শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আদমদীঘিতে শহীদ মিনার নেই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

Paris
Update : শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

রবিউল ইসলাম, আদমদীঘি : ভাষার মাস ফ্রেবুয়ারী। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো বগুড়ার আদমদীঘিতে মহান শহীদ দিবস ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে। এ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারী ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি ও বেসরকারীভাবে বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠন সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। মফস্বলের কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থানীয় ভাবে নিজ শহীদ মিনারে কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও আদমদীঘি উপজেলায় বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নেই।

ফলে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। আদমদীঘি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও বিভিন্ন কলেজ সূত্রে জানা গেছে, অত্র উপজেলায় সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে প্রাথমিক, উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে মিলে মাত্র ২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে। আদমদীঘি উপজেলায় ১১টি এমপিওভুক্ত কোন মাদ্রাসাতেই শহীদ মিনার নেই। এ প্রসঙ্গে বশিীকোড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোঃ আব্দুল জোব্বার ,স্বীকার কওে বলেন যে, আদমদীঘিতে কোন মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নেই।

তবে তিনি বলেন, এই বিষয়ে তাঁরা উদ্যাগ নেবেন । শহীদ মিনার করার ব্যাপারে তাঁরা আন্তরিক। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সই করা ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারীর এক দাপ্তরিক আদেশে বলা হয়েছে, দেশের যেসব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেগুলিতে অতি দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো যথাসম্ভব দ্রুত সংস্কার করার অনুরোধ করা হচ্ছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে, সেগুলিতে শিক্ষার্থীরা জুতা পায়ে বসে আছে।

বেশিরভাগ শহীদ মিনার অযন্তে,অবহেলায় পড়ে আছে। অনেক শহীদ মিনারে লতা, গাছ জন্ম নিয়েছে। কোনো শহীদ মিনারে নিরাপত্তা বেষ্টনি নেই। উপজেলার প্রধান সড়কে প্রথম শহীদ মিনারটি অযন্তে,অবহেলায় পড়ে আছে। এ বিষয়ে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রধানরা জানান, তারা সরকারী কোন নির্দেশ না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান চত্বরে শহীদ মিনার নির্মাণ করেননি। আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা জানান, প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তারা শহীদ মিনার নির্মান করতে পারেনি। এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল হামিদ, মুত্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক,

সাবেক এমপি ও ভাষা সৈনিক কছিম উদ্দীন আহম্মেদ, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি জাহেদুল ইসলাম প্রমুখ জানান, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ গঠনে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার জন্য শহীদ মিনার বাঙালি জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা। একুশের চেতনা নতুন প্রজম্নের মাঝে ছড়িয়ে দিতে শহীদ মিনারের বিকল্প নেই। স্থানীয় ভাবেই এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহন করা প্রয়োজন বলে তারাঁ অভিমত ব্যক্ত করেন। নাম না প্রকাশ শর্তে উজেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির একজন নেতা জানান, শহীদ মিনার নির্মাণ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রধানগন এবং পরিচালনা পরিষদ তেমন জোরালো ভূমিকা রাখেন না।

এ বিষয়ে আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যন আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম খান রাজু জানান “প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্টানে শহীদ মিনার থাকা উচিত। শহীদ মিনার নির্মাণ ব্যাপারে কোন বরাদ্দ নেই, তবে এবারে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মান বিষয়ে বরাদ্দ রাখবো। আশা করছি কয়েকটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার হবে।’ আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্রাবণী রায় দৈনিক ভোরের দর্পণকে বলেন, ’আমি উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের অনুরোধ করবো, যাঁরা শহীদ মিনার তৈরী করেন নি, তাঁরা অচিরেই এটি করবেন।’ এ বিষয়ে আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া এলাকার সাংসদ এ্যাড. নূরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ সিনার থাকা উচিত। এ বিষয়ে কোন বরাদ্দ নেই। তবে কেউ যদি লিখিতভাবে জানায়,তাঁদের আমার পক্ষ থেকে সহায়তা থাকবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris