস্থলের সরকারি ভবন থেকে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। তবে এর কারণ স্পষ্ট নয়। নিজের কার্যালয়ের বাইরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে নতুন একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘আমরা অস্ত্র সমর্পণ করবো না, আমরা আমাদের রাষ্ট্র রক্ষা করবো।’

এদিকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেইনে সর্বাত্মক যুদ্ধে নামার পর খুব দ্রুতই যুদ্ধের কঠিন অংশটুকু সামনে চলে আসায় তাদের অগ্রগতি শ্লথ হয়ে গেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেইনে হামলার প্রথম দিন তার জেনারেলরা ও সামরিক বাহিনী স্থল আক্রমণের ‘টেক্সটবুক কৌশল’ অনুসরণ করেছিল। ইউক্রেইনের আকাশ দখল নিতে এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে রাজধানী কিয়েভ অভিমুখে রওনা দেওয়া বাহিনী যেন দ্রুত পৌঁছাতে পারে তা নিশ্চিতে তারা ইউক্রেইনের সামরিক স্থাপনা ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনার ওপর ভূমি, সমুদ্র ও আকাশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল।

সীমান্ত অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকে পড়া বাহিনী অল্প সময়ের মধ্যে কিয়েভের কাছে পৌঁছে যায়, পেয়ে যায় চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রসহ অনেকগুলো কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের নিয়ন্ত্রণ; কিন্তু এরপর থেকেই রুশ বাহিনীর এগুনোর গতি ধীর হয়ে আসে বলে এক প্রতিবেদনে বলেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। পেন্টাগন কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, মাথার ওপরে থাকা যুদ্ধবিমানের সুরক্ষা নিয়ে ট্যাংক আর কামান নিয়ে অন্য দেশের সীমান্তে ঢুকে পড়া এক জিনিস আর শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং জীবন দিতে প্রস্তুত লোকজনের সমন্বয়ে গঠিত সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করা সম্পূর্ণ অন্য জিনিস। ইউক্রেইনে ঢোকার একদিনের মধ্যেই ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধের কারণে রুশ বাহিনী কিছু ‘মোমেন্টাম’ হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

রাশিয়া এখনো জনবহুল কোনো শহর দখলে নিতে পারেনি বলে শুক্রবার পেন্টাগনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। কেবল তাই নয়, রাশিয়া এখনও ইউক্রেইনের আকাশের পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণও নিতে পারেনি; এর আংশিক কারণ ইউক্রেইনীয়রা সহজে পরিবহনযোগ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করছে; অন্য কারণ হচ্ছে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইউক্রেইনের পুরনো আকাশ প্রতিরক্ষা স্থাপনায় আঘাত হেনেছে, যা একই সঙ্গে রাশিয়ার গোয়েন্দা তখ্যে ঘাটতির বিষয়টিও উন্মোচন করে দিয়েছে। ইউক্রেইনের আকাশ প্রতিরক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনার তুমুল ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু দেশটির বিমান বাহিনী এখনও আকাশে বিমান ওড়াতে পারছে এবং আকাশে রাশিয়ার আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় বাধা দিচ্ছে, বলেছেন মার্কিন ওই কর্মকর্তা।

কর্মকর্তারা আরও বলছেন, রাশিয়া তার প্রাথমিক অভিযানের সিংহভাগই চালিয়েছে দিনের বেলায়, যা তাদের রাতে লড়াইয়ের সক্ষমতা কম বলেই ধারণা দিচ্ছে।
“ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনী দৃঢ় প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে,” বলেছেন যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দাপ্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল জিম হকেনহল। পেন্টাগন কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলছেন, রাশিয়া এখন পর্যন্ত ইউক্রেইনে যে সেনা পাঠিয়েছে, তা সীমান্তে জড়ো করে রাখা দেড় লাখ থেকে এক লাখ ৯০ হাজারের মধ্যে থাকা সেনার এক তৃতীয়াংশ; মস্কো যে কোনো সময়ে আরও সেনা পাঠিয়ে চাপ বাড়াতে পারে। রাশিয়ার অভিযান এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে; ইউক্রেইনের সিংহভাগ দখলে তাদের দুই থেকে তিন সপ্তাহ লাগতে পারে, মত সামরিক কর্মকর্তাদের।

কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া দক্ষিণে মারিওপোলের কাছে আজোভ সাগর থেকে আরেকটি আক্রমণ শুরু করতে যাচ্ছে। কয়েক হাজার রুশ নৌ পদাতিক সেনা সেখানে এরইমধ্যে জড়ো হয়েছেন; শহরের দিকে অগ্রসর হওয়াই তাদের উদ্দেশ্য বলে অনুমান সামরিক কর্মকর্তাদের। সাইবার যুদ্ধ, ট্যাংক, ভারি অস্ত্রশস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ আর সেনা সংখ্যায় রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেইন খুবই দুর্বল। কিন্তু যুদ্ধকেবল কাগজে-কলমে হয় না। এখন পর্যন্ত রাশিয়া উত্তরে কিয়েভ, উত্তরপূর্বে খারকিভ ও দক্ষিণে খেরসোন- এই তিনটি শহর দখলের লক্ষ্যে চেষ্টা চালালেও ইউক্রেইনের বাহিনী এখনও সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে ইউক্রেইনের কমান্ড ও কন্ট্রোল এখনও বহাল আছে, বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ঊর্ধ্বতন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা। অন্য একজন কর্মকর্তা বলছেন, ইউক্রেইনীয়দের তীব্র প্রতিরোধের মুখে রাশিয়ার আক্রমণ ও অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

এই প্রতিরোধ যুদ্ধের কারণেই সীমান্তে জড়ো হওয়া সব সেনা ভেতরে ঢোকেনি। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, অগ্রবর্তী বাহিনী ইউক্রেইনীয়দের এই প্রতিরোধ ভেঙ্গে দিলেই আরও অনেক সেনা দ্রুত শহরগুলোতে বিশেষ করে কিয়েভে ঢুকে পড়বে। রুশ বাহিনী যেভাবে ভেবেছিল, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা সেভাবে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে কিনা তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়; তবে সেখানকার পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে, শুক্রবার এমনটাই বলেছেন পেন্টাগণের প্রধান মুখপাত্র জন কিরবি। রুশ বাহিনী যখন কিয়েভের উত্তরের এক জেলায় ঢুকছে, তখন একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্রকে শহরে আঘাত হানতে এবং অসংখ্য রকেটকে আবাসিক ভবনগুলোতে আছড়ে পড়তে দেখা গেছে।

বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যদি রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা জেলেনস্কি ও ইউক্রেইনের অন্য নেতারা কোথায় লুকিয়ে আছেন, তা বের করতে পারতো, রাশিয়ান সামরিক বাহিনী সম্ভবত তখন রকেট আর বিমান হামলার মাধ্যমে তাদেরকে বের করে আনতো। এভাবে কাজ না হলে রুশ বাহিনীকে নামতে হবে সম্মুখ সমরে, যা তুলনামূলক জটিল। সহজ অংশটুকু হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো এবং বিমানঘাঁটিগুলোতে আঘাত হানা। কিন্তু ইউক্রেইনকে পিষে দেওয়া হয়েছে বলে যে ভাষ্য, তা অকালপক্ক। মাত্র দুই দিন গেল, এটা (যুদ্ধ) অনেকদিন ধরে চলতে পারে, বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন কর্পসে ৩০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ডেভিড লাপান পেন্টাগনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও একই। বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলছেন, শহরটিতে বিচ্ছিন্ন করে দিতে এবং সম্ভবত অবরুদ্ধ করে রাখতে রাশিয়ার সেনারা কিয়েভ ঘিরে ফেলছে।

রুশ বাহিনীর কাছে জেলেনস্কির দলের কর্মকর্তাদের তালিকা আছে। সরকার উৎখাতে পুতিনের যে লক্ষ্য, সুনির্দিষ্ট বিমান হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে তা অর্জিত না হলে রুশ সেনারা তখন ওই কর্মকর্তাদের জীবিত ধরতে বা মেরে ফেলতে উদ্যত হতে পারে। কিন্তু ইউক্রেইনীয় বাহিনী ও নাগরিকরা লড়ছে। যার অর্থ হচ্ছে রাশিয়ার যত সামরিক শক্তিই থাকুক না কেন তাদের লক্ষ্য সহজে নাও অর্জিত হতে পারে। রক্তাক্ত পথে লক্ষ্য অর্জন করা লাগতে পারে, বলেছেন ওই মার্কিন কর্মকর্তা। হচ্ছেও তাই। স্নেক আইল্যান্ড রক্ষায় ১৩ ইউক্রেইনীয় সেনার প্রাণদানের ঘটনাও তাই বলছে। সেখানে রুশ যুদ্ধজাহাজ ইউক্রেইনীয় রক্ষীদের আত্মসমর্পণ করতে বললেও তারা তা না শুনে আমৃত্যু লড়াই চালিয়ে যায়।

ছোট ওই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত রুশরা জয়ী হলেও এই ঘটনা ইউক্রেইনীয়দের অনুপ্রাণিত করতে পারে, অন্যদিকে রাশিয়ায় পুতিনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে বলে মনে করছেন পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা। ইউরোপের সাবেক সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডমিরাল জেমস স্টাভরিডিস বলছেন, যুদ্ধশক্তি ও প্রযুক্তি বিবেচনায়, বিশেষ করে আকাশ ও সমুদ্রে রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেইন ভয়াবহ খর্বশক্তির; কিন্তু তারা নিজেদের দেশে লড়ছে, নিজেদের সন্তান, পরিবারকে রক্ষায়। অনুপ্রেরণা তাই তাদের পক্ষেই ভারি, এটা তাদের সাহায্য করতে পারে। বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও রাশিয়ার বাহিনী ইউক্রেইনের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা ও বিমানবন্দরগুলোতে গোলা ছুড়েছে। তারপরও তারা কিয়েভের কাছে ও খারকিভে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে বলে জানায় পেন্টাগন।

এদিন রুশ বাহিনী ইউক্রেইনের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাইট ও অন্যান্য যোগাযোগব্যবস্থা এবং বড় একটি বাঁধ যা দক্ষিণ ইউক্রেইনজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তার ওপর সাইবার হামলার তীব্রতাও বাড়ায় বলে পেন্টাগনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে এত সবের পরও জেলেনস্কি ও তার বেসামরিক সহযোগীদের সঙ্গে ইউক্রেইন বাহিনীর কমান্ডারদের যোগাযোগব্যবস্থা এখনও অক্ষুণ্ন আছে, বলেছেন তিনি। রাশিয়া কেন বড় ধরনের সাইবার হামলা চালিয়ে সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা কার্যত অচল করে দিয়ে কিয়েভে থাকা ইউক্রেইনীয় কমান্ডারদের সঙ্গে অন্যত্র থাকা কমান্ডারদের যোগাযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে না, শুক্রবার তা রহস্যময়ই হয়ে ছিল।

বড় ধরনের রুশ হামলা হতে পারে, এ ধারণ থেকে ইউক্রেইনের যোগাযোগব্যবস্থা আগে থেকে কিছু সুরক্ষাব্যবস্থা হাতে নিয়েছিল, তার কারণে এমনটা হতে পারে। আবার অনেকের বিশ্বাস, ইউক্রেইনের ইন্টারনেট ও ফোন যোগাযোগের অনেক লাইন রাশিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ায় ইউক্রেইনের বেসামরিক নেতৃত্ব ও সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে কী কথোপকথন হয় তা শুনতেও মস্কো কিছু লাইন চালু রাখতে পারে। বৃহস্পতিবার রাতেই রাশিয়ার বিশেষ বাহিনী ও বিমানসেনারা কিয়েভের উপকণ্ঠে চলে আসে; শুক্রবার ২০০-র বেশি হেলিকপ্টারের সাহায্যে চালানো এক হামলায় একটি বিমানঘাঁটি দখলে নেওয়ার পর রাশিয়ার বিমানসেনারা পশ্চিম দিক থেকে কিয়েভকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছে বলেও দাবি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

তাদের এ দাবি সত্যি হলে রাশিয়া একটি বিমান সেতু তৈরি করতে পারবে, যার সাহায্যে সে আরও শত শত সেনা এনে রাজধানী ঘিরে ফেলতে পারবে। ইউক্রেইনীয় বাহিনীর কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার হামলার শুরুর দিকে একাধিক রুশ জঙ্গিবিমান ও হেলিকপ্টার ভুপাতিত করার দাবি করেছিলেন, শুক্রবার মূলত তাদেরকে দেশের বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ রক্ষায় মনোযোগ দিতে হয়েছিল। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর পর্যন্ত রুশ বাহিনী দুই শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, যার বেশিরভাগই স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক রকেট, কিছু ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট কৃষ্ণ সাগর থেকেও ছোঁড়া হয়েছিল বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেন্টাগনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের ‘টার্গেট’ ছিল মূলত সামরিক স্থাপনা, যেমন ব্যারাক, গোলাবারুদ মজুদ কেন্দ্র ও বিমানঘাঁটিগুলো।

রাশিয়ার মূল লক্ষ্যই যেহেতু ইউক্রেইনকে নিরস্ত্রীকরণ করা, সেক্ষেত্রে এসব জায়গায় হামলা অনুমিতই ছিল। পাশাপাশি পরাজিত ইউক্রেইনীয় বাহিনীর ছাই থেকে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণের সম্ভাবনা দুর্বলের লক্ষ্যেও সামরিক স্থাপনাগুলো গুড়িয়ে দেওয়া জরুরি, বলেছেন ওই কর্মকর্তা। রাশিয়া বলছে, তারা বেসামরিক স্থাপনায় কোনো হামলা করছে না, এবং ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রাণহানি যেন কম হয় সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বেসামরিক স্থাপনায় কোনো হামলা চালানো হয়নি, শুক্রবার এমনটাই বলেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। যদিও পেন্টাগনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই দাবি উড়িয়ে বলছেন, ইউক্রেইনের কিছু বেসামরিক এলাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; তবে সেখানে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হামলা হয়েছে কিনা তা বলতে পারেননি তারা।

এই যুদ্ধ কীভাবে শেষ হবে, তার ওপরই সম্ভবত ইউক্রেইন নিয়ে পুতিনের বৃহত্তর পরিকল্পনার একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে। পুতিনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটা নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং তাদের দিয়েই বাজে কাজগুলো করানো। তবে ২০১৪ সালের পর থেকে ইউক্রেইনিয়ান জাতীয়তাবাদের যে উত্থান হয়েছে তার মাত্রাকে তিনি খাটো করে দেখেছেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়, বলেছেন ডিসেম্বরেই ইউক্রেইন যাওয়া মার্কিন আইনপ্রণেতা মাইকেল ওয়াল্টজ। সেসময় তার সঙ্গে ইউক্রেইনের শীর্ষ কমান্ডোর দেখা হয়েছিল। তিনি একটি প্রতিরোধ সংগঠন গড়ে তোলার ব্যাপারে ব্যাপক মনোযোগী ছিলেন। তবে তিনি পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিলেন কিনা, আমি নিশ্চিত নই, বলেছেন ওয়াল্টজ।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris