শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি ইউক্রেন রাজধানী ছেড়ে পালাচ্ছে বাসিন্দারা

Paris
Update : শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

এফএনএস : গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলে ‘সামরিক অভিযানের’ ঘোষণা দেন। এর কিছুক্ষণ পরই দেশটির বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কিয়েভ বলছে, রাশিয়া পূর্ণ মাত্রায় হামলা শুরু করেছে। এর মধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশজুড়ে সামরিক আইন জারি করেছেন। হামলার ঘোষণার পর থেকেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, মুখোমুখি হয়েছেন নতুন বাস্তবতার। অনেকেই আন্ডারগ্রাইন্ডে থাকা মেট্রো স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে আবার বাসে শহর ছাড়ার চেষ্টা করছেন। মানুষ শহর ছাড়ার চেষ্টা করছেন প্রাইভেট কারে করেও। খবর বিবিসির কিয়েভ শহরে বিমান হামলার সাইরেন বাজছে।

এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার জন্য ভিড় বেড়েছে মেট্রো স্টেশনে। এ সময় বহু মানুষকে ব্যাগ ও সুটকেস বহন করতে দেখা যাচ্ছে। একটি মেট্রো স্টেশনে আশ্রয় নেওয়া সন্তানকে আশ্বস্ত করছে তার বাবা। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর সেখানে শান্তির জন্য সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান। এরপর ওই দুই অঞ্চলে সংঘর্ষ তীব্র হয়েছে। এর আগে ইউক্রেনের সীমান্তে লাখেরও বেশি রুশ সেনা সমাবেশের কারণে পশ্বিমা বিশ্ব ধারণা করছিল মস্কো হয়তো কিয়েভে হামলা চালাবে। যদিও রাশিয়া এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছিল এতদিন। তবে পুতিনের ‘সামরিক অভিযানের’ ঘোষণা পশ্চিমাদের ধারণাকে সত্য হিসেবে প্রমাণ করল।

এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেনে হামলার ঘোষণা দেওয়ার পর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বেজে ওঠে জরুরি সাইরেন। এর পরের দৃশ্য এমনÑশহরজুড়ে যেন শুরু হয় গাড়ির স্রোত। একটি এক্সপ্রেসওয়েতে দেখা যায়Ñআটকা পড়েছে অসংখ্য গাড়ি। কিয়েভ ছেড়ে পালাচ্ছেন শহরের বাসিন্দারা। খবর বিবিসির। সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মস্কোর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন। এর কয়েক মিনিট পরেই ইউক্রেনে প্রথম গোলাবর্ষণ শুরু হয় এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও ভিডিওর বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, কিয়েভের বাসিন্দাদের মধ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

কেউ কেউ জানান, তাঁরা বোমা থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। ভবনের বেসমেন্টে আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকে। টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছেÑলোকজন দল বেঁধে রাস্তায় প্রার্থনা করছেন। সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক লুক হার্ডিং টুইটারে জানিয়েছেনÑকিয়েভের রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে। অনেক জায়গায় লোকজন এটিম বুথের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। লুক হার্ডিং টুইট করেছেন, ‘কিয়েভে আমাদের বেসমেন্ট এখন ছোট ছোট শিশুসহ তাদের পরিবারের লোকজনে ভরা। শিশুরা হাতে রঙিন বই ধরে রয়েছে। হৃদয়বিদারক সে দৃশ্য।’

বিমান ভূপাতিতর দাবি ইউক্রেনের : রাশিয়ার পাঁচটি বিমান ও একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার দাবি করেছে ‘দ্য জেনারেল স্টাফ অব দ্য ইউক্রেন আর্মড ফোর্স’। তবে বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শান্ত থাকুন আর ইউক্রেনীয় রক্ষাকারীদের ওপর ভরসা রাখুন।’ ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর দাবি বিচ্ছিন্নতাবাদী লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার প্লেন ও হেলিকপ্টার ভূপাতিত করা হয়। ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, প্রতিবেশি বেলারুশ থেকে ইউক্রেনে প্রবেশ করছে রুশ বাহিনী। বেলারুশের সহায়তায় রুশ বাহিনী কামানের গোলা বর্ষণ করছে বলেও জানায় বাহিনীটি। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দাবি তারা রুশ হামলা প্রতিহতের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে রাশিয়া দাবি করেছে তারা ইউক্রেনের বিমান ঘাঁটি ও তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ধ্বংস করেছে। উল্লেখ্য, যৌথ মহড়ার অংশ হিসেবে বেলারুশে মোতায়েন করা হয় রুশ সেনা। সূত্র: বিবিসি

পুতিনের ইচ্ছে : সদ্য স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় গণপ্রজাতন্ত্রী দনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে কিয়েভের আগ্রাসন থেকে রক্ষার জন্য দেশটিতে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এ ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার ইউক্রেন দখলে নেয়ার রাশিয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে দাবি করেছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেছেন, সামরিক অভিযানের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো, গত আট বছর ধরে কিয়েভ শাসকদের গণহত্যার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া লোকজনকে রক্ষা করা।

একই সঙ্গে ইউক্রেনকে অসামরিকীকরণ এবং নাৎসিবাদমুক্ত করবে মস্কো। এ ছাড়া যারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে বহুমুখী নৃশংসতা চালিয়েছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তিনি বলেন, ইউক্রেনের পুরো ভূখণ্ড দখলে নেয়ার কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই মস্কোর। রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনের ভূখণ্ডগুলো দখলের পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমরা কারও ওপর জোর করে কোনো কিছু আরোপ করতে যাচ্ছি না। কিয়েভের সৈন্যরা এখনও রাশিয়ার স্বাধীন ঘোষণা করা দনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলের বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ করছে।

ইউরোপে যুদ্ধ ফিরিয়ে আনায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের নিন্দা জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, রাশিয়ার অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং এর আধুনিকায়নের সক্ষমতা দুর্বল করার জন্য ‘ব্যাপক’ নিষেধাজ্ঞার একটি প্যাকেজ প্রস্তাব করা হবে। তিনি বলেন, এই প্যাকেজে আমরা রাশিয়ার প্রধান প্রধান প্রযুক্তি এবং বাজারে প্রবেশ ঠেকানোর মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতির কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করব।

আমরা রাশিয়ার অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং এর আধুনিকায়নের সক্ষমতাকে দুর্বল করে দেব। এছাড়াও আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়ার সম্পত্তি জব্দ এবং ইউরোপের আর্থিক বাজারে রুশ সব ব্যাংকের প্রবেশ বন্ধ করব। নিষেধাজ্ঞার প্রথম প্যাকেজের মতো আমরা অংশীদার এবং মিত্রদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট। এসব নিষেধাজ্ঞা ক্রেমলিনের স্বার্থ এবং যুদ্ধে অর্থায়নের ক্ষমতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলার জন্য সাজানো হয়েছে। সূত্র: বিবিসি


আরোও অন্যান্য খবর
Paris