মঙ্গলবার

২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে এভারগ্রীণ’র দখল করে নির্মাণাধীণ কাউন্টার উচ্ছেদ করলো আরডিএ যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার করা হলে বিশ্ব রক্ষা পেতো : প্রধানমন্ত্রী শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানির তীব্র সংকট, ভোগান্তিতে রোগী-স্বজনরা নিয়ামতপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড রাজশাহীতে নারীর মোবাইল ফোন-ব্যাগ ছিনতাই, তিন ছিনতাইকারী গ্রেফতার রাসিককে সুদৃঢ় আর্থিক ভিত্তির উপর দাঁড় করতে চাই : মেয়র কাতারের আমির আসছেন আজ, সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার দখলের সুযোগ বালিশকাণ্ডের সেই প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছে রাবির হল, অনিয়মের অভিযোগে দুদকের হানা/৩ সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী

শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন

Paris
Update : শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

এফএনএস : শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হচ্ছে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন সম্ভব হয় না। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য এজন্য সংবিধানে নির্বাচন কমিশন নামে একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন সংস্থা গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই সংস্থার কাজ হলো নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করে তোলা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সার্চ কমিশন গঠন করা হয়েছে, যদিও এই কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। নবগঠিত সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার পদে যাদের নামের প্রস্তাব এসেছে এবং আসবে, তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সার্চ কমিটি।

বিশিষ্টজনের সঙ্গে তৃতীয় বৈঠকের শুরুতেই এ কথা জানান কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। জানা যায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করা হবে। বাংলাদেশের বর্তমান বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন যখন তার মেয়াদ শেষ করছে, তখন নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, কোন দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা আদৌ সম্ভব কিনা। এই বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছে একটি নতুন আইনের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ। বিরোধীদল বিএনপিসহ কয়েকটি দল বলছে, নির্বাচন কমিশন যেভাবে বা যাদের দিয়েই গঠন করা হোক, সরকার যদি দলনিরপেক্ষ না হয়, তাতে কোন লাভ হবে না। এতে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা রক্ষিত হবে না।

এর আগে দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে দশম সংসদ গঠিত হলেও অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির বর্জন, ব্যাপক সহিংসতা এবং বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কারণে দেশটির নির্বাচনের ইতিহাসে এটি এখন পর্যন্ত বহুল বিতর্কিত নির্বাচনগুলোর একটি। সূত্র জানায়, ওই নির্বাচনে জাতীয় সংসদের তিনশো’ আসনের মধ্যে ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফলাফল নির্ধারিত হয়েছিল, ফলে বাংলাদেশের মোট ৯,১৯,৬৫,৯৭৭ ভোটারের মধ্যে কাগজে-কলমে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলো ৪,৩৯,৩৮,৯৩৮ জন। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক,

গণমাধ্যম ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতে, নির্বাচনে সত্যিকার অর্থে খুব কম ভোটারই ভোট দিয়েছিলেন। কেন এত কম ভোটার ভোট দিচ্ছে এটাও প্রশ্নবোধক। তাহলে কি নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। যেসব এলাকায় নির্বাচন হয়েছে সেখানেও বিএনপির বয়কট, কম ভোটার উপস্থিতি এবং নানা ধরণের অনিয়মের অভিযোগের কারণে নির্বাচনটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। নির্বাচনের প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিভিন্ন ভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদল বিএনপিকে এক টেবিলে আনা বা নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার উদ্যোগ নিলেও সেটি সফল হয়নি।

এজন্য বর্তমান নবগঠিত সার্চ কমিটির ওপর বিশাল দায়িত্ব অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তাঁদের শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপের ওপর নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে নিরপেক্ষ ব্যক্তি নিয়ে। সম্প্রতি এক বৈঠকে দেশের বিশিষ্টজন সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন সার্চ কমিটিকে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সৎ, সাহসী, দুর্নীতিমুক্ত ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোকদের নিয়ে যাতে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

এখন প্রশ্ন উঠছে যে, সার্চ কমিটির সদস্যবৃন্দ কতোটা নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারবেন। কেননা তাঁদের মধ্যে অনেকেই বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন উচ্চপদে আসীন ছিলেন। তাঁদের ভেতরে সরকারের প্রতি যে একটা প্রচ্ছন্ন টান থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এজন্য বিশিষ্টজনদের অনেকেই প্রস্তাবিত নামের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশের কথা বলেছেন।

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সার্চ কমিটি করুন, চারশ বা পাঁচশ লোক বের করুন, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে, আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। মানুষের কোনো বিশ্বাস নেই। এ বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে যে লোকগুলোর প্রয়োজন, তাদের অনুসন্ধান করুন। যার দ্বারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে সেই সাহস তারা রাখেন, সেই ধরনের লোক খুঁজে বের করুন।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের দিকে বিশ্বনেতৃবৃন্দের চোখ নিবদ্ধ আছে। কাজেই দেশের ভাবমূর্তিকে রক্ষা করতে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোন বিকল্প নেই। আগামী নির্বাচন হতে হবে সর্বজন-গ্রহণযোগ্য। শতভাগ গ্রহণযোগ্য হতে হবে এমন কোন কথা নেই। শতভাগ গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচন হয় না। যারা ভোট দিচ্ছে, ভোট দিতে পারছে বা ভোট দিতে পারবে, তাদের মতামতের যাতে প্রতিফলন ঘটে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এটি স্পষ্ট যে, আমাদের সংবিধানে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা আছে। এখানে বলা নেই দলভিত্তিক নির্বাচন কমিশন।

বিশ্বে তিন-চার রকমের নির্বাচন কমিশন আছে। দলভিত্তিক আছে, সরকারি নির্বাচন কমিশন আছে, এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আছে। এখানে কোনো দল যদি নাম দিয়ে থাকে, তিনি যত ভালো ব্যক্তিই হোন না কেন, তিনি অত্যন্ত সাহসী ব্যক্তি হতে পারেন, ভালো ব্যক্তি হতে পারেন; অথবা তার চাইতে সৎ ব্যক্তি কেউ নেই। তার ওপর দলের ছাপ পড়ে যাবে। যেটা গত নির্বাচন কমিশনে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, এর আগে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে যোগ করা হয়েছিল। তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখে নির্বাচন নিরপেক্ষ করার যুক্তি দেখিয়ে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়েছিল। আদালতের রায়ের পর ২০১১ সালের জুনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাশ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপ করা হয়, যার তীব্র বিরোধিতা আসে বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর দিক থেকে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris