বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

দরিদ্রদের কম্বলও কেটে ফেলছে ‘দুর্নীতির ইঁদুর’

Paris
Update : রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

এফএনএস : শীতের দাপটে কাঁপছে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন জেলা। দরিদ্র মানুষ দিন অতিবাহিত করছেন চরম কষ্টের ভেতর। বিশেষকরে হিমালয় পর্বতাঞ্চল থেকে ধেয়ে আসা শৈত্যপ্রবাহ অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের উত্তর সীমানা ঘেঁষা জনপদের কয়েক লাখ মানুষসহ সারা দেশের জনজীবনকে করে তুলেছে পর্যুদস্ত, সংকুচিত ও বিপদাপন্ন। ঠান্ডার প্রচণ্ডতায় যাপিত জীবনের স্বাভাবিকতা স্থবির হয়ে যাওয়ায় দেশ জুড়ে দারিদ্র্যক্লিষ্ট, সহায়সম্বলহীন ও সুযোগবঞ্চিত প্রান্তিক মানুষের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি এখন সকরুণ। এছাড়াও শীতের ঘোরতর প্রকোপে নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধির সক্রিয় উপস্থিতি ও সংক্রমণের পারদ বরাবরের মতোই ঊর্ধ্বমুখী। তদুপরি দেশের শীতার্ত মানুষের শীতবস্ত্রের অপ্রতুলতা, রুজি-রুটির সংকট ও নিত্যনৈমিত্তিক কাজকর্মের নিশ্চলতা একটি চিরায়ত চিত্র।

শীত নিবারণের জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক না থাকায় জরাজীর্ণভাবে জীবনযাপন করছেন এসব হতদরিদ্র মানুষ। প্রচণ্ড শীতে এই হতদরিদ্রদের কিছুটা উষ্ণতা দিতে সারাদেশে কম্বলসহ অন্যান্য শীতবস্ত্র বিতরণ করছে সরকার। আর তা পেতে দীর্ঘলাইন ধরে ভিড় করছেন তারা। তবে অনেকেই সরকারি বরাদ্দের শীতবস্ত্র না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া কেউ কেউ কম্বল বিতরণে অনিয়ম ও তা নিম্নমানের বলেও অভিযোগ তুলেছেন। কেউ কেউ বলছেন, ‘প্রতিবারই শোনা যায় সরকারি কম্বল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা কখনও পাইনি।’ তবে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের দাবি, চাহিদার তুলনায় শীতবস্ত্র কম হওয়ায় কাউকে কাউকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।

জানা যায়, রংপুর জেলায় তিন লাখ হতদরিদ্র শীতার্ত পরিবারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৭১ হাজার কম্বল। শীতবস্ত্র না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে নিম্নআয়ের অনেক মানুষ। এদিকে শীতে আগুনে পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজে বেশ কয়েক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে অনেকের দাবি দরিদ্রদের কম্বল বিতরণের এই মানবিক খাতেও চলছে দুর্নীতি। সংশ্নিষ্টদের অভিযোগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা, সেই সঙ্গে তদারকির অভাবে কল্যাণকর উদ্যোগটি কাজে আসেনি। কম টাকায় কম্বল ক্রয়ের নামে হয়েছে অনিয়ম। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তর কম্বলের যে উপাদান তালিকা (স্পেসিফিকেশন) তৈরি করেছিল, তাও মানা হয়নি।

ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিধি মানেননি সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী ও ডিসি-ইউএনরা। জেলা-উপজেলায় যেসব কম্বল ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় কেনা হয়েছে; বাজার যাচাই করে দেখা যায়, সে কম্বলের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। যদিও কম্বলপ্রতি সরকারি বরাদ্দ ছিল ৭০০ টাকা। জানা যায়, শীতার্তদের জন্য কম্বল কিনতে অর্থবছরের শুরুতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু দরপত্র আহ্বানে দেরি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। পরে সব দরপত্র বাতিল করে দিয়ে ৬৪ জেলার ৪৯২টি উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহীদের (সিইও) অনুকূলে সরাসরি সে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সরকার দরিদ্রদের জন্য কম্বল ক্রয়ের বরাদ্দ দিলেও অনেক জায়গায় আজও কম্বল ক্রয় করা হয়নি, বিতরণ তো দূরের কথা। অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের ইউএনওর অনুকূলে গত বছর ১৭ নভেম্বর ১২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু এখনও কম্বল কেনা হয়নি। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, জামালপুরের মাদারগঞ্জসহ শতাধিক উপজেলায় কিছু কম্বল কেনা হলেও বিতরণ করা হয়নি। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কম্বল ক্রয়ের চাহিদায় দৈর্ঘ্য ছিল ৭ ফুট। সরবরাহ করা কম্বলগুলো পাওয়া গেছে ৬ ফুট। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় কোটেশন বিজ্ঞপ্তি দিলেও কম্বলের ওজন কত হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি। ত্রাণের কম্বল কী দিয়ে তৈরি ও কতটুকু মোটা হবে, তা কেউ উল্লেখ করেনি। অনেক জেলা-উপজেলায় বিজ্ঞপ্তিই দেওয়া হয়নি।

দরিদ্রদের জন্য যে মানের, যে দামের কম্বল সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ করা হয়েছি সে দামের কিংবা মানের কম্বল ক্রয় করা হয়নি বলে জানা যায়। সূত্র জানায়, ত্রাণ অধিদপ্তর কম্বলের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ওজন, পুরুত্ব, উপাদান, রংসহ ৯টি শর্ত দিয়েছিল। কম্বলের ওজন ধরা হয়েছিল ১৫০০ গ্রাম। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে এর একটি শর্তও না মেনে কেনা হয়েছে সর্বনিম্নমানের কম্বল। ছয়টি জেলার ২৫টি উপজেলার মধ্যে জানা যায়, ৭ উপজেলায় কম্বল বিতরণ করা হয়নি। যেসব উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে, তারা সঠিক পরিসংখ্যানও নেই।

যে কম্বলগুলো বিতরণ করা হচ্ছে তা খুবই নিম্নমানের। অথচ সরকার অন্তত পাঁচ বছর টেকসই হয় এমন কম্বল দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ করেছে। এ বিষয়ে সংশ্নিষ্টরা জানান, বিধি অনুযায়ী কেউ একবার কম্বল পেলে পরের পাঁচ বছরে তার আর পাওয়ার সুযোগ নেই। অথচ বিতরণ করা কম্বলগুলো একবার ধোয়ার পরই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে একদিকে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার কম্বল বিতরণ করছে, অন্যদিকে দরিদ্র মানুষ শীতে কষ্টে দিন পার করছে।

এই চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের পরও জীর্ণ কম্বলগুলো অনেক দরিদ্র শীতার্তের হাতে পৌছাচ্ছে না। এর জন্য চরম সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। জানা যায়, কম্বল ক্রয় করে জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শক্রমে বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। কিন্তু বেশিরভাগ ডিসি-ইউএনও এ নির্দেশনা মানেননি। ঢাকা জেলার ডিসি শীতবস্ত্র বিতরণের ছবি ফেসবুকে প্রচার করেছেন। অনুষ্ঠানে তিনি নিজেই প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন এডিসিরা। কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের সঙ্গে ছিলেন না। বেশিরভাগ জেলায় এমন দৃশ্য দেখা যায়। এজন্য একাধিক এমপি ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর কাছে অভিযোগও করেছেন। এরপর ডিসি-ইউএনওদের তাগাদাপত্রও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris