শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দ্রুত সময়ের মধ্যে সাগর-রুনি হত্যার প্রতিবেদন : র‌্যাব

Paris
Update : শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

এফএনএস : র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) যখন কোনো মামলার তদন্ত করে তখন তা সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের সঙ্গে করে থাকে। সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই করছে র‌্যাব। এখন পর্যন্ত ১৬০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে র‌্যাব। সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে যেসব তথ্য উপাত্ত ও আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার তা করেছে র‌্যাব। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে পারবো। র‌্যাব সবসময় চেষ্টা করে তদন্তে যেন নিরীহ নিরপরাধ মানুষ দোষী সাব্যস্ত না হয়।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের একটাই উদ্দেশ্য সেটা হচ্ছে তদন্তে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি যেন দোষী সাব্যস্ত না হয়। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ হত্যা মামলার তদন্ত করছে র‌্যাব। আপনারা জানেন, আমরা সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তভার নিয়েছি দুই মাস পর। আমরা রিমান্ডে এনে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।

সরকার এতটাই গুরুত্ব দিয়েছে এ মামলার তথ্য-উপাত্ত প্রমাণের জন্য আলামত পরীক্ষা করতে দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে। আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে সময় লেগেছে। আমরা মাত্র কিছুদিন আগে পেয়েছি। তদন্ত চলমান। সাগর-রুনি হত্যার ১০ বছর হয়েছেÑ আর কত দেরি হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন, র‌্যাব এ মামলা তদন্ত করছে আদালতের নির্দেশে। আমরা সবদিক বিবেচনায় তদন্ত করছি।

এমন চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত করার মতো সক্ষমতা কী তবে র‌্যাবের নেই? এ প্রশ্নে কমান্ডার মঈন বলেন, র‌্যাব অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত করেছে। র‌্যাব কখনো নিজ থেকে মামলার তদন্ত করে না। আদালত দিলেই কেবল তদন্ত করে। আমরা যে আজ একটি অভিযান পরিচালনা করেছি এটারও আলামত ও আসামি থানায় সোপর্দ করা হবে। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত করছে র‌্যাব। তদন্তের ক্ষেত্রে র‌্যাব সবসময় খেলায় রাখে যাতে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হয়। বাদীপক্ষ মামলার তদন্তে র‌্যাবের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছেন এমন বক্তব্যও আসছেÑ এ প্রসঙ্গে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, আমরা এ মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে সবসময় আদালতকে অবহিত করছি।

এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো অভিযোগ বা বক্তব্য পাইনি। আদালতও আমাদের বলেননি। এখানে তদন্ত নিয়ে খারাপ লাগার কিছু নেই। বাংলাদেশের কয়টি মামলায় আলামত পরীক্ষা করে আসামিকে শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। আমরা কিন্তু সেটিই করছি। আমরা চাই এটি দ্রুত শেষ হোক এবং নিরপরাধ কেউ সাজা না পান। উল্লেখ্য, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের দশম বার্ষিকী ছিল গতকাল শুক্রবার। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন। এই হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন।

সেসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তারা বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে সাড়ে ৮৭ হাজার ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এত সময়ে মামলার বিচারই শুরু করা যায়নি। যদিও এই সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিভিন্ন সময় রাজপথে আন্দোলন করেছেন তাদের সহকর্মীরা। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরেবাংলা নগর থানার এক এসআই। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার হস্তান্তর করা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়।

পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলায় আটজনকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, মিন্টু, কামরুল হাসান, বকুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদ কারাগারে। পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান নামে দুজন হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর নয় বছর ১০ মাস গড়ালেও র‌্যাব এখনো কোনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি আদালতে। পেছাতে পেছাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ৮৫ বার পেছাতে হয়েছে।

এ কারণে মামলার বিচারকাজ কবে শুরু হবে, তা নিয়ে চিন্তিত সাগর-রুনির স্বজনরা। সাগর সারওয়ারের মা সালেহা মুনির আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, মামলাটি কোনো প্রভাবশালী মহলের ইশারায় সিন্দুকবন্দি হয়ে আছে। হয়তোবা সিন্দুকের চাবিই হারিয়ে গেছে। তাই হত্যাকাণ্ডের দশ বছরেও এর রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা। মেয়ে ও জামাইয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার না দেখতে পারার আক্ষেপ নিয়েই গত ৫ জানুয়ারি সকালে মারা যান মা নুরুন নাহার মির্জা (৬৪)।

সেই প্রসঙ্গ টেনে সালেহা মুনির বলেন, ‘রুনির মা কিছু দিন আগে মারা গেছেন। তিনি তার মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেননি। আমিও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যেতে পারবো কি না, তা নিয়ে সন্দিহান। মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, বোনের হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যেতে পারেননি আমার মা। ১০ বছর ধরে এ হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। আর কত বছর লাগবে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে আল্লাহই ভালো জানেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris