শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃষ্টিপাত কমবে আজ থেকে নামবে রাতের তাপমাত্রা

Paris
Update : শনিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

এফএনএস : পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে উত্তরের জনপদ মাঘের বৃষ্টিতে কাবু হয়ে পড়ে। রাজধানীতেও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির জানিয়েছেন, হঠাৎ করে ওয়েস্টার্ন ডিস্টাবেঞ্জের (পশ্চিমা লঘুচাপ) কারণে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেড়ে যায়। উত্তরাঞ্চলে মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হয়েছে।

রাজধানীতেও বেড়েছে বৃষ্টিপাত। তবে আজ শনিবার থেকে এই প্রবণতা কমে যাবে। সূর্যকিরণের উজ্জ্বলতাও বাড়বে। শনিবার থেকে রাতের তাপমাত্রা ফের কমতে শুরু করবে। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় দিনাজপুর, ৩০ দশমিক ৩ মিলিমিটার। রংপুরে ২৭, বগুড়ায় ২২, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ২০, রাজশাহীতে ২০ মিলিমিটার বর্ষণ রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া ঈশ্বরদীতে ১৪ মিলিমিটার, টাঙ্গাইলে ৭ মিলিমিটার ও খুলনায় ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তরিফুল নেওয়াজ বলেন, কোথাও কোথাও বজ্রপাতও হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকাসহ দেশে মধ্যাঞ্চলে বেশি বজ্রপাত হচ্ছে।

শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কিছুকিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। ঢাকায় এ সময় জুড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার। গতকাল শুক্রবার ভোররাতে দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়, ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মোংলায়, ২৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় রেকর্ড করা হয়েছে ১৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টিপাত কমে গেলে তাপমাত্রা ফের ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে।

বৃষ্টিতে জবুথবু উত্তর জনপদ: এদিকে মাঘের শীতের তীব্রতার মধ্যে উত্তরের জনপদজুড়ে বৃষ্টির হানায় ভোগান্তি বেড়ে যায় মানুষের। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে বৃষ্টির কারণে শ্রমজীবী মানুষ কর্মস্থলে যেতে পারেনি; ছুটির দিনের কারণে রাস্তাঘাটও ছিল প্রায় ফাঁকা। বগুড়া প্রতিনিধি জানান, জেলায় ভোররাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই বেড়ে যায়। বগুড়া আবহাওয়া কার্যালয়ের ওয়্যারলেস অপারেটর রবিউল ইসলাম গতকাল শুক্রবার সকালে বলেন, রাত সোয়া ৩টা থেকে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

শীতের মৌসুমে এটিই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত উল্লেখ করেন রবিউল বলেন, বৃষ্টির কারণে শীতের তীব্রতা কিছুটা বেড়েছে। সকাল ৯টায় বগুড়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টির প্রভাবে দুপুর ১২টার দিকে তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শনিবার বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাবে বলে জানান রবিউল। এদিকে বগুড়া শহরে বৃষ্টির কারণে অনেক জায়গায় পানি জমে যেতে দেখা গেছে। শীত, বৃষ্টি আর হিমেল বাতাসে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না। শহরের রাস্তাগুলো ছিল প্রায় ফাঁকা। ইরি-বোরো রোপণের ভরা মৌসুম হলেও মাঠে দেখা যায়নি কৃষকদের।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর ঠাণ্ডায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে সড়ক ও মাঠে-ময়দানে পানি জমে যায়। থেমে থেমে মেঘের গর্জন যেন বর্ষার আমেজ সৃষ্টি করে। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর এদিন কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এদিকে বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষ কম চলাচল করছিল। কাজে বের হতে না পেয়ে বিপাকে পড়েন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের লোকজন।

কুড়িগ্রামের বেলগাছা ইউনিয়নের নির্মাণ শ্রমিক ঠিকাদার আকলাস হোসেন বলন, বৃষ্টির কারণে শ্রমিকরা কাজে আসতে না পারে নাই। এখন আমার পাঁচটি বিল্ডিংয়ের কাজ বন্ধ রয়েছে। রাজারহাটের ছিনাই ইউনিয়নের কৃষক হাসেম আলী বলেন, এখন বোরো রোপনের ভরা মৌসুম। এতদিন শীত উপেক্ষা করে কাজে বের হয়েছিলাম। আজ বৃষ্টির কারণে যেতে পারেনি। চর কুড়িগ্রাম বস্তির আবেদ আলী ও মনছার জানান, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় মিশুক-রিকশা নেইা ফলে চলাচললে ভোগান্তি হচ্ছে। এদিকে বৃষ্টির কারণে আলু ক্ষেতে ছত্রাক আক্রমণের শঙ্কা দেখা গিয়েছে সদর উপজেলার শিবরাম গ্রামের কৃষক আবদুল মজিদ জানান।

তিনি বলেন, গত কয়েকদিনের টানা শৈত্যপ্রবাহের কারণে আলু ক্ষেতে মড়ক দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির কারণে মড়ক আর বাড়ে কিনা তাই নিয়ে চিন্তা করছি। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শামসুদ্দিন মিয়া জানালেন, বৃষ্টি ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় আলুতে ‘লেট ব্লাইট’ ভাইরাস আক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এ পরিস্থিতিতে আলু চাষিদের বৈরী আবহাওয়া সম্পর্কে সজাগ থাকতে এবং ওষুধ ছিটিয়ে ছত্রাকের আক্রমণ ঠেকানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতা কমলেও হঠাৎ করেই ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টিতে জেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। দিনাজপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, গতকাল শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চার ঘণ্টায় ৩০ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটি শীত মৌসুমে দিনাজপুরে চার ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড বলেও জানান তোফাজ্জল। তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়া কর্মকর্তা আরও বলেন, বৃষ্টি হলেও একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা প্রায় তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ফলে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমেছে। গতকাল শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গতকাল শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে মেঘের গর্জনের সঙ্গে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় মানুষজন তেমন ঘর থেকে হয়নি। সকাল ৯টা পর্যন্ত শহরের রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য ছিল।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris